নীলফামারীর ডিমলায় খালিশা চাপানি ফারহানা রউফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে একজন শিক্ষার্থীও পাওয়া যায়নি। চারটি শ্রেণিকক্ষের সব কটি ছিল শূন্য। শুধু অফিসকক্ষে একজন সহকারী শিক্ষক ছিলেন উপস্থিত। এই চিত্র প্রায় প্রতিদিনেরই বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন শিক্ষক সংকটের কারণে স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে অনেক শিশুই। অর্ধেক শিক্ষার্থী চলে গেছে অন্য প্রতিষ্ঠানে। এমন অবস্থায় বারবার বলেও মেলেনি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ। ফলে স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়লেও ঘুমিয়ে আছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।
উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে স্থাপিত হয়। ২০১৩ সালে স্কুলটি জাতীয়করণের সময় ৪ জন শিক্ষক দিয়ে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছাড়া ডেপুটেশনে এসেছেন একজন সহকারী শিক্ষক। বিদ্যালয় ভবনটি একতলা।মোট চারটি কক্ষ। একটি কক্ষে বসেন শিক্ষকেরা। বাকিগুলো শ্রেণিকক্ষ।
গত মঙ্গলবার দুই ঘণ্টা বিদ্যালয়ে অবস্থান করে দেখা যায়, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়নি। তবে শ্রেণিকক্ষগুলো ছিল খোলা।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১৯১ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ৩৮ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৮, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩২, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৬ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ১৭ জন। তবে এসব শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতায় গত তিনদিনের উপস্থিতি পাওয়া যায় নি।
কথা হয় বিদ্যালয়টির সামনের বাসিন্দা বিনতী রানী সহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেন, এই বিদ্যালয়ে মাত্র একজন শিক্ষক উপস্থিত হন। মাঝেমধ্যে চার-পাঁচজন শিক্ষার্থী দেখা যায়। কখনো কখনো তাও দেখা যায় না। উপবৃত্তির জন্য অনেকে ভর্তি হয় এখানে আর ক্লাশ করে প্রাইভেট স্কুলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন,এখানে শিক্ষক নেই, ঠিকমতো পাঠদান হয়না। এলাকার অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের আশপাশের ভালো স্কুলে পড়াশোনা করান। এর ফলে এখানে তেমন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয় না। আসলে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলীমুল রাজি জানান, তিনি গত মাসে ডেপুটেশনে এখানে এসেছেন। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সঙ্কটের জন্য পাঠদান ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া এই এলাকার আশপাশে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিতে খুব কমসংখ্যক ছেলেমেয়ে উপস্থিত হয় বলেন তিনি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রতিমা রানী জানান, তিনি একাই গত এক বছর ধরে স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে আসছেন। একজন শিক্ষক দিয়ে স্কুল পরিচালনা করায় কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন অনেক প্রবীন মানুষ।তাই সব দায়িত্ব আমাকেই পালন করতে হয়েছে।গত মাসে তিনিও অবসরে গেছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজউদ্দিন বলেন, বিষয়টি দপ্তরের নজরে রয়েছে।দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়টি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।