× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

লক্ষ্মীপুরে দোয়েলসহ নানা প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে

লক্ষীপুর প্রতিনিধি

০৬ মার্চ ২০২৩, ০১:২৯ এএম

একসময় গ্রামবাংলায় পাখির সুমধুর ডাকে বাংলার মানুষের ঘুম ভাঙলেও গ্রাম-বাংলার আনাচে-কানাচে আগের মতো আর পাখির ডাক শোনা যায় না। হাওর-বাঁওড়, বিল শুকিয়ে যাচ্ছে, এছাড়াও শুকিয়ে যাচ্ছে আমাদের জলাভূমি, নদী-খালগুলো। ভরাট হয়ে যাচ্ছে পুকুর। এসব জলাভূমি, হাওর-বাঁওড় থেকে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে পাখিগুলো।

এছাড়াও বড় বড় গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। এসব গাছগুলো পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে থাকে। পাখির আবাসস্থল নির্বিচারে ধ্বংস ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক দেয়ার প্রভাবে এসব পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ আরো অনেক পাখি আর সচরাচর দেখা যায় না। শোনা যায় না এসব পাখির মধুর ডাক। উড়তে দেখা যায় না আর মুক্ত নীল আকাশে।

বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা এসব পাখি হয়তো চোখেই দেখেনি, অনেকেই এসব পাখির নামও জানে না। ফলে তরুণ প্রজন্মের কাছে এসব পাখি হয়ে যাচ্ছে গল্প আর ইতিহাস। এমনকি আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল পাখিকেও ছবি অথবা বই দেখে চিনতে হয় শিশু-কিশোরদের। এ প্রজন্মের অনেক শিশু-কিশোর কখনো দেখেনি মুক্ত আকাশে উড়ন্ত এসব নামকরা পাখি, শোনেনি  হারিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।

শৈল্পিক বাসার কারিগর  সব জায়গায় চোখে পড়ত এ পাখি। কিন্তু এখন সারিবদ্ধ তালগাছের পাতায় ঝুলতে দেখা যায় না তাদের শৈল্পিক বাসা। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ। 
 
জানা যায়, নিপুণ শিল্পকর্মে দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখি বিখ্যাত। বাসা বানানোর জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। তাল গাছের পাতা ও হোগলা পাতা দিয়ে বাবুই বাসা বুনে থাকে। সেই বাসা যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি মজবুত। শক্ত বুননের এই বাসা সহজে ছেঁড়া যায় না। অনেকে বাবুই পাখিকে তাঁতি পাখিও বলেন।

লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি, কমল নগর, রায়পুর,রামগঞ্জ উপজেলা এক সময় নানান জাতের পাখির কিচিরমিচির শব্দে সকাল বেলা গ্রামের বধূ বৃদ্ধা এমন কি কিশোর-কিশোরীদের ঘুম ভাঙতো। এখন আর আগের মত পাখি সচারাচর চোখে পড়ে না।   সরেজমিনে গিয়ে     কমল নগর উপজেলা তোরাবগঞ্জর লক্ষ্মীপুর ২৪ সংবাদ কর্মী আবদুর রহমান কাছে  জানা যায়  এইতো সেইদিনের কথা ক্লান্ত দুপুর বেলায় বাড়ির আশে পাশের বড় বড় গাছের নিচে যখন স্বস্তির জন্য বসতাম  কত রংবেরঙের পাখিরা আপন মনে গান শুনাতো।কত রকম পাখি আকাশে উড়িয়ে বেড়াতো। 
বক, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, বাবুই, টুনটুনি, চিল, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালীহাঁস, কোকিল, কাকসহ বিভিন্ন পাখিদের দেখা যেত।
বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, ঘুঘু, বাওয়াই, শালিক, টুনটুনি, কাঠ ঠোকরা, কোকিল, ডাহুক, ক্যাসমেচি, বাবুই, মাছরাঙা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া ও প্যাচাসহ অনেক পাখিকে আর দেখা যায়না।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পার্বতীনগর ইউনিয়নের সি এম আবদুল্লাহ  বলেন, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতির সঙ্গে জড়িত সেসব পাখিগুলোর ডাক ও সুর মানুষকে মুগ্ধ করতো সেই পাখিই ক্রমান্বয়ই হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষ করে দোয়েল পাখির এখন আর দেখাই মিলছে না।

সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন টিপুর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দোয়েল, ময়না, কোকিল, শালিক, চড়ইসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি গ্রামাঞ্চলের বিলে-ঝিলে, ঝোপে-ঝাড়ে, গাছের ডালে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনার ডালে বসে তার সুরের ধ্বনিতে মুগ্ধ করতো। এই পাখির কিচির-মিচির শীষ দেয়া শব্দ এখন আর কানে শোনা যায় না।     লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হোসাইন আহমেদ হেলাল দৈনিক সংবাদ সারাবেলা কে জানান এইতো সেদিনের কথা  সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশ গাছে, আমের ডালে, সজিনা গাছে, বাড়ির ছাদে যে পাখি সব সময় দেখা যেত সেই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না।

পাখি প্রেমিক  মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন   দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম ওই পাখি দেখতে পান না, তাছাড়া শিকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে বনাঞ্চল। তাই বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসেই বেশ কিছু প্রজাতির পাখি পালন করেছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম পাখি সম্পর্কে জানতে পারে।

তবে কম সংখ্যক টিয়া, ঘুঘু, কাক, মাছরাঙ্গা,  হোগা লালি ইত্যাদি পাখি শহর, গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েলসহ কোন রকমের পাখি  তেমন আর মানুষের চোখে পড়েনা। তাই পাখি প্রিয় অনেক সৌখিন মানুষ বাড়ির খাঁচায় বন্ধী করে পাখি পালন করতে দেখা যায়।  পাখি পালনকারী কাউন্সিলর মোস্তফা বলেন  বলেন, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

সচেতন মহল মনে করেছেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে ফসলি জমিতে উঠছে ঘরবাড়ি। তাছাড়া জনসংখ্যা প্রভাবেও কোথাও না কোথাও প্রতিদিন নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এতে গাছ কেটে বন উজাড় করে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তাই আগের মতো বনে জঙ্গলে তেমন পাখির দেখা মিলছে না।

লক্ষীপুর উপজেলা  প্রাণিসম্পদ  কর্মকর্তা মোঃ জোবায়ের হোসেন বলেন  , জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাখি মরে যাচ্ছে, আবার খাদ্য সংকট ও আবাসস্থল কমে যাওয়ায় পাখি বংশ বিস্তার করতে পারছে না, এতে কমে যাচ্ছে পাখি। তাই পরিবেশ রক্ষা জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.