× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মায়ের স্থান হয়নি ছেলের ফ্ল্যাটে, দিন কাটে না-খেয়ে

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:০৯ এএম । আপডেটঃ ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৩০ এএম

একমাত্র ছেলে সুহাদ হোসেন খান (৩৫) হাউজিং ইলেকট্রিক ঠিকাদার। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাকেন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় ফ্ল্যাট বাসায়। অন্ধ ও পঙ্গু মা মোরশেদা খানম পিংকুলের (৬০) খোঁজ নেন না আট বছর। রাক্ষুসী যমুনায় বাড়িঘর হারিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের চর জাজুরিয়া গ্রামের মৃত মুনা খানের বাড়ির আঙিনায় খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টানিয়ে থাকেন। কেউ খেতে দিলে এক বেলা খেতে পান, না দিলে রাত কাটে অনাহারে। এভাবেই চলছে মোরশেদার জীবন।

শীতের প্রকোপ বেড়ে গেলে তার কষ্টও বেড়ে যায়। এতে তিনি চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে কয়েকদিন আগে এলাকাবাসীর দানের টাকায় তাকে ছয় টিনের একটি ছাপড়া তুলে দেওয়া হয়। সেটার তিন দিকে বেড়া থাকলেও সামনের অংশে বেড়া ও দরজা নেই। ফলে সেখান দিয়ে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে। তাই পলিথিন দিয়ে বাতাস ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া চারদিকের বড় বড় ফাঁক দিয়ে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢোকায় সেখানে বাস করা দুরুহ হলেও এখানেই খেয়ে না-খেয়ে রাতদিন পড়ে থাকেন তিনি। মুনা খানের অভাবী স্ত্রী লাইলী খানম (৬০) নিজেই দুবেলা পেটভোড়ে খেতে পান না। তারপরেও তিনি অসহায় মোরশেদার দেখভাল করেন। তার দিনমজুর ছেলের সংসারে পাঁচ সদস্য। তাদেরই ঠিকমতো দিনপাত চলে না। তার ওপরে এই অন্ধ ও পঙ্গু বৃদ্ধার বোঝা তার কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে হতদরিদ্র লাইলী খানম, রেহানা বানু ও মাসুদ খান বলেন, টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মামুননগর ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের আওলাদ হোসেনের সাথে চৌহালীর খান পরিবারের মোরশেদা খানম পিংকুলের বিয়ে হয়। একসময়ের খরস্রোতা যমুনার শাখা নদীর ভাঙনে বাড়িঘর জমিজমা বিলিন হয়ে গেলে চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চর জাজুরিয়া গ্রামের এক আত্নীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর স্বামী ও বড় ছেলের মৃত্যুতে তিনি খুবই অসহায় হয়ে পড়েন। নিজে খেয়ে না-খেয়ে ও আনসার ভিডিপির চাকরি ও বিভিন্ন এনজিওর কাজ করে ছোট ছেলে সুহাদ হোসেন খানকে মানুষ করেন। সুহাদ লেখাপড়া তেমন না করে ২৫ বছর বয়সে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে হাউজিং কোম্পানিতে ইলেকট্রিক কাজ করে বেশ টাকা পয়সার মালিক হন। এরপর নিজেই হাউজিং ইলেকট্রিক ঠিকাদারের কাজ করেন। বিয়ে করে এখন ফার্মগেট এলাকায় ফ্ল্যাট বাসায় স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ আট বছর ধরে মায়ের কোনো খোজ ও ভরণ-পোষণ করেন না। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো কাজ হয়নি। তিনি কোনো পরিচয় ও বাসার ঠিকানা দেন না। ফলে স্বামী-সন্তানের শোকে কাঁদতে কাঁদতে মোরশেদা খানম অন্ধ ও অসুস্থ হয়ে গেছেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা না করতে পেরে তার দুই পা পঙ্গু হয়ে গেছে। তিনি আর হাঁটতে ও দাঁড়াতে পারেন না। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে দিন কাটে। সেবা-যত্ন করার মতো কেউ নেই। ফলে অযত্ন, অবহেলা আর বিনা চিকিৎসায় দিন দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।

এ বিষয়ে খাসকাউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হযরত আলী মাস্টার বলেন, আমি একটানা ২৭ বছর ও পরে তিন বছর ভারপ্রাপ্ত চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। সে সময়ে সহযোদ্ধা চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ছিলেন মোরশেদা খানম পিংকুল। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে টানা ১০ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি চৌহালী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগেরও নেতৃত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারি মোরশেদা আওয়ামী লীগের সকল আন্দোলন-সংগ্রামের সম্মুখসারির সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন চৌহালী উপজেলা আনসার ও ভিডিপির দলপতি ছিলেন। শত শত অসহায় অনাহারী নারীদের তিনি সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তাদের মুখে আহার তুলে দিতে তিনি অফিসে অফিসে ঘুরে বিধবা ভাতা কার্ড, বয়স্ক ভাতার কার্ড, স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতার কার্ড, ভিজিডি ও ভিজিপি কার্ড করে দিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি রিলিফ ও ত্রাণ পাইয়ে দিয়েছেন বহু অসহায় মানুষকে। গর্ভবতী মা ও দুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। আজ তার এ অসহায় অবস্থায় বিত্তবান একমাত্র ছেলে তার পাশে নেই। তিনি প্রায় আট বছর ধরে তার মায়ের কোনো খোঁজ নেন না। এখন তার জীবন-জীবিকা চালে অন্যের দয়ায়। এটা খুবই কষ্টদায়ক।

চৌহালী আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আনিছুর রহমান বলেন, মোরশেদার পক্ষ থেকে কেউ আবেদন করলে ঘরের জন্য টিন ও বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.