× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চাষীদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে নওগাঁর আম

নওগাঁ প্রতিনিধি

০৫ এপ্রিল ২০২২, ১৪:২০ পিএম

নওগাঁয় আম গাছে মুকুল এসেছে। ছবি: সংবাদ সারাবেলা

কৃষিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁর আমচাষিরা। চৈত্রের কড়া রোদে সোনালী রাঙ্গা মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে নওগাঁর আমগাছগুলো। কোথাও কোথাও বাঁধতে শুরু করেছে গুটি। আম বাগান পরিচর্যায় কর্মব্যস্ত চাষীরা।

এবার শীতের কুয়াশা পায়নি নওগাঁর আমের মুকুল। আবহাওয়া রয়েছে অনুকূলে। মুকুল পরিমাণে বেশি হলেও গুটি হচ্ছে প্রচুর। আর আম পাকবে রমজানের পরে। তা ছাড়া কমে এসেছে করোনার প্রকোপ। ফলে বাজারে চাহিদা থাকবে তুলনামূলক বেশি। সব মিলিয়ে এবার আমচাষীদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে নওগাঁর আম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। এর মধ্য আম্রপালি ৭৬ শতাংশ, বারি-৪ আম ৬ শতাংশ, আশ্বিনা ৭ শতাংশ, ফজলি ৩ শতাংশ, ল্যাংড়া ৩ শতাংশ, ক্ষিরসাপাত ২ শতাংশ, গৌড়মতি ১ শতাংশ, কাটিমন ১ শতাংশ, অন্যান্য জাতের ১ শতাংশ জমিতে আমের বাগান গড়ে উঠেছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। 

এছাড়াও গতবারের চেয়ে জেলায় এবার ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন অন্য যে কোনও সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে নওগাঁয় আম বাগান ছিল ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১২ টন। উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯০০ টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত ২০২০-২১ মৌসুমে আমবাগান ছিল ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫০ টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৫৭০ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

চলতি মৌসুমে উপজেলা ভিত্তিক আম চাষের পরিমাণ হলো- সদর উপজেলায় ৪৪৫ হেক্টর, রানীনগরে ১১০, আত্রাইয়ে ১২০, বদলগাছীতে ৫২৫, মহাদেবপুরে ৬৮০, পত্নীতলায় ৮ হাজার ৮৬৫, ধামইরহাটে ৬৭৫, সাপাহারে ১০ হাজার, পোরশায় ১০ হাজার ৫২০, মান্দায় ৪০০ ও নিয়ামতপুরে ১ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে।

জেলার বিভিন্ন আম বাগান সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আম বাগানগুলো মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে। চারিদিকে এখন শুধু দৃশ্যমান সোনালি মুকুলের আভা। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে প্রতিটি গাছ। আবার কিছু কিছু গাছে এরই মধ্যে আমের গুঁটি আসতে শুরু করেছে। ভালো ফলনের আশায় গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পারছেন বাগান মালিকরা। এ বছর আমের ফলন নিয়ে আশাবাদী জেলার কৃষক, ব্যবসায়ী ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। আবহাওয়া ভালো থাকলে চলতি বছর আমের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।

এদিকে, আমের ভালো ফলন পেতে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিস।

জেলার পোরশা উপজেলার আম বাগান মালিক মাসুদ রানা জানান, এবার গাছে বিপুল পরিমাণ মুকুল এসেছে। কিছু কিছু গাছে গুঁটিও আসতে শুরু করেছে। তাই ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আবহাওয়াটা একটু ভালো থাকলেই হয়।

সাপাহারে কুচকুড়িলিয়া গ্রামের আম বাগান মালিক মুন বলেন, ‘আমি গত বছর ১২ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছি। এবার নতুন করে আরও ১০ বিঘা জমিতে আম্রপালি, ক্ষিরশা, ল্যাংড়া জাতের আম গাছ লাগিয়েছি। বাগানের সব গাছে মুকুল আসছে। এই সময়ে গাছে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা ও মুকুল ভালো থাকার জন্য কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এছাড়া গাছের গোরায় গর্ত করে সেখানে সার দেওয়া।’

সাপাহারের বরেন্দ্র এগ্রো ফার্মের সোহেল রানা বলেন, ‘১০৭ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আমের বাগান তৈরি করেছি। গতবারের তুলনায় এবার সবার বাগানে আম মুকুল অনেক ভালো এসেছে। গাছে মুকুল যেন ঝড়ে না পরে সেজন্য সার, কীটনাশক ও সেচ দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ১০০০ আম্রপালি জাতের গাছের আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হবে বিদেশে আম রফতানির জন্য। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য হিসেবে আম উৎপাদনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে সচেতন করে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাঙালি বা ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণ যেসব দেশে থাকেন, সেসব দেশে এই বাগান থেকে আম রপ্তানি হয়ে থাকে। এর বাইরে উন্নত দেশগুলোতে আম রপ্তানির বিষয়ে সরকার আরও উদ্যোগী হবেন।’

একই উপজেলার নোচনাহার গ্রামের আমচাষী মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘৩৫ বিঘা জমি বিভিন্ন মেয়াদি লিজ নিয়ে আম বাগান করেছি। তাতে আম্রপালি, বারি ফোর, গৌড়মতি ও আশ্বিনা জাতের ৩ হাজার ৫০০ অধিক আম গাছ রয়েছে। এবারে গাছে যথেষ্ট পরিমাণ আমের মুকুল এসেছে। মুকুল রক্ষায় গাছের পরিচর্যায় বিভিন্ন ধরনের সুষম খাবারসহ সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামসুল ওয়াদুদ জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আম গাছে মুকুল বেশ ভালো আসছে। এই সময়ে সাধারণত হুপার পোকার আক্রমণ করে। এছাড়া বিচিং পদ্ধতিতে সেচ না দেওয়ার কারণে মুকুল শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে। এগুলো থেকে রক্ষা পেতে ও ফলন ভালো পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমচাষীদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমচাষীরাও সে মোতাবেক গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারে আমের ভালো ফলনের আশা করা হচ্ছে। এবছর আমচাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন অন্য যে কোনও সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে আম রফতানির চিন্তা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে স্বল্প পরিসরে আম বিদেশে রফতানি হয়েছিল এই জেলা থেকে। কিন্তু এবার আম রফতানির সকল নির্দেশনা মেনে বড় পরিসরে আম বিদেশে রফতানির চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.