× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ভেঙে ফেলা হচ্ছে ৩শ বছরের পুরনো জমিদার বাড়ি

মো. মোছাদ্দেক হাওলাদার, বরিশাল

০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:২২ এএম

দখিনের প্রাচীন জনপদ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী। ১৭০০ সালের গোড়ার দিকে জমিদার জানকি বল্লভ রায় চৌধুরী কলসকাঠী স্থাপন করেন। 

জানকী বল্লভ রায় চৌধুরী ছিলেন গারুড়িয়ার জমিদার রামাকান্তের পুত্র। জানকী বল্লভ রায় চৌধুরীরা ছিলেন দুই ভাই। জানকী বল্লভকে হত্যার চক্রান্ত করে বড় ভাই রাম বল্লভ। জানকী বল্লভ তার বৌদির মাধ্যমে হত্যার বিষয়টি জানতে পেরে রাতের আধারে গারুড়িয়া ত্যাগ করে মুর্শিদাবাদে চলে যান। সেখানে নবাবের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন এবং নবাব তাকে অরংপুর পরগনার জমিদার হিসেবে নিয়োগ করেন। যতদূর পর্যন্ত ভাটা তত দূর পর্যন্ত জানকী বল্লভের পাট্টা ছিল। জমিদারী পেয়ে তিনি কলসকাঠীতে এসে বসতি স্থাপন করে। কলসকাঠীর তের (১৩) জমিদার মূলত জানকী বল্লভের পরবর্তী বংশধর।

কলসকাঠীকে একটি পৃথক জমিদার বাড়ি না বলে, বলা যায় পূর্ণাঙ্গ একটি প্রাচীন শহর। অনেকটা সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরের মতো। এখানে জমিদার বাড়িগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। মূল জমিদার বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের আরেকটি পুরনো বাড়ি আছে এখানে। এখানে বেশির ভাগই হিন্দুদের বসবাস।

কালের সাক্ষী হিসেবে প্রায় তিনশ বছরের বেশি সময় ধরে শক্ত কাঠামো ভিত হয়ে অযত্ন আর অবহেলায় দাড়িয়ে থাকা জমিদার বাড়িটি এখন ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। গত রোববার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্তু জমিদার বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলার কার্যক্রম চালায় ৮ জন শ্রমিক। 

খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে, সর্বশেষ জমিদার রাজেশ্বর রায় চৌধুরী মারা গেলে ওয়ারিশ হিসেবে তার বোন মিনা দেবী চৌধুরী মালিক হন। তিনি মারা যাওয়ার পরে তার পুত্র বাবু চৌধুরী ওয়ারিশ মূলে মালিক হন। তিনি মারা গেলে তার স্ত্রী ববিতা মুখার্জি ও তার তিন পুত্র প্রীতম মুখার্জী, অপু মুখার্জি, তপু মুখার্জী মালিকানা দাবি করেন। এই তিন জনের একটি লিখিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে জমিদার বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য ঠিকাদার মোবারেকে দায়িত্ব দেন।

এ বিষয়ে প্রীতম মুখার্জী প্রথম জানান, ‘জমিদার বাড়িটি আমাদের পূর্বপুরুষের। বাড়ি নিয়ে সরকারের সাথে আদালতে মামলা চললেও অনেক আগেই রায় আমাদের পক্ষে এসেছে। এখানে সরকারের কোন দায়িত্ব নেই। বাড়িটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারনে ঠিকাদারের মাধ্যমে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। পরবর্তীতে আমরা নতুন ভবন নির্মাণ করব।’

এদিকে শত বছরের পুরাতন এই জমিদার বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলায় এলাকাবাসী ও সচেতন মহল ঊদ্বেগ প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এলাকা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্বাচনী প্রচারের সেই জনসভাস্থল বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী এলাকার তেরো জমিদারবাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশাসনের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে এলাকাবাসী।

কলসকাঠী মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার বাদশা বলেন, পুরোন জমিদার বাড়িটি যাতে ভেঙ্গে ফেলা না হয় এবং এটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করে পর্যাটক কেন্দ্র করা হয় সেজন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্রশীল জানান, ঘটনাটি শোনার পর তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠানো হয়েছে এবং বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বাড়ির মালিকানা দাবিদারদের তাদের কাগজপত্র নিয়ে উপজেলায় আসতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া হবে।

সূত্রমতে , কলসকাঠীতে প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে এখানে ঐতিহ্যবাহী জগদ্বাত্রী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ পূজাকে ঘিরে কলসকাঠী পরিণত হয় লাখো মানুষের মিলনমেলায়। এলাকার তেরো জমিদারবাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ তের জমিদারের বসবাসস্থল কলসকাঠীকে ঘিরে রয়েছে প্রায় পাঁচ শ’ বছরের পুরনো ইতিহাস।

জমিদারবাড়ির প্রবেশপথে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মঠ, বেশ কিছু ভাঙ্গা মন্দির ও সংস্কারের অভাবে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বেশ কিছু বাড়ি। পাশেই রয়েছে শানবাঁধানো একটি পুকুর। দ্বিতল জমিদারবাড়ির ভিতর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে অন্দরমহলের দিকে। সিঁড়িপথ উঠে গেছে ওপরে। সিঁড়িপথের নিচে রয়েছে আরেকটি দরজা, যেটা দিয়ে বাড়ির মূল অংশে প্রবেশ করা হয়। পুরো বাড়িটি সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হলেও ঐতিহ্যবাহী বাকেরগঞ্জের কলসকাঠীর জমিদার বাড়িকে ঘিরে থেমে নেই পর্যটকদের ভিড়। ইতিহাস ঐতিহ্যখ্যাত এ জমিদারবাড়িতে প্রতিদিন সকল বয়সের মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.