× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পশ্চিম রেলওয়ের চিকিৎসা বিভাগে ব্যাপক অনিয়ম, কোটি টাকা লুটপাট

রাজশাহী ব্যুরো

৩০ অক্টোবর ২০২২, ০৭:০৩ এএম

বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিম) রাজশাহী'র মেডিকেল বিভাগে চাকরি বিধি লঙ্ঘন, ঠিকাদারি কাজে কমিশন বাণিজ্য, ওষুধ চুরি, দায়িত্বে অবহেলাসহ কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র বলছে, ঠিকাদারি কাজে মালামাল গ্রহন না করে চালানে স্বাক্ষর, মোট বিলের ৩৫% কমিশন গ্রহণ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে দিয়ে চাহিদাপত্র তৈরী করে ২ কোটি টাকার অধিক লোপাটসহ নানা অনিয়ম আর দূর্নীতির মহোৎসব চলছে পশ্চিম রেলওয়ে মেডিকেলে। এই দূর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। প্রতিবার-ই দুর্নীতির মহোৎসব শেষ করে অবসরে চলে যাচ্ছেন আর ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন সিএমও'র দায়িত্ব প্রাপ্তরা। আবার ওষুধ চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়া পরও কর্মচারিরা আছেন বহালতবিয়তে। ওষুধ কেনার সময় নির্দিষ্ট ওষুধ কোম্পানির থেকে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের কমিশন। হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাতেও হচ্ছে নয়ছয়। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম (রাজশাহী) জোনের চিফ মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) ডাঃ সুজিৎ কুমার রায় চলতি বছরে অবসরে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ফাঁস হয়ে যায় তাঁর কয়েক কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা।

ডাঃ সুজিৎ কুমার রায় পাকশী ডিভিশনের ডিএমও থেকে পদোন্নতি পেয়ে ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ সালে সিএমও (পশ্চিম) হিসেবে যোগদান করেন। সিএমও হিসেবে যোগদানের পর তিনি সেনেটারি ইন্সপেক্টরের শূন্য পদে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব দেন চতুর্থ শ্রেণির জমাদার, ড্রেসার, খালাসিদের। লালমনিরহাট,  পাকশী এবং রাজশাহীর শুধুমাত্র সেনেটারি বিভাগ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন ৬ কোটি টাকা। 

জানা যায়, পাকশী ডিভিশনে ৫টি সেনেটারি ইন্সপেক্টর পদ আছে। ৫ পদের মধ্যে একজন সেনেটারি ইন্সপেক্টর রয়েছেন। এছাড়া বাকী চারটিতে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব হিসেবে দেওয়া আছে চতুর্থ শ্রেণির জমাদার, ড্রেসার ও খালাসি পদের চার ব্যক্তিকে। তারা হলেন, রাজশাহীতে জুয়েল সরকার, ঈশ্বরদীতে আকরাম, খুলনায় অয়ন সরকার এবং পাকশীতে জগবন্ধু বিশ্বাস, যারা সবাই সেনেটারি ইন্সপেক্টর পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কর্মরত এবং ডাঃ সুজিতের আস্থাভাজন। 

ডাঃ সুজিত যখন পাকশীর ডিএমও ছিলেন, তখন থেকেই বর্তমানে পাকশীর সেনেটারি ইন্সপেক্টর জগবন্ধু বিশ্বাস তার আস্থাভাজন। সেই সুবাদে গত দুই বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার উপরে মালামালের চাহিদা নেওয়া হয়েছে তার কাছ থেকেই। যদিও চাহিদা পত্রে একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি স্বাক্ষর করার এখতিয়ার রাখেন না, তবুও শুধু মাত্র দূর্নীতির সফর সঙ্গী হিসেবে আস্থাভাজন জগবন্ধুকে বলির পাঁঠা বানিয়ে লোপাট করা হয়েছে সেই টাকা। মালামাল কেনার শুধুমাত্র হাত বদল হয়েছে টাকার। স্টোরে খাতা কলম ঠিক থাকলেও মালামাল নেই স্টোরগুলোতে। পাকশী ডিভিশনে অন্যান্য সেনেটারি ইন্সপেক্টর পদে দ্বায়িত্ব পালনকরা অন্য কেউ-ই এমন  মালামাল না কিনলেও শুধুমাত্র পাকশী'র দ্বায়িত্বে থাকা জগবন্ধু বিশ্বাস  মালামাল কিনেছেন ২ কোটি টাকার। 

এদিকে লালমনিরহাট ডিভিশনে "একাই একশ" সিঃ সেনেটারি ইন্সপেক্টর সারাফাত। তিনি একাই গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০-৩৫ কোটি টাকার মালামাল কিনেছেন। সেখানেও সিএমও সুজিৎ কুমার রায় এর আছে ৩৫% কমিশন। এছাড়াও সিএমও রাজশাহী দপ্তরে তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে করেছেন কয়েক কোটি টাকার কাজ। ৫ লক্ষ টাকার চাহিদা পত্রের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা কমিশন ও মালামাল গ্রহণ না করেও ৩৫% কমিশন নিয়েছেন তিনি। 

রেলের একটি বিশ্বস্ত সুত্র বলছে, গত ৪ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখে জগবন্ধু'র চাহিদা পত্রের বিপরীতে পাকশী ডিভিশনের ডিএমও ডাঃ শাকিল আহমেদ চারটি চাহিদা পত্র প্রদান করেন। সেই চার চাহিদা পত্রে অ্যারোসল স্প্রে, হুইল ব্যারো, স্প্রে মেশিন, হ্যান্ড ওয়াশ, হারপিক লিক্যুইড, ভিম লিক্যুইড, ফুল ঝাড়ু, ডি অয়েল, ল্যাটিন বাকেট, গ্লাস ক্লিনার, বাশের টুকড়ি ইত্যাদি বাবদ ব্যয় ধরা হয় ৪৫ লক্ষ  টাকা। যা শুধু মাত্র কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। 

৩ জানুয়ারি ২০২২ ইং তারিখের দুটি চাহিদা পত্রে ৩৩ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকার মালামাল ক্রয় দেখানো হয়। যেখানে হ্যান্ডওয়াশ, রাবার পাইপ, ড্যামফিক্স, ল্যাট্রিন ব্রাশ, সাবান, লাইজল ফ্লোর ক্লিনার, ফ্লোর সোয়াইব, তোয়ালে, বেড সীট, আসবাবপত্র, ক্রয়ের কথা বলা হয়েছে। মালামাল ক্রয়ে রয়েছে অসংগতি। কেনা দামেও রয়েছে বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশী পার্থক্য। 

এছাড়াও গত ৯ জুন ২০২২ ইং তারিখে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯২০ টাকা, ১৭ জুলাই-২০২২ ইং তারিখে ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখে ২৫ লাখ, ১১ আগস্ট ২০২১ ইং তারিখে ১০ লাখ ২৮ হাজার ৩০০ টাকা, ১০ অক্টোবর ২০২১ ইং তারিখে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫০ টাকা মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। এমন বারবার একই মালামাল কেনা আর মালামাল গ্রহন না করে ঠিকাদারের কাছ থেকে ৩৫% কমিশন বানিজ্য এখন তুঙ্গে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রেল কর্মচারী জানান, অল্প সময়ের জন্য দ্বায়িত্ব পান সিএমও। এই অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার জন্য যে, যেমনভাবে পারে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি রেখে দূর্নীতি করেন। বর্তমান সিএমও জগবন্ধু বিশ্বাস এর মতো গুটিকয়েক অসাধু কর্মচারীকে বলির পাঁঠা বানিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। অডিট আপত্তিকে ম্যানেজ করেই চলে এই লোপাট। এর সঙ্গে পশ্চিম রেলের  সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিও প্রত্যাক্ষভাবে জড়িত বলে সূত্রের দাবি।  বিষয় গুলো দুদকের উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত হওয়া দরকার বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অসামঞ্জস্যপূর্ণ চাহিদা পত্র পাঠানো পাকশীর অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সেনেটারি ইন্সপেক্টর জগবন্ধু বিশ্বাস বলেন, আমি ফোনে আপনার সাথে কোন কথা বলবো না ; পাকশী আসেন, এখানে আপনার সাথে সব কথা বলবো। 

কথা বললে বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিম) এর চীফ মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) সুজিৎ কুমার রায় বলেন, লোকবল সংকট তাই তাদের অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। আগে করলেও ভবিষ্যতে চাহিদা পত্রে আর কোন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী স্বাক্ষর করবে না। অনিয়ম দূর্নীতির বিষয় এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ডিএমও সাহেবরা বিষয়গুলো দেখেন, আমি শুধু ফরোয়ার্ড করি। তিনি ডিএমও' দের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। 

এদিকে, পাকশীর ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) কে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 

জানতে চাইলে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, এ বিষয়গুলো আমার জানা নাই। আমি বিষটি জানবো, জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.