× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কপোতাক্ষের কিনারে ময়না বিবির কান্না

পাইকগাছা প্রতিনিধি

১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৫:৩২ এএম । আপডেটঃ ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৫:৩৩ এএম

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি কপোতাক্ষের কিনারের ঝুপসি ঘরে কাঁদছেন ময়না বিবি। উপজেলার কপিলমুনি বাইপাস সড়কের পাশে কপোতাক্ষ নদের একেবারেই কিনারে ছোট্ট একটা ঝুঁপসি ঘর। ঘরটির উপরে একপ্রস্থর পলিথিনের আচ্ছাদন, চট আর পুরাতন কাপড়ের বেড়ার মধ্যে এক অসহায় নারীর নিবাস। নাম তার পাগলী। আসল নাম ময়না বিবি হলেও কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি হওয়ায় ময়না বিবি পাগলী নামে পরিচিত। ৫০ বছর বয়সের এই পাগলী অনাহার আর রোগে শোকে এখন কাহিল।

শীর্ণকায় দেহটি মাঝে মাঝে দিনভর পড়ে থাকে ওই ঝুঁপসি ঘরে। ঘরের ভিতরে ছোট্ট একটা ভাঙ্গাচুরা অসমতল চৌকিখাট। খাটের দুটি পায়া না থাকায় ইট দিয়ে ঠেকা দেয়া হয়েছে খাটটি। ঘরে মুচড়ানো হাড়িপাতিল আর পটিমারা ময়লা পুরানো দুটি কাঁথা। এ গুলোই পাগলীর সম্বল।কিশোরী বয়সে উপজেলার আঘড়ঘাটা কার্ত্তিকের মোড়ের পাশে করিম গাজীর সাথে বিয়ে হয় পাগলীর। বিয়ের বছর দুয়েক পরে একটি মেয়ে হয় তার।

মেয়ের ৭-৮ বছর বয়স হলে স্বামী কর্তৃক পরিত্যাক্তা হয় সে। মেয়েকে নিয়ে পাগলী কপিলমুনি শহরের সাবেক লঞ্চঘাটের পাশে রাস্তার ধারে ঝুঁপসি বানিয়ে মাথা গোঁজে মা মেয়ে। বাজারের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করা আর চায়ের দোকানে পানি দিয়ে যা আয় হতো তাই দিয়ে অতিকষ্টে জীবন চলতো তাদের। যেদিন এসব কাজ হতোনা সেদিন বাজারে ভিক্ষা করতো পাগলী। ৫ বছর আগে ১৬ বছর বয়সে পাগলীর একমাত্র মেয়েটি রোগাক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় ওই ঝুঁপসি ঘরেই। সেই থেকে পাগলী আরও অসহায় হয়ে পড়ে।

কন্যা বিয়োগে পাগলী শোকে দুঃখে মুহমান। নতুন স্থাপনা তৈরি হবে বলে পাগলীকে ওই যায়গা থেকে সম্প্রতি তাড়িয়ে দেয়া হয়। পাগলী আশ্রয় নেয় কপিলমুনির আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের পিছনে কপোতাক্ষ নদের একেবারে কিনারে ভেজা স্যাঁতসিতে জায়গায়। পাগলীর অসহায়ত্বের কথা শুনে সেখানে গেলে শীত নিবারণের জন্য ঝুঁপসির সামনে পাগলীকে আগুন পোয়াতেদেখা যায়। তার অসহায়ত্বের কথা জানতে চাইলে কপোলভেজা চোখের নোনাজল বার বার বার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতে থাকে পাগলী। পাগলী জানায়, নদীর ধারে শীতের তিব্রতায় রাতে ঘুমাতে পারিনা। অনেকের কাছে একটি কম্বল চেয়েছি কিন্তু ভাগ্যে জোটেনি। পাইনি কোন সরকারী ত্রান সহায়তা।

মাথা গোঁজার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের আশায় দ্বারে দ্বারে রাস্তায় রাস্তায় হেটেছি, অনেক কেঁদেছি কিন্তু কেউ আমার কান্না দেখেনি,কষ্ট বোঝেনি তাই নিরুপায় হয়ে শেষমেষ এখানেই আশ্রয় নিয়েছি। পাগলীর এ কষ্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী হালিম হাওলাদার,সেলীম মির,নহিদুল ঢালী ও সাইদ গাজী সহ আরও অনেকে জানান, পাগলীর মত একজন ভূমিহীন গৃহহীন অসহায় নারী ঘর না পাওয়ায় এখানে মানবতা চরম ভাবে ভুলন্ঠিত হয়েছে। তাদের আশংকা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কপোতাক্ষির স্ফীত পানি বা জলোচ্ছ্বাসে পাগলী সহ তার ঝুঁপসি ঘর হয়তো একদিন ভেসে যেয়ে কপোতাক্ষির বক্ষে তার সলীল সমাধী হতে পারে।

পাগলীর এই করুন অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে তার পুন:র্বাসনের জন্য এলাকাবাসি স্থানীয় এমপি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.