× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ইউক্রেন নিয়ে রুশ-মার্কিন দ্বন্দ্ব পরিস্থিতি যাচ্ছে কোথায়?

সিরাজুল ইসলাম

১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৩৯ এএম

ইউক্রেন ইস্যুতে আমেরিকা ও ন্যাটো জোটের সদস্যদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে খারাপ। দু’পক্ষ পরস্পরকে যুদ্ধেরও হুমকি দিচ্ছে। ইউক্রেন ইস্যুতে দু’পক্ষের মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। বৈঠক হয়েছে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে, বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এবং অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়; কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো বৈঠক থেকে ইতিবাচক ফলাফল তো আসেইনি, বরং বৈঠক শেষে দু’পক্ষ সংবাদ সম্মেলনে যেসব কথাবার্তা বলেছে তাকেও স্বাভাবিক বলার সুযোগ নেই। সর্বশেষ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, ‘মস্কোর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, আমাদের দাবির বিষয়ে পশ্চিমা জবাবের জন্য আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বসে থাকব না। ন্যাটো জোটের পূর্বমুখী বিস্তার বন্ধ করতে হবে, অর্থাৎ ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটের সদস্য করা যাবে না।’


অন্যদিকে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে তাতে পরিষ্কার যে, তারা রাশিয়ার দাবি মানতে মোটেই প্রস্তুত নয়। বরং পশ্চিমা কোনো কোনো কর্মকর্তা সরাসরি বলেছেন, ইউরোপে যুদ্ধের দামামা বাজার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ন্যাটো জোটের মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ইউরোপে সত্যিকার অর্থেই যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে। মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান বলেছেন, ‘সব ধরনের ঘটনার জন্য আমেরিকা ও ন্যাটো  জোট প্রস্তুত নিচ্ছে।’ এসব কথাবার্তা থেকে পরিষ্কার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, ইউক্রেন ইস্যু আর স্বাভাবিক কোনো পর্যায়ে নেই, এ নিয়ে রাশিয়া ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট কঠিন অবস্থান গ্রহণ করেছে।

এর মধ্যে খবর বের হয়েছে- গোপন স্থানে ইউক্রেনের সেনাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-সিআইএ। ইয়াহু নিউজ এই খবর দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না- ইয়াহু নিউজ হলো মার্কিন বলয়েরই একটি সংবাদ মাধ্যম। ফলে খবরের বিশ্বস্ততা নিয়ে আপাতত সন্দেহ পোষণ করার সুযোগ কম। যাহোক, আমরা সাম্প্রতিক রুশ-মার্কিন আলোচনা ও সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর ওপর একটু নজর বুলিয়ে নিতে পারি।  

রুশ নাগরিকদের হত্যার জন্য মার্কিন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইউক্রেনের সেনাদের গোপনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। শুক্রবার ইয়াহু নিউজ এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের স্পেশাল অপারেশন্স ইউনিটের সেনাদের এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। ইউক্রেনের গোয়েন্দা সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আমেরিকার সাবেক পাঁচজন গোয়েন্দা এবং জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইয়াহু নিউজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের একটি গোপন ঘাঁটিতে ২০১৫ সাল থেকে আমেরিকা এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিভাবে রুশ নাগরিকদের হত্যা করতে হবে তার কৌশল শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে। রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় তাহলে এইসব প্রশিক্ষিত লোকজন সেখানে গেরিলা কমান্ডার হিসেবে কাজ করবে। সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এসব লোককে গত আট বছর ধরে প্রশিক্ষণ দি”িছ। তারা সত্যিই ভালো যোদ্ধা হয়ে উঠেছে। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালালে সিআইএর এই কর্মসূচির বিরাট প্রভাব পড়বে। প্রশিক্ষণেরফলে ইউক্রেনের স্পেশাল ইউনিটের সদস্যরা অনেক বেশি দক্ষ ও যোগ্য হয়ে উঠছে এবং তারা রাশিয়ার সেনাদের পিছু হটানোর জন্য সক্ষমতা অর্জন করবে।’

আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে: ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে রুশ-মার্কিন দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হওয়ার আশংকা জোরদার হয়েছে সাম্প্রতিক বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোটের সঙ্গে রাশিয়ার নিরাপত্তা আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি জানান, মৌলিক কিছু বিষয় নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে মতবিরোধ আগের মতোই রয়েছে। জেনেভা ও ব্রাসেলস আলোচনার কথা উল্লেখ করে পেসকভ বলেছেন, মস্কো বাস্তব ফলাফল চায়। পশ্চিমাদের কাছে রাশিয়ার নিরাপত্তা দাবি এবং ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েনের বিষয় নিয়ে জেনেভা, ব্রাসেলস ও ভিয়েনায় আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠক শেষে পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উ”চারণ করে বলেছেন, গত ৩০ বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে ইউরোপে যুদ্ধের আশংকা এখন সবচেয়ে বেশি। তিনি আরো বলেন ‘বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা পূর্ব ইউরোপে সম্ভাব্য একটি বড় সামরিক সংঘাতের সম্মুখীন হয়েছি। গত ৩০ বছরের মধ্যে যুদ্ধের আশংকা কখনই এতটা বেশি ছিল না।’

ন্যাটো মহাসচিবের হুঁশিয়ারি: ব্রাসেলসে বৈঠক শেষে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোটের মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ হুঁশিয়ারি উ”চারণ করে বলেছেন, ইউরোপে সত্যিকারের একটি যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে। সম্ভাব্য এই যুদ্ধের ঝুঁকি এড়াতে তিনি রাশিয়া এবং ন্যাটো জোটের নেতাদের মধ্যে আরো আলোচনা অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বুধবার রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ চার ঘণ্টা বৈঠক শেষে স্টলটেনবার্গ সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। স্টলটেনবার্গ এ বৈঠককে ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণ বলে মন্তব্য করেন তবে ইউক্রেন ইস্যুতে দু’পক্ষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মতপার্থক্য রয়েছে বলে জানান তিনি। এই মতপার্থক্য দূর করা খুব সহজ হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুধু আমেরিকার সঙ্গে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা ন্যাটো জোটের দ্বন্দ্বে পরিণত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা এ কাজই করে আসছে। তার নিজের সমস্যাকে ন্যাটো জোটের সমস্যা বলে প্রতিষ্ঠা করে এবং ন্যাটো জোটকে যেকোনো সামরিক আগ্রাসনে জড়িয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে একটি ‘গণতান্ত্রিক ভাব’ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে। অর্থাৎ, প্রতিপক্ষ একা এবং আমেরিকার সঙ্গে সবাই। তার মানে হচ্ছে এই যুদ্ধে ‘যুক্তি ও গণতন্ত্র’ আমেরিকার পক্ষে।  আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া সব জায়গায় এ কাজ করেছে তারা। ইউক্রেন নিয়ে বড় আশংকাটা এখানেই। যখন ন্যাটোকে জড়ানো হয়েছে তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে আমেরিকার জন্য তুলনামূলক সহজ হবে। রুশ রাষ্ট্রদূতের হুমকি: দু’পক্ষের মধ্যে একের পর এক বৈঠক যখন ব্যর্থ হয়েছে তখন অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো অপারেশন ইন ইউরোপ বা ওএসসিই-তে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার লুকাশেভিচ বলেছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার দাবি না মানলে বিপর্যয়কর পরিণতি অপেক্ষা করবে। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার প্রতি যদি আমেরিকা ও ন্যাটো জোটের আগ্রাসী আচরণ অব্যাহত থাকে তাহলে কৌশলগত ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যেসব অগ্রহণযোগ্য হুমকি রয়েছে তা আমরা দূর করব।’ তিনি আরো বলেছেন, সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে মস্কো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাদ দেবে না বরং জোরদার করবে।


চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকা ও ন্যাটো সামরিক জোটের কর্মকর্তাদের যেসব বৈঠক হয়েছে, তার একটি অনুষ্ঠিত হয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়। সেখানেও একই অবস্থা। অর্থাৎ আলোচনায় কোনো রকমের অগ্রগতি হয়নি।

বৃহস্পতিবার ওই আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেবিগনিউ রাও বলেছেন, গত ৩০ বছরের মধ্যে এখন যুদ্ধের আশংকা অনেক বেশি। ৩০ বছরে মধ্যে ইউরোপে যুদ্ধের আশংকা কখনো এতটা বেশি ছিল না। অন্যদিকে, ওএসসিইতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল কার্পেন্টার বলেছেন, যুদ্ধের দামামা বাজার শব্দ শোনা যাচ্ছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার জেইক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের ঝুঁকি অনেক বেশি। বলার অপেক্ষা রাখে না- সুলিভানের কথায়ও সামরিক সংঘাতের ইঙ্গিত বহন করছে।

পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা: ইউক্রেন ইস্যুতে সব আলোচনা যখন ব্যর্থ হচ্ছে তখন মার্কিন ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা বিল উত্থাপন করেছেন। এই বিলে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও রাশিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেছেন, আমেরিকা যদি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও রাশিয়ার অন্যান্য নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে ধরে নেয়া হবে যে, ওয়াশিংটন মস্কোর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার জবাবে রাশিয়া কী ব্যবস্থা নেবে তা নিয়ে মস্কো এখনো কোনো পরিকল্পনা করে নি বলে জানান পেসকভ।
পুতিনের সামনে ভিন্ন অপশন: রাশিয়ার রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি হচ্ছেন দেশটির অন্যতম উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। তিনি চলমান পরিস্থিতিতে  বলেছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনা অচলাবস্থায় পড়েছে এবং নতুন করে এ নিয়ে আলোচনা করার কোনো কারণ নেই। রিয়াবকভ বলেন, রাশিয়ার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং পূর্ব দিকে ন্যাটো জোটের বিস্তৃতি না ঘটানোর দাবি নিয়ে চলতি সপ্তাহ জুড়ে যে আলোচনা হয়েছে তাতে আমেরিকা ও ন্যাটো জোট ভিন্ন মনোভাব দেখিয়েছে এবং একই ইস্যু নিয়ে আবারো আলোচনায় বসার কোনো কারণ তিনি দেখছেন না। রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি বলেন, আমেরিকা এবং ন্যাটো জোট রাশিয়ার দাবি পূরণ করতে প্রস্তুত নয়, তারা তারা শুধু এমন কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে চায় যা মস্কোর কাছে গুরুত্বহীন। এ অবস্থায় ইউক্রেন ইস্যুতে পরিস্থিতি যদি আরো খারাপ হয় তাহলে রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞরা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সামনে ভিন্ন অপশন দিয়েছেন। পাশাপাশি ভেনিজুয়েলা এবং কিউবায় রাশিয়ার সেনা মোতায়েন করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেন নি সের্গেই রিয়াবকভ। যদি পরিস্থিতি এ দিকে যায় তাহলে বিশ্বে আবার সেই আগের মতো চরম স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম নেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গত সোমবার রিয়াবকভ এবং মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান জেনেভায় বৈঠক করেন। শেরম্যানের সঙ্গে বৈঠকের পর রিয়াবকভ জানিয়েছিলেন, যে বিষয়ের সমাধান দরকার তা নিয়ে আমেরিকা এবং রাশিয়া বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। অন্যদিকে শেরম্যান বলেছিলেন, রাশিয়ার প্রস্তাব আমেরিকার কাছে আলোচনার যোগ্যই না। তিনি সরাসরি বলেছেন, ‘রাশিয়াকে হয় কূটনীতির পথ বেছে নিতে হবে, না হয় পশ্চিমাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে হবে। রাশিয়া যদি আলোচনার টেবিলে থাকে এবং তারা উত্তেজনা নিরসনের ক্ষেত্রে শক্ত পদক্ষেপ নেয় তাহলে অগ্রগতি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ একথার মধ্যদিয়ে তিনি মূলত বল রাশিয়ার কোটে ঠেলে দিয়েছেন। অর্থাৎ শেরম্যানের বক্তব্য অনুসারে- ইউক্রেন ইস্যুতে যেকোনো পরিস্থিতির দায় এখন রাশিয়ার!  ইউক্রেনকে কখনো ন্যাটো জোটের সদস্য করা যাবে না বলে রাশিয়া যে দাবি জানিয়েছে সেসম্পর্কে শেরম্যান বলেন, মস্কোর এ দাবি পূরণ করা কখনই সম্ভব নয়। ন্যাটো জোটের সদস্যরা এ দাবির বিষয়ে একমত হবে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ধরনের ঘটনার জন্য আমেরিকা ও ন্যাটো  জোট প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও শেরম্যান হুমকি দিয়েছেন। তিনি পরিষ্কার করে বলেন, রাশিয়াকে সুস্পষ্ট মূল্য দিতে হবে, তারমধ্যে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা হবে অন্যতম। এর ফলে রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও রপ্তানি-শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়া, রুশ সীমান্তবর্তী মিত্র দেশগুলোতে ন্যাটো জোটের সামরিক উপস্থিতি বাড়বে এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।

জেনেভা আলোচনার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও মস্কোর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। তারা বলেছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনের ওপর সামরিক আগ্রাসন চালায় তাহলে তাকে মূল্য দিতে হবে।

এই সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং রুশ, মার্কিন ও ন্যাটো কর্মকর্তাদের কথাবার্তা বিশ্লেষণ করে একথা বলা যায় যে, ইউক্রেন ইস্যু আর মোটেই স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। এর একটা পরিণতি দেখতে চায় দু’পক্ষ। আমেরিকা ও ন্যাটো জোট ইউক্রেনে যেমন ন্যাটো সেনা মোতায়েন রাখতে চায় তেমনি ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটের সদস্য করতে চায়। এর যেকোনোটিই করা হোক না কেন, তা রাশিয়ার জন্য বদহজম হবার ব্যাপার। কারণ রাশিয়া ও ইউক্রেন সীমান্তবর্তী দেশ, দূরের কেউ নয়। বরং আমেরিকাই এখানে বাইরের কেউ। যেভাবে রাশিয়ার সীমান্তে মার্কিন ও ন্যাটো সেনারা ঘুরে বেড়াচ্ছে বা স্থায়ী ঘাঁটি গাড়তে চায়, সেভাবে যদি রাশিয়ার সেনারা আমেরিকার সীমান্তে অবস্থান গ্রহণ করত তাহলে আমেরিকা কী তা মেনে নিতো? নিশ্চয় না। তাহলে তারা কীভাবে রাশিয়াকে তাদের সেনা অবস্থান মেনে নিতে বাধ্য করতে চায়? আমেরিকা জানে- এর সদুত্তর তাদের কাছে নেই, তবু গায়ের জোরে কাজটি করতে চায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনো রকম সংঘাতে জড়ালে রাশিয়াও ছেড়ে কথা বলবে না। মার্কিন অস্ত্রের চেয়ে রাশিয়ার অস্ত্র এখন মোটেই কম ধারাল নয়। মধ্যপ্রাচ্যে আমরা আমেরিকাকে হিমশিম খেতে দেখছি, আফগানিস্তান থেকে এক রকমের পালিয়েছে। সেখানেও ন্যাটো সেনাই ছিল। তারপরেও কিন্তু‘ শেষ রক্ষা হয় নি। তাহলে ইউক্রেন ইস্যুতে সম্ভাব্য সংঘাতে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে- সে কথা হিসাব করেছেন ন্যাটো জোটের নেতারা? তাদের একথাও মনে রাখতে হবে- ছোট সংঘাত থেকেই বড় সংঘাতের সূচনা হয়। দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধ তেমনই ছিল। সর্বশেষ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা পরমাণু বোমা বানালেও রাশিয়া কিš‘ মোটেই খালি হাতে বসে নেই।

(লেখক: সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক) ।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.