× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

প্রসঙ্গ : রাজনীতিতে বিরোধীদল

গোলাম কুদ্দুছ

১২ জানুয়ারি ২০২২, ০৪:৫৪ এএম

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধীদলের ভূমিকা, অস্তিত্ব, কার্যকারণ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। পত্র-পত্রিকা, টক-শো ও সোশ্যাল মিডিয়ায়ও আলোচনার শেষ নেই। অনেকে আবার শক্ত বিরোধীদল না থাকার জন্য পরোক্ষভাবে সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন। এসব আলোচনায় একপাক্ষিকতা, যুক্তি, কখনো কখনো আবেগও কাজ করছে। আমরা একটু পর্যালোচনা করে দেখতে চাই, আসলে প্রকৃত অবস্থাটা কী?

এ কথা আমরা সকলেই মানি, বিরোধীদল হলো গণতন্ত্রের শক্তি। অনেক সময় বিরোধীদলকে ‘ছায়া সরকার’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। শুধু আমাদের দেশ নয়, পৃথিবীর সকল গণতান্ত্রিক দেশেই এই ধারণা বিদ্যমান। যে দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল যত শক্তিশালী সেই দেশে গণতন্ত্র তত মজবুত। দায়িত্বশীল বিরোধীদল সরকারের ভালো কাজের প্রশংসার পাশাপাশি জনস্বার্থ-বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সংসদে এবং বাইরে জনমত গড়ে তোলে। প্রয়োজনে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মুখে বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগও করতে হয়েছে। তবে এসকল আন্দোলন অবশ্যই জনগণের স্বার্থে, জনগণকে নিয়ে জনগণের দ্বারাই পরিচালিত হওয়া বাঞ্চনীয়। সহিংস সশস্ত্র দাঙ্গাযুক্ত আন্দোলন কখনোই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়- এ বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। গণতন্ত্র হলো জনস্বার্থে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে কষ্টে-বিপদে ফেলে পৃথিবীর কোন দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চূড়ান্ত বিচারে সফল হয়নি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ থেকে কখনো মহাজোট, আবার কখনো ১৪ দলীয় জোটের সরকার ক্ষমতাসীন রয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশে অনেকা অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে। গ্রেফতারকৃত দ-প্রাপ্তদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। পলাতকদের দেশে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। একাত্তরের মানবতা-বিরোধী যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত শীর্ষ আসামিদের বিচারকার্য সম্পন্ন করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে এবং এই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদ- এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার জন্য বিচারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনপ্রবাসী তারেক রহমানসহ অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। বিএনপি-জামাতের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন ও উত্থান এবং জঙ্গি-তৎপরতা সরকার সফলভাবে মোকাবেলা করেছে। করোনা মোকাবিলায় সমন্বয়হীনতা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও সরকার পরিস্থিতি প্রাজ্ঞতার সাথেই মোকাবেলা করেছে। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, গড় আয়, গড় আয়ু সবই অতীত রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশব্যাপী অবকাঠামোর উন্নয়ন, শিল্প, কৃষি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি, নারী উন্নয়ন, যোগাযোগ-ব্যবস্থা প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছেÑ এ সত্য অস্বীকার সুবিবেচনাপ্রসূত এবং গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়।

রাষ্ট্রের উন্নয়ন এবং জনকল্যাণে সরকারের ব্যাপক সফলতা সত্ত্বেও ব্যর্থতার দিক নেইÑ তা নয়। উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে যা অনেকক্ষেত্রেই তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে যথাযথ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত নয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, ঋণদান সংস্থার হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারীদের দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। কখনো কখনো উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি সরকারের নমনীয় আচরণ প্রগতিশীল চিন্তার মানুষদের শংকিত করে তুলেছে। নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলাকারীদের সকল ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। সর্বোপরি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে নানাবিধ সংকট জনমনে হতাশা তৈরি করেছে। সাংবিধানিক পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসমূহ সম্পন্ন হলেও জনসম্পৃক্ততার অভাব প্রত্যক্ষ করা যায়। নির্বাচন কমিশন এখনো বিরোধীদলকে আস্থায় আনতে পারেনি। নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট যেকোন প্রশ্নকেই আমাদের সকলকে যৌক্তিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। সবচাইতে বড় কথা হলো, রাজনীতিকে রাজনীতিকদের হাতে তুলে দিতে হবে। আদর্শহীন, সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিদের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিতাড়ন করা গণতন্ত্র এবং জনস্বার্থেই প্রয়োজন।

পৃথিবীর সকল গণতান্ত্রিক দেশেই সরকার একশত ভাগ সফল এ দাবি কেউ করে না। সাফল্য-ব্যর্থতা মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। তবে জনকল্যাণ সাধনই যে সরকারের মূল উদ্দেশ্যÑ এ কথা কেউ অস্বীকার করছে না।
আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর দল আওয়ামী লীগ ও রাজনৈতিক মিত্ররা। জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করলেও সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থনের বিবেচনায় মানুষ বিএনপিকেই প্রধান বিরোধীদল মনে করে। সরকারের বাইরে বিরোধীদল হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্যজোট সক্রিয় রয়েছে। গত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আমরা দেখেছি, ২০ দলীয় জোট, গণফোরাম, এলডিপি, জাসদ (রব), নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ‘ঐক্যজোট’। ওই ফ্রন্টের আহ্বায়ক ছিলেন ড. কামাল হোসেন। বাহ্যিকভাবে ড. কামাল আহ্বায়ক হলেও ওই জোটের মূল চাবিকাঠি ছিল তারেক জিয়ার হাতেÑ এ সত্য অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। নির্বাচনের পূর্বে ঐক্যফ্রন্ট ড. কামালের নেতৃত্বে সরকারের সাথে বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে নির্বাচনের স্ব”ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং তাদের দু-একজন সদস্য পার্লামেন্ট থেকেও পদত্যাগ করে।

গত ১২ বছর বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্যজোট এবং পরবর্তীতে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে প্রধান বিরোধীদলসমূহ সরকার-বিরোধী নানা কর্মসূচি প্রদান করে। বিক্ষোভ, ধর্মঘট, হরতাল, অবরোধসহ লাগাতার কর্মসূচি প্রদান করে তারা সরকারকে সংকটে ফেলতে চেয়েছে। ওই সময়ে নির্বাচন বয়কট এবং প্রতিরোধের কর্মসূচি দিয়ে ব্যাপক সহিংসতা করা হয়। এতে ভোটার উপস্থিতি কম হলেও নির্বাচনকে বন্ধ করা যায়নি। বিএনপি-জামাত জোট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের জন্য দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ সময় ব্যাপক অগ্নি-সংযোগ, যানবাহনে পেট্রলবোমা হামলা, রেললাইন উপড়ে ফেলা, থানা আক্রমণসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলা চালানো হয়। এসব কর্মসূচিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, বাস-ট্রাকের ড্রাইভার, সাধারণ যাত্রী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য ও সরকারি দলের কর্মী এবং নিরীহ সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়। নানা ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে এনে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং হেফাজতে ইসলামকে সামনে আনা হয়। হেফাজতে ইসলামের কতিপয় উগ্র নেতার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য নির্মাণ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমন ঠেকাতে নজিরবিহীন সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটানো হয়। আন্দোলনের নামে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস এবং এ ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি কোন শুভবোধসম্পন্ন মানুষ গ্রহণ করেনি।

এখন বিবেচ্য বিষয় হলো বিরোধীদলসমূহ গত ১২ বছর আন্দোলনের এতসব কর্মসূচি ঘোষণা করার পরও কেন সফল হয়নি। তাদের অনেক নেতা-কর্মী সহিংসতার সত্য-মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে, তাতেও সংগঠনের বিপুল-সংখ্যক নেতাকর্মী মাঠে নামেনি কেন? আমার বিবেচনায় বিরোধীদলসমূহের আন্দোলন সফল না হওয়ার মূল কারণ জনসম্পৃক্ততার অভাব। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোন আন্দোলনই সফল হয় না। এখন প্রশ্ন হলো বর্তমান বিরোধীদলসমূহের আন্দোলনের ডাকে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা কেন নেই? সরাসরি বলতে গেলে আস্থা এবং বিশ্বস্ততার অভাব। যারা আজ বিরোধী দলে, সেই বিএনপি-জামাতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, এলডিপি, বিকল্পধারা দীর্ঘসময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। তাদের শাসনামলে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, নারীধর্ষণ, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ঘুষ-দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান, হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তির আস্ফালন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের পুনর্বাসনসহ সকল অনৈতিক ও গণবিরোধী কার্যক্রম মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। বন্দুকের জোরে ক্ষমতাদখল, হ্যাঁ-না ভোট অনুষ্ঠান, ভোটারবিহীন নির্বাচন, মিডিয়া ক্যু এগুলো ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটিকে কলুষিত করে এইসমস্ত বিরোধীদল।

নিজেদের দলীয় লোককে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের লক্ষ্যে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে দেয়া, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনী অফিসার পদে দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়োগদান, নির্বাচন কমিশনে দলীয় আজ্ঞাবহ ব্যক্তিদের পদায়ন, পরিকল্পিতভাবে এক কোটি চল্লিশ লক্ষ ভূয়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিকরণ করা হয়েছিল। সবশেষ বিএনপির মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সকল বিধান লঙ্ঘন করে একইসাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করে এই পদ্ধতির মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দেন। এখন বিএনপি-জামাত জোট নিরপেক্ষ নির্বাচন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে যত ভালো কথাই বলুক না কেন মানুষ তাতে কর্ণপাত করবে না, এটাই স্বাভাবিক। কারণ মানুষ তাদের প্রকৃত চেহারা দেখেছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লুটপাটে বিএনপি হলো চ্যম্পিয়ন, ওদের কথায় মানুষ কেন সাড়া দেবে? ২০০১-এর নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং প্রগতিশীল সামাজিক শক্তির উপর যে দমন-পীড়ন চালিয়েছিল মানুষ কি তা ভুলে গেছে? একুশে আগস্টের পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলার দায় থেকে বিএনপি-জামাত সরকার কীভাবে মুক্ত হবে?
সবকিছু বিশ্লেষণ করলে এ সত্যই স্পষ্ট হয় যে, বর্তমানের প্রধান বিরোধীদলসমূহের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। আর এসকল দলের নেতৃত্ব নিয়েও মানুষ এমনকি দলের নেতা-কর্মীদেরও মাঝে মাঝে বিষোদগার করতে দেখা যায়। মানুষ তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে, বর্তমান বিরোধীদলের শাসনামলের চাইতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন শাসনামলে তারা তুলনামূলকভাবে ভালো আছেন। সরকারের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও এ কথা জনগণ বিশ্বাস করে যে, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন মানুষের কাছে দৃশ্যমান। এমনি পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামাত জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের ডাকে মানুষ সাড়া দেবে না এটাই স্বাভাবিক। জনগণকে আস্থায় আনতে না পারলে কোন রাজনৈতিক দলই আন্দোলন বা নির্বাচনে সফল হবে এটা প্রত্যাশা করা যায় না।

উপরোক্ত রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও আরো কিছু বাম রাজনৈতিক দল সক্রিয় রয়েছে। নিজেদের দলীয় কর্মসূচি সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার চাইতেও সরকার এবং অপরাপর দলের সমালোচনা নিয়েই তারা অধিক ব্যস্ত। তাদের রাজনৈতিক কৌশল ও কর্মসূচি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের প্রত্যাশা এবং বাস্তবতার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ না হওয়ায় সংগঠনগুলোর বিকাশ সেভাবে ঘটছে না এবং মানুষের কাছে তাদের অবস্থান দৃঢ়তর হচ্ছে না অথচ প্রকৃত বামশক্তি বিকশিত হলে দেশের সামগ্রিক রাজনীতির জন্য তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারত।

সবশেষে আমরা এ কথা বলতেই পারি যে, শক্তিশালী বিরোধীদল গণতন্ত্রের জন্যই প্রয়োজন। সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে বিরোধীদলকে ‘ওয়াচডগ’-এর ভূমিকা পালন করতে হবে। তার আগে প্রয়োজন বিরোধীদলকে জনগণের আস্থা অর্জন করা। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি আস্থাশীল হয়ে কীভাবে জনগণের সমর্থন আদায় করবে তা বিরোধীদলকেই ঠিক করতে হবে। সরকার বা সরকারি দলের দায়িত্ব নয় শক্তিশালী বিরোধীদল প্রতিষ্ঠা করা। বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নয়, জনগণের মধ্য থেকে জনগণের প্রয়োজনেই জনগণের দ্বারাই এটি গড়ে ওঠে এবং তা বাঞ্ছনীয়।

লেখক : গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ।  


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.