× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বঙ্গবন্ধু আধুনিক গণমুখী এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছেন

হীরেন পণ্ডিত

১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৪:৪৫ এএম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষার ভাবনা ও শিক্ষা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি তার সামগ্রিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা আদর্শের সঙ্গে মিল রয়েছে। শিক্ষা ও মানবসম্পদ একে অন্যের পরিপূরক। শিক্ষার সঙ্গে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। বঙ্গবন্ধু মনে করতেন যুবকদের মনে মূল্যবোধের সৃষ্টি ও তাদের চরিত্র গঠনের ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষার ক্ষেত্রে মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং মৌলিক চিন্তার অবকাশ খুব কমই ছিল। সে অবস্থার দ্রুত অবসান করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু তার দেশবাসীর জন্য বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও শোষণমুক্ত দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয় এবং একটি নিরলস মনোভাবের সঙ্গে তিনি তার এদেশের মানুষকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে ২৩ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এদেশের মুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে পরিণত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের মূল উপাদানগুলো ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক যা ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি, চিন্তা বা দর্শন শিক্ষার মূলে রয়েছে তার রাজনৈতিক আদর্শ। তার শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে একটি অন্তর্দৃষ্টি পেতে আমাদের বাংলাদেশের সংবিধান, কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার, অসংখ্য অনুষ্ঠানে তার ভাষণ এবং বঙ্গবন্ধুর সম্প্রতি প্রকাশিত বই কারাগারের রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ অসংখ্য দলিলপত্র গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে সবসময় সামাজিক রূপান্তরের হাতিয়াররূপে দেখতে চেয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন দীর্ঘদিনের শোষণ জর্জরিত সমাজে দ্রুত সামাজিক রূপান্তর ও অগ্রগতির জন্য শিক্ষাকে বিশেষ হাতিয়াররূপে প্রয়োগ করতে হবে। প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টির স্বার্থে সকল নাগরিকের মধ্যে মেধা ও প্রবণতা অনুযায়ী শিক্ষা লাভের সুযোগ-সুবিধার সমতাবিধানের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিভার সদ্ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকটি মানুষ যাতে স্ব-স্ব প্রতিভা ও প্রবণতা অনুযায়ী সমাজজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের সব ক্ষেত্রে সৃজনশীল ক্ষমতা নিয়ে অগ্রসর হতে পারে, সে জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে তার বাহন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে একটি প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার দক্ষতা সৃষ্টিরও বন্দোবস্ত করতে হবে।

ড. খলীকুজ্জমান নানা কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অনাচার ও দুর্নীতি অবসানের অনুকূল বিজ্ঞানমুখী, আদর্শবাদী ও সামাজিক উন্নয়নের পরিপোষক মনোভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। এজন্য দেশের প্রতিটি নাগরিকের ন্যূনতম মান পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু তার বিভিন্ন ভাষণে প্রয়োগমুখী অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনুকূল শিক্ষার কথা বলেছেন। দেশের সামগ্রিক কল্যাণ ও উন্নতির উদ্দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির বিশাল দায়িত্ব শিক্ষা ব্যবস্থার। বঙ্গবন্ধু যখন দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন তখন বাংলাদেশ বিধ্বস্ত একটি দরিদ্র দেশ।

প্রধানমন্ত্রী তার সাহসী হৃদয় এবং বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারাবাহিকতার প্রতীক ইতিহাস তিনি তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ পেশ করেন যা কুদরত ই খুদা কমিশন রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। অধিকন্তু প্রতিবেদনটি প্রণয়নের সময় প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক কবির চৌধুরী এবং ড. খলীকুজ্জমানকে চেয়ারম্যান ও সহ-সভাপতি হিসেবে নিয়ে গঠিত কমিশন যথাক্রমে জাতিকে দক্ষতা ও জ্ঞানে সজ্জিত করার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি, প্রস্তুত থাকে।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়ের পর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে সদ্য জন্ম নেওয়া বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনে যাত্রা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ মানে খাঁটি মানুষ দরকার। বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন যে তার পুনর্গঠন ও পুনর্গঠন কর্মসূচির জন্য শিক্ষিত কর্মীবাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন এবং তাই প্রথম থেকেই শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গণমুখী বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্বাস করতেন এবং সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত চারটি রাষ্ট্রীয় নীতি যা শুধু মানবসম্পদ উন্নয়নে অবদান রাখবে না বরং জাতির চরিত্রকে সবচেয়ে প্রগতিশীল ও বৈজ্ঞানিক কাঠামোতে ঢেলে দেবে। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনামূল্যে, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার বিধানসহ গণমুখী, অভিন্ন, প্রগতিশীল এবং বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যুগ যুগের উন্নত জ্ঞান ও সর্বজনীন মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে একটি প্রগতিশীল ও আলোকিত জাতি গড়তে চেয়েছিলেন যা তার সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে। সেই লক্ষ্যে যুগোপযোগী, গণমুখী ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. খুদরত ই খুদাকে চেয়ারম্যান করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কমিশনটি ১৯৭২ সালে গঠিত হয়েছিল। কমিশনকে নতুন জন্ম নেওয়া রাষ্ট্রের প্রয়োজন অনুসারে এবং রাষ্ট্রীয় আদর্শ এবং প্রাসঙ্গিক সাংবিধানিক বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

কমিশন ৩০ মে, ১৯৭৪ তারিখে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করে। প্রতিবেদনে একটি প্রগতিশীল, আধুনিক, গণমুখী, অভিন্ন এবং বৈজ্ঞানিক শিক্ষা ব্যবস্থা  স্থাপনের সমস্ত উপাদান রয়েছে যা কমিশনের কাজ শুরু করার আগে বঙ্গবন্ধু কমিশনের সঙ্গে তার বৈঠকে উল্লেখ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু একজন দূরদর্শী নেতা ছিলেন তাই তিনি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থার কল্পনা করেছিলেন যা জাতির সম্ভাবনাকে উন্মোচন করে মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে যার ফলে দেশের দ্রুত পুনর্গঠন ও উনয়ন নিশ্চিত হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূরীকরণের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের জন্য কারিগরি জনবলের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে কারিগরি শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেন। তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় খাদ্য অর্জনের জন্য জ্ঞানের পরিপূর্ণতা অর্জনের জন্য ছাত্রদের কৃষি শিক্ষা, গবেষণা এবং বাস্তব প্রশিক্ষণের উপরও জোর দেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে তার একটি বক্তৃতায় শিক্ষা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি ভালভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল। তার ভাষণে শিক্ষাকে সর্বোত্তম বিনিয়োগ হিসাবে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা সম্পর্কিত নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর জোর দিয়েছিলেন্ তিনি নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং বাধ্যতামূলক বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করার আহ্বান জানান। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে সকল স্তরের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। নতুন মেডিকেল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রবেশাধিকার এবং চিকিৎসা শিক্ষাসহ কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণের ওপরও জোর দেন। উচ্চশিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দারিদ্র্য যেন শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষার প্রতিবন্ধক না হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি জিডিপির ৪% শিক্ষার জন্য বরাদ্দের দাবি করেছিলেন। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু প্রায় ৩০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন এবং ১১ হাজার নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে প্রায় এক লাখ প্রাথমিক শিক্ষক সরকারি কর্মচারী হিসেবে আত্মীকৃত হয়েছেন।

উ”চশিক্ষার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু অবাধ জ্ঞান ও গবেষণায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি উ”চশিক্ষার অঙ্গনে একটি মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন যাতে এটি গবেষণা, অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ এবং বিশ্লেষণাত্মক বিতর্কের মাধ্যমে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা, জ্ঞানের জন্ম দেয় যা বাধাহীন এবং বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া চলতে পারে। অবাধ একাডেমিক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের আদেশ জারি করে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন দেন। তিনি স্থানীয় সমস্যার দেশীয় সমাধান এবং স্থানীয় প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য উ”চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে ফলিত গবেষণার ওপর জোর দেন।

বঙ্গবন্ধু একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুদান বরাদ্দ এবং পর্যবেক্ষণের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুবিধার্থে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করেন। এই সংস্থাটিকে উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম করছেন। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে অর্জনের মধ্যে রয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষায় প্রায় শতভাগ নথিভুক্তি, উপবৃত্তি, ফিডিং প্রোগ্রাম ইত্যাদির মতো বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে ঝরে পড়ার হার ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা, নারী শিক্ষার সম্প্রসারণ যার ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পরুষ শিক্ষার্থীর চেয়ে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক নতুন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আইসিটি শিক্ষা এবং আইসিটি অবকাঠামোর উন্নয়ন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে এবং ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া বাংলাদেশে অনন্য অগ্রগতি করেছে।

কৃষির উন্নতির জন্য বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা স্তরের কৃষি কারিগরি কোর্স চালু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু সরকার গণমুখী শিক্ষার বিষয়কে শুধু সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েই থেমে থাকেননি, বরং নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, ১১ হাজার নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন এবং শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ। জাতির জন্য একটি গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা যে কত আবশ্যক তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আমাদের জন্য শিক্ষাই উন্নতি ও অগ্রগতির একমাত্র সোপান। বঙ্গবন্ধু শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে সম্পদে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষাকে আমূল সংস্কারের মাধ্যমে যুগোপযোগী করে তোলা হোক। দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো মাদ্রাসাগুলোতে একই প্রাথমিক শিক্ষাক্রম প্রবর্তিত হবে এবং সর্বস্তরে বাংলাকেই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা আবশ্যিক পাঠ্যবিষয় হিসেবে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষায় মাদ্রাসার ছাত্ররা তিন বছর মেয়াদি বৃত্তিমূলক ধর্ম শিক্ষা কোর্স পড়তে পারবে। এ কোর্সের নবম ও দশম শ্রেণিতে তাদের বাংলা, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইংরেজি এই চারটি আবশ্যিক পাঠ্য বিষয় অধ্যয়ন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি করা সম্ভব নয়। তার ভাষায়- ‘শিক্ষা হচ্ছে বড় অস্ত্র যা যে কোনো দেশকে বদলে দিতে পারে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলতেন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরের মতো প্রাকৃতিক সম্পদবিহীন দেশ শুধু মানবসম্পদ সৃষ্টি করে যদি উন্নত দেশ হতে পারে, তাহলে বাংলাদেশও একদিন উন্নত দেশ হবে। আর সে জন্যই তিনি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার সেসব উদ্যোগের কিছু ছিল তাৎক্ষণিক আর কিছু ছিল দীর্ঘমেয়াদি।  শেখ হাসিনার ২০১০ সালের শিক্ষানীতির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনার ব্যাপক প্রতিফলন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার দেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ভিশন ২০২১, ভিশন ২০৪১ এবং সর্বশেষ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ ঘোষণা করেছেন এবং প্রত্যেকটি ভিশন সফলভাবে বাস্তবায়নে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা জাতিকে পথ দেখাবে।

বঙ্গবন্ধু নৈতিক শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন জ্ঞান শুধু কর্মদক্ষতা ও কৌশল অর্জন নয়, শিক্ষার্থীর মনে মৌলিক ও নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে হবে। কর্মে ও চিন্তায়, বাক্যে ও ব্যবহারে যেন সে সদা সর্বদা সততার পথ অনুসরণ করে। চরিত্রবান, নির্লোভ ও পরোপকারী হয়ে ওঠে এবং সর্বপ্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।

লেখক: প্রবান্ধিক ও রিসার্চ ফেলো, বিএনএনআরসি।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.