আমিরুন বেগম
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শিকারীপাড়া ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামের মৃত হোসেন আলীর স্ত্রী আমিরুন বেগম। দুই ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে একসময় সংসারের ভার কাঁধে নিয়ে সন্তানদের লালন পালন করেছেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। ছেলেরাও এখন প্রতিষ্ঠিত। তবে এখন সংসারের বোঝা হয়ে গেছে গর্ভধারিনী মা। এখন স্ত্রীর কথায় সংসারে আর রাখতে পারছেন না মাকে। একদিকে ছেলের অত্যাচার অন্যদিকে ছেলের বউয়ের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি ছেড়েছেন এক বছর আগে। একসময় ছেলেরা খচর দিলেও দিলেও বছর খানেক ধরে মায়ের দায়িত্ব আর নিতে পারবে না বলে জানান দুই ছেলে। সেই সাথে ছেলের বউরাও একই সাথে শাশুড়িকে বাড়ি থেকে বিদায় করতে এক হয়ে যায়। অত্যাচার, নির্যাতন আর কটু কথা সহ্য না করতে পেরে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেন তিনি।
চার সন্তানের জননী আমিরুন বেগম। বয়স ৭০ এর কোঠায়। একদিন সংসারের চাবির দায়িত্ব ছিল যার কাঁধে। তিনি এখন বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা। অতীত এখন কেবলই স্মৃতি তার কাছে। সন্তানের সুখের জন্য জীবনের সব কিছু বিলিয়ে দিলেও সেই মমতাময়ী মায়ের ঠাঁই হয়নি সংসারে। এক বেলা এক মুঠো খাবারের দায়িত্ব রাজি নন ছেলে সন্তানরা। ছেলে মেয়ে সবাই থাকলেও তার দিন কাটছে বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালে বন্দী এক কোণে। গেল এক বছর আগে সন্তানদের দেওয়া কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন তিনি। শেষ বয়সে ছেলে মেয়ে আর নাতি নাতনীর সাথে একসাথে বসবাস করার ইচ্ছা থাকলেও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তিনি এখন বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা। আজও তিনি সন্তানকে লালন পালন করার কথা ভুলতে পারেননি। কেবল বয়সের অপরাধেই কি তাকে স্বজনদের থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে নির্মম বাস্তবতা। এমন প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই তার কাছে।
চোখে মুখে বয়সের ভাজ। অন্তহীন সময়ের বেড়াজালে যেন বন্দী এরা। এখন শুধু পরপারের হাতছানির অপেক্ষা। এই বাবা মায়েরাই একসময় তাদের সন্তানকে মানুষ করতে কতই না ছুটাছুটি করেছেন। তাদের বড় করতে দিনকে করেছেন রাত। রাতকে দিন। সংসারে দাপিয়ে বেড়ানো এই বাবা মায়েরা এখন যেন সন্তানের কাছে ঝড়ে পড়া শুকনো ফুলের মতো। সন্তানের ঘরে জায়গা হয়নি মায়ের।
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের কান্দাবাড়িল্যা গ্রামে সম্মান সাহাবী নামে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলেছেন আলহাজ্ব আক্কাচ উদ্দিন মোল্লা। বেসরকারিভাবে আশ্রয়হীনদের বিনামূল্যে ভরণপোষণের জন্য গড়ে উঠেছে এই বৃদ্ধাশ্রমটি।
সত্তরোর্ধ্ব বয়সী এই বৃদ্ধা থাকেন সম্মান সাহাবী নামের এই বৃদ্ধাশ্রমে। নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে কান্দাবাড়িল্যা গ্রামে এই বৃদ্ধাশ্রমের অবস্থান।
বৃদ্ধাশ্রমের মূল ফটকে বসে কথা হয় সত্তরোর্ধ্ব বয়সী বৃদ্ধা আমিরুন বেগমের সঙ্গে। তার স্বামী হোসেন আলী মারা গেছেন ৮ বছর আগে। পরিবারে রয়েছেন দুই ছেলে। কিন্তু তারা মায়ের দেখাশোনা না করায় আমিরুন বেগম ভিটেমাটি ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে এসে মাথা গোঁজার আশ্রয় পেয়েছেন।
সম্মান সাহাবী বৃদ্ধাশ্রমটির পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বিশ্বাস জানান, আশ্রয়হীনদের জন্য সবসময় কাজ করবেন তারা।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh