× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

অরক্ষিত রাজধানীর লেক উদ্যান পার্ক, বাড়ছে খুন ও অপরাধ

হালিম মোহাম্মদ

২৬ মে ২০২৩, ১০:৪১ এএম

রাজধানীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমণ্ডি লেকের পাড়, কলাবাগান ক্লাব মাঠ ও শেখ রাসেল শিশু পার্কের পেছনের ওয়াকওয়ে বাড়ছে অপরাধ। অহরহ হচ্ছে খুন, ছিনতাই জুয়া খেলা এবং মাদক সেবন। ভোর বেলা এবং ক্ষানিকটা রাত হলেই শুরু হয়ে যায়, প্রকৃত অপরাধীরদের ধরতে না পারলেও থানা পুলিশ সম্ভাব্য লোকজনদের গ্রেফতারের পাশাপাশি রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ডায়বেটিক এবং রক্তচাপ মুক্ত থাকতে প্রতিদিন ভোরে প্রাতভ্রমনের জন্য অসংখ্য লোকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রমনাসহ বিভিন্ন পার্কে বের হন। সেখানে প্রাতঃভ্রমণ শেষে গন্তব্যে চলে যান। ভোরবেলা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সিফটিং কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়ে পার্ক এবং উদ্যান। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে পার্ক সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা। ইতোমধ্যে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে এবং পানি থেকে একাধিক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সকল ঘটনায় মামলা হলেও পার্ক সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা ধরা পড়ছে না।   

এদিকে রমনা পার্ক এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাদকসেবীদের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। দিনে দুপুরে পার্কে ভেতরে তারা মাদক সেবন এবং বিক্রি করছে। মাদকের উপসর্গ দেখা দিলে এরা জ্ঞান শক্তি হারিয়ে ফেলে। পার্কে বা উদ্যানে আসা দর্শনার্থীদের টাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পাশাপাশি মারধর ও নাজেহাল করে থাকে। 

অপরদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে পার্কের ভেতরে  হাঁটছেন লোকজন। কলাবাগান খেলার মাঠের পাশে অবস্থিত সিটি করপোরেশনের ময়লার ডিপো। তার পাশ দিয়ে লেকের প্রবেশমুখ। কলাবাগান ক্লাবের পেছন বরাবর লেকের মাঝখানে তিনটি ব্রিজের সংযোগস্থলে গোলচত্বর, ওই গোলচত্বরে ১০ থেকে ১৫ জনের একদল তরুণ যার যার মোবাইল ফোনে ব্যস্ত। তাদের কেউ কেউ অনলাইনে টাকা দিয়ে কার্ড (জুয়া) খেলছে। মাদক সেবন করতেও দেখা যায়। লেকের পাড়ে এটি নতুন কিছু নয়। লেকের আনাচে-কানাচে এই দৃশ্য প্রতিদিন দেখা যায়। শুধু তাই নয়, লেক এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা রয়েছে। অখচ টহল পুলিশ পাশেই অবস্থান করছে। 

ডিএমপির রের্কড থেকে জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে এবং চলতি বছরের জানুয়ারি ও মে মাসে ধানমন্ডি লেক থেকে পৃথক তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। লাশের সুরতহাল রির্পোট অনুযায়ী মরদেহের একাধিক স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল।  

প্রাতঃভ্রমণকারীরা বলছেন, লেকের ভেতরে পর্যাপ্ত সিসিটিভির ব্যবস্থা না থাকায় মরদেহগুলো কীভাবে লেকের পানিতে এলো, তা  শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ অবস্থায় ধানমন্ডি লেককে ঘিরে দিন দিন অপরাধ বাড়ছে। সন্ধ্যায় তো দুরের কথা। দিনের আলোয়ে লেকে ঘুরতে ভয় পাচ্ছেন তারা। 

ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোডের বাসিন্দা আবদুল লতিফ বলেন, অফিসের কাজ শেষে  প্রায় সময় আমাকে ধানমন্ডি লেকের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সময় পেলে লেকে একটু জিরিয়ে নেই। আজও বিকেলে লেকের মাঝে গোলচত্বরে বসেছিলাম। সেখানে প্রকাশ্যে কয়েকজন তরুণকে মাদক সেবন করতে দেখলাম। মাঝে মাঝে লেকে মানুষের লাশ পাওয়া যায়। এটাতো ভয় এবং আতঙ্কের। 

এর আগেও গত বছরের ১৭ এপ্রিল রাত সোয়া ৮টার দিকে ধানমন্ডি লেক পাড়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন দুই শিক্ষার্থী। একই বছরের ২২ অক্টোবর সন্ধ্যার পর কলাবাগান থানার ১৯/নর্থ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শাহাদত হোসেন ধানমন্ডি লেকে হাঁটাহাঁটির জন্য আসেন। পরে রাত আড়াইটার দিকে রবীন্দ্র সরোবর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনার পরদিন শাহাদতের স্ত্রীর বড় ভাই শফিউল আজম চৌধুরী বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ছিনতাইকারীদের আসামি করা হয়। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।  আগের বছরের ৩ জুন সন্ধ্যায় ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় তিন শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা।

ধানমন্ডি লেকে চলাচলকারী ডিঙি নৌকার ব্যবস্থাপক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে  দায়িত্ব পালন করে আসছেন আরিফ হোসেন শুভ। তার ভাষ্য, লেকের নির্দিষ্ট  এলাকায় তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত আছে। তিনি বলেন, লেকের সব জায়গা যে নিরাপদ তা বলবো না। রাতের বেলায় লেকের দক্ষিণ পাশে ও পুরনো জাহাজ বাড়ির সামনে প্রায়ই ছিনতাই হয়। সন্ধ্যার পর বা রাতে লেকপাড়ের ওয়াক-ওয়েগুলো পথচারীদের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়

ধানমন্ডি লেকের উন্নয়ন কাজের নকশাকারী স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, আমরা যেভাবে লেকটি নিয়ে পরিকল্পনা করেছিলাম, সে অবস্থা এখন আর  নেই। লেক হচ্ছে বিনোদনের জায়গা। সেটি বর্তমানে বাণিজ্যকরণ হয়েছে। পুঁজিবাদী করা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, লেকের মাধ্যমে যা আয় হবে, সবটুকু লেকের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হবে। এখন আর এ নীতিতে চলছে না। লেক পরিচালনা করছে সিটি করপোরেশন। অথচ এখানে তাদের নিজস্ব কোনও সিকিউরিটি নেই। সেখানে অপরাধ তো বাড়বেই।

এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানার ওসি মো. ইকরাম আলী মিয়া সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, লেকটি দেখভালের দায়িত্বে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। থানা এলাকা হিসেবে আমরা আছি নিরাপত্তার দায়িত্বে। ধানমন্ডি লেকে চারদিক থেকে অবাধে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। সুতরাং, যে যেখান দিয়ে পারে, সেভাবে ঢুকছে। ফলে অপরাধীরা সুযোগটি নিচ্ছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে যে মরদেহগুলো লেক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলোকে আত্মহত্যা বলে আমরা ধারণা করছি।

ধানমন্ডি থানার পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল বাশার সংবাদ সারাবেলাকে জানান, পর্যাপ্ত ফোর্স প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত  রবীন্দ্র সরোবরে দায়িত্ব পালন করে। লেকে কিছু উঠতি বয়সী স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এসে বেশিরভাগ সময় ঝামেলা বাধায়। সামান্য কিছু নিয়ে দুই পক্ষের মারামারি লেগে যায়। ওদের জন্য মাঝে মধ্যে লেকে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তবে আমাদের নির্দেশ দেওয়া আছে, স্কুল ড্রেস পরা কোনও শিক্ষার্থীকে যেন লেকে অবস্থান করতে না দেওয়া হয়। তবে রাতে লেকের ভেতরের দিকে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা থাকে না।  সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লেকে কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।

ডিএমপির রমনা বিভাগের ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. ইহসানুল ফিরদাউস বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, রায়েরবাজার, লালবাগ ও বছিলা থেকে কিছু উচ্ছৃঙ্খল তরুণ আসে, মূলত তারাই লেকের বাইরে ও ভেতরে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে এ চক্রের অনেককে আমরা গ্রেফতার করেছি। অপরাধ দমনে আমরা অভিযান চলমান রেখেছি।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.