× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও আক্ষেপ ঘোচেনি শহীদ শংকুর পরিবারের

রংপুর ব্যুরো

০৪ মার্চ ২০২৩, ০৩:৩০ এএম

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ, সারাদেশের মতো উত্তাল ছিল রংপুর। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে ডাকা হরতালের পক্ষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে সেই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন কিশোর শংকু সমজদার। ভাইয়ের হাত ধরে দীপ্ত স্লোগানে মুখরিত মিছিলে তাজা প্রাণ নিয়ে গেলেও শংকু ফিরেছিল নিথর দেহে। সেই মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীন হন কিশোর শংকু সমজদার।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে স্বাধীনতা সংগ্রামে কিশোর শংকু সমাজদার রংপুর অঞ্চলের প্রথম শহীদ। রংপুর শহরের কৈলাশ রঞ্জন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন শংকু সমজদার। যার সাহস আর আত্মত্যাগ আজও রংপুরবাসীর স্মৃতিতে অমলিন। তার অকাল মৃত্যুতে জ্বলে উঠেছিল বিদ্রোহের আগুন। শোকে কাতর হয়েছিল রংপুর। কেঁদেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে শংকু সমজদারের আত্মত্যাগকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর উচ্চারণে ঠাঁই পেয়েছিল রংপুর।

কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও আক্ষেপ ঘোচেনি শহীদ শংকুর পরিবারের। প্রতিবছর শংকু সমজদারের মৃত্যুর দিনটি নীরবেই কেটে যায়। থাকে না কোনো আয়োজন। স্বজনদের দাবি, শংকুর মৃত্যুর দিনটি সরকারি উদ্যোগে পালন করা হোক। সঙ্গে তার স্মরণে গড়ে তোলা হোক ম্যুরাল বা স্মৃতিস্তম্ভ। শংকুর মা দীপালি সমাজদার বেঁচে থাকা অবস্থায় তার সন্তানের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে স্মৃতিস্তম্ভে  ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে চাই।

বর্তমানে রংপুর মহানগরীর কামাল কাছনায় সরকারের দেওয়া একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে বাস করছেন শংকু সমজদারের মা, বোন ও ভাবি। শহীদের তালিকায় শংকু সমজদারের নাম গেজেটভুক্ত হলেও জোটেনি সরকারি ভাতা। তবে রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান শহীদ এই পরিবারটিকে মাসিক সম্মানি ভাতা দিয়ে সহায়তা করে আসছেন।

শুক্রবার (৩ মার্চ) দুপুরে শংকুর প্রয়াণ দিবসে তার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা ৮৭ বছরের বৃদ্ধা দীপালি সমজদারের সাথে। অশ্রুসিক্ত চোখে শয্যাশয়ী দীপালী সমজদার বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণে আমার ছেলে শংকুর জন্য রংপুরের কথা বলেছেন। শহীদের মা হিসেবে আমাকে দুই হাজার টাকাও দিয়েছেন। সরকার থেকে আমাদের থাকার বন্দোবস্ত করেও দিয়েছেন। আমি অনেক খুশি।

তিনি আরও বলেন, এখন আমার একটাই চাওয়া, শংকুকে আগামী প্রজন্মের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে তার স্মরণে শহরে একটা ম্যুরাল বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক। আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় সেই ম্যুরালে বা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শংকুর আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে চাই। সরকারসহ রংপুরের জেলা প্রশাসন, সিটি মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আমার এটাই শেষ চাওয়া।

দীপালী সমজদারের তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যা ঝর্ণা ব্যানার্জী বেঁচে আছেন। যে ভাইয়ের হাত ধরে শংকু মিছিলে গিয়েছিল, সেই বড় ভাই কুমারেশ সমজদার ২০২১ সালের ৩ জুলাই মারা গেছেন। এখন পরিবারের উপার্জনক্ষম কেউ নেই। তাই অনেকটা কষ্টেই দিন কাটছে এই শহীদ পরিবারের।

ঝর্না ব্যানার্জি বলেন, একাত্তরের ৩ মার্চ আমার ভাই শংকু সমজদার বড় ভাইয়ের হাত ধরে মিছিলে গিয়েছিলেন। তখন আমার বয়স চার-পাঁচ হবে। সেদিন ওই মিছিলে গিয়ে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে শংকুর মৃত্যু হয়। আমরা তার মরদেহটাও দেখতে পারিনি। দেশের জন্য ভাইয়ের আত্মত্যাগে আমরা গর্বিত। সরকার আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। কিন্তু আমার মায়ের শেষ ইচ্ছেটা এখন পূরণ হয়নি। এখন আমার মায়ের শয্যাশয়ী অবস্থায় তার দিন কাটছে। আমার মা এবং আমাদের চাওয়া, ৩ মার্চ শংকুর মৃত্যুর দিনটি সরকারি উদ্যোগে অথবা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পালন করা হোক। আর যদি একটা ম্যুরাল বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা যায়, তাহলে আমার মা সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন।

একাত্তরের ৩ মার্চের সেই উত্তাল দিনে শংকু সমজদারের আত্মত্যাগ এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও প্রতিবছর ৩ মার্চ শংকু সমজদারের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে তার বাসায় গিয়ে পরিবারের লোকজনের খোঁজ খবর নিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে শহীদ শংকু সমজদারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বৃদ্ধ মা দীপালি সমজদারের বাসায় যান জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন। এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেয়া হয় এবং শংকু সমজদারের বীরত্বের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।

শহীদ শংকু সমজদারের মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ জানান, জেলা প্রশাসন থেকে কিছু কাজ করা হয়েছে। আমরা শুক্রবার শহীদ শংকু সমজদারের প্রয়াণ দিবসে তাঁর মাকে নগদ অর্থ প্রদান করেছি। তবে স্মৃতিস্তম্ভের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।  

অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমি বিগত পরিষদের সময় থেকে শহীদ শংকু সমজদারের মাকে মাসিক সম্মানী ভাতা প্রদান করে আসছি। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে আমি তাঁর পরিবারকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধ, ভাষা সংগ্রামীসহ দেশের জন্য আত্মত্যাগ ও সম্মান নিয়ে আসা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মানে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। শহীদ শংকু সমজদারের স্মরণে একটি ম্যুরাল বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে আমরা চেষ্টা করব। 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.