প্রতীকী ছবি
দিবাকর যেমন
তার অফুরন্ত দীপ্তরশ্মি বলে সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত ও উদ্ভাসিত করে, ঠিক তেমনি কবি গুরু
রবীন্দ্রনাথও (১৮৬১-১৯৪১) বাংলা সাহিত্যকাশকে আলোকিত ও উদ্ভাসিত করেছেন। রবীন্দ্রনাথের
আবির্ভাব বাঙালি জাতির জন্য চরম সৌভাগ্যের ও এক পরম বিস্ময়কর ব্যাপার। ভাষার জন্য,
সাহিত্যের জন্য, সর্বোপরি বাঙালি জাতির জন্য এমন স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইতিপূর্বে
আর কখনও ঘটেনি। তার সাহিত্য সৃষ্টি দেশ-কাল-পাত্রের সংকীর্ণ গণ্ডি অতিক্রম করে এক সার্বজনীন
রূপ ধারণ করে বিশ্বসাহিত্যকে করেছে প্রশস্ত ও বিকশিত।
‘সন্ধ্যাসঙ্গীত’
হতে কবির কাব্য জীবন আরম্ভ হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করেন, এর কারণ এই নয় যে, ‘সন্ধ্যাসংগীত’
কবির পরিণত শক্তির রচনা। ‘সন্ধ্যাসংগীত’ হতে পরবর্তী ৪/৫ খানি কাব্যের মূল্য আমাদের
কাছে যত না কাব্য হিসেবে তার চেয়ে বেশি গ্রহণীয় ও মূল্যবান কবি জীবনের ইতিহাস রূপে।
রবীন্দ্রনাথের
যখন পূর্ণ যৌবন সে সময়ে লেখা কবিতা গুচ্ছ একত্রিতভাবে ‘মানসী’ নামে পুস্তাকারে ১২৯৭
সালের ১০ পৌষ প্রকাশিত হয়। অধ্যাপক সুরেন্দ্র নাথ দাসগুপ্ত ‘মানসীকে’ রবীন্দ্রনাথের
কবি প্রতিভার উন্মেষ বলে উলে¬খ করেছেন। অতি বিশাল রবীন্দ্র কাব্যের পৌর্বাপর্ব বিচার
বিশে¬ষণ করে এবং একটি নির্দিষ্ট ধারায় তার প্রতিভার ক্রম পরিণাম লক্ষ্য করে ‘মানসী’
শেষ থেকেই ওই বিশিষ্ট প্রতিভার উন্মেষ বলে মনে করা হয়। ‘মানসী’ রবীন্দ্রনাথের পরিণত
শক্তির কাব্য, কিš‘ তার বিশিষ্ট শক্তির কাব্য নয়।
বিশিষ্ট কবি
তিনি ‘সোনারতরী’তে এসে উপস্থিত হন, কিন্তু যার সূচনা ‘সন্ধ্যাসংগীত’। কবির ‘সন্ধ্যাসংগীত’
হতে ‘মানসী’ পর্যন্ত পাঁচখানি কাব্যের একটি পরীক্ষামূলকতা ভাব আছে। সে পরীক্ষা তাঁর
বিশিষ্ট শক্তির স্বরূপ অন্বেষণে। একেিদক ‘সন্ধ্যাসংগীত’ (১২৮৮ বঙ্গাব্দ) ও ‘প্রভাত
সংগীত’ (১২৯০ বঙ্গাব্দ) আবার অন্যদিকে ‘ছবি ও গান’ (১২৯০বঙ্গাব্দ) ‘কড়ি ও কোমল’ (১২৯৩
বঙ্গাব্দ)। আর মানসীতে (১২৯৭ বঙ্গাব্দ) এসে দু’ কাব্যরীতির যুক্তবেণী গ্রথিত হয়েছে।
মানসী কাব্যে
রাজা রবীন্দ্রনাথ ছন্দের উপর তার অধিকার কায়েমিভাবে সাব্যস্ত করে নিয়েছেন। ইউরোপীয়
ছন্দের অনুরূপ নানা ধরনের নব নব ছন্দ তিনি সৃষ্টি করলেন। মধুসূদনের পক্ষে যেমন অমিত্রাক্ষর,
কবিগুরুর পক্ষে তেমন ‘মুক্ত পয়ার’। ‘মানসী’ কাব্যে রবীন্দ্রনাথ তার পূর্ববর্তী কবি
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও হেমচন্দ্রের অনুবর্তী হয়ে কবিতার স্ট্যাঞ্জ বিভাগ অবলম্বন করলেন।
এর পূর্বে বাংলার খ্যাতিমান কবিগণও অক্ষরগুণে কবিতা রচনা করতেন। গানের রাজা রবীন্দ্রনাথই
প্রথমবারের মতো মানসী কাব্যের মধ্যকার কবিতার মাত্রা গুনে, কানে শুনে তাল বোধের দ্বারা
কবিতা রচনা আরম্ভ করেন। এটি বাংলা ছন্দে তার একটি বিশেষ অবদান।
‘মানসী’ কাব্য
ছন্দের হতেই কবি মুক্তাক্ষরের পূর্ব স্বরকে
দু’মাত্রা ধরে কবিতা রচনা করতে লাগলেন। এ সম্পর্কে কবির নিজের বক্তব্য, ‘আমার রচনার
এ পর্বেই যুক্ত অক্ষরকে পূর্ণমূল্য দিয়ে ছন্দকে
নতুন শক্তি দিতে পেরেছি। ‘মানসী’ কাব্যেই ছন্দের নানা খেয়াল দেখা দিতে শুরু করেছে।
কবির সঙ্গে যেন এক শিল্পী এসে যোগ দিল।
মানসী বস্তুরূপ
হতে বস্তুস্বরূপে, কায়াময় সত্য হতে ছায়াময় সত্যে, কালীদাসীয় মানস হতে সূরদাসীয় অর্থাৎ
চিত্ররীতি হতে সঙ্গীত রীতিতে সংক্রমের কাব্য। ভাবের দিক হতে মানসী কাব্যের কবিতাগুলোকে
আমরা মোটামুটিভাবে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত কতে পারি। যেমন: ১) প্রেমের কবিতা, ২) দেশ সম্বন্ধীয়
কবিতা ও ৩) প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা ও অমোঘ নিয়তির সম্বন্ধে কবিতা।
‘তোমারেই
যেন ভালোবাসিয়াছি/শতরূপে শতবার/জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার’
মানসী কাব্যে
এসে তার প্রেমের কবিতার একটি শান্ত সমহিত ভাব এসেছে। পূর্বেকার কাব্যের উদ্দাম-উচ্ছ্বাস
অনেক খানি সংযত হয়ে এসেছে। অথচ যৌবনের আনন্দ আবেগ কিছু মাত্র হ্রাস পায়নি। মানসীর প্রেমের
কবিতাগুলোর মধ্যেই নর-নারীর পরস্পরের আকর্ষণের সুসঙ্গতি হয়েছে। একদিকে মানবীয় ভাবে
কবিতাগুলো চিত্তাকর্ষক, আর অন্যাদিকে সংযত শালীনতায় তারা হৃদয় প্রসাদন। ‘ইংরেজ চেয়ে
কিসে মোরা কম।/আমরা যে ছোটো সেটা ভারি ভ্রম/আকার প্রকার রকম সকম/এতেই যা কিছু ভেদ।’
মানসী কাব্যের মাধ্যমেই প্রথম কবিদৃষ্টি দেশের ত্রুটি ও দেশবাসীর চরিত্রের গলদ দেখতে
আরম্ভ করেন। মানসী কাব্যেও তিনি দরদী হতে পারেননি লঘু বিদ্রুপের দ্বারা তিনি দেশের
ত্রুটি সংশোধনের চেষ্টা আরম্ভ করলেন মাত্র। এ কাব্যের মাধ্যমে দেশ ও সমাজের অবস্থার
দিকে, দেশবাসীর মানসিক দুর্গতির দিকে কবি প্রথমবারের মতো নজর দেন।
‘মানসী’ কাব্যে
এসে রবীন্দ্র কাব্যে প্রথম প্রকৃতির স্থানিক মূর্তির পরিচয় মেলে। এর পূর্বে যে প্রাকৃতিক
চিত্র তিনি অংকিত করেছিলেন তা প্রীতিজাত বটে, কিন্তু তেমন অভিজ্ঞতা জাত নহে।’ ‘পাশাপাশি
এক ঠাঁই দয়া আছে দয়া নাই/বিষম সংশয়/ একি দুই দেবতার দ্যুত খেলা অনিবার/ভাঙা গড়াময়?।
চিরদিন অন্তহীন জয়পরাজয়।
মানসী প্রকৃতি
সম্বন্ধীয় কবিতাগুলোর মধ্যে একটা ভয়মিশ্রিত সম্ভ্রমের ভাব আছে, আর আছে গভীর রহস্যময়
চিত্র পরস্পর। মানসী কাব্যেই প্রথম কবির দৃষ্টিতে মমতাহীন নিষ্ঠুর দিকটি ধরা পড়ে। মানসীতে
এসেই কবি উপলব্ধি করেছিলেন যে, যিনি শিব, তিনিই রুদ্র।
মানসী কাব্য
গ্রন্থের রবীন্দ্রনাথের অখণ্ড সৌন্দর্য চেতনা ও নিষ্কাম প্রেমানুভূতির যে ঘোষণা করেন
তা লক্ষ্য করা যায় এ কাব্য গ্রন্থের বিখ্যাত কবিতা ‘নিষ্ফল কামনা’য়। যেমন ঃ ‘এ চির
জীবন তাই আর কিছু কাজ নাই/রচি শুধু অসীমের সীমা/আশা দিয়ে ভাষা দিয়ে তাহে ভালোবাসা দিয়ে/গড়ি
তুলি, মানসী প্রতিমা।’
মানসীতে ভাষা
ও প্রকাশভঙ্গী যেন আপনা থেকেই রসমূর্তি লাভ করেছে। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে অশিথিল বন্ধ রীতি
নৈপুণ্যে ভাষা সাধারণ মানবীয় সুখ দুঃখের বিবৃতি ক্ষমতা মাত্র অতিক্রম করে অতীন্দ্রিয়
ব্যঞ্জনাময় সামর্থ্য লাভ করেছে। ‘কড়ি ও কোমল’ পর্যন্ত কোথাও কোথাও ভাষার মধ্যে আড়ষ্টতা
আছে। কিন্তু মানসীতে এসে তা থেকে অনেকটা পরিমার্জিত রূপ লাভ করে। উচ্ছ্বাসময়তা থেকে
মুক্তি লাভ করে রূপ ও রসের প্রগাঢ়ত্বের মধ্যে মানসীর কয়েকটি কবিতা অপরূপ প্রসন্নতা
লাভ করেছে। যা মানসীর পূর্বের কাব্যগুলোতে তেমনটি দেখা যায় না। সত্যি কথা বলতে কি রবীন্দ্রনাথের
কাব্য ভাষার প্রধান গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য মানসীর মাধ্যমেই জন্মলাভ করে।
‘রামায়নের’
কবি বাল্মীকি ও ‘মেঘদূতের’ কবি কালিদাসের কবিত্ব শক্তি লাভ সম্বন্ধে যে কিংবদন্তি প্রচলিত
আছে তার মধ্যে এ মহৎ শিল্প তত্ত্বটি নিহিত যে, দিব্য কবিত্ব ভাব। রবীন্দ্রনাথের দিব্য
শক্তি লাভও এ ধরনের আবির্ভাব। এ আবির্ভাবকে চূড়ান্ত বিশে¬ষণ করে বুঝানো সম্ভব নয়।
‘প্রভাত সঙ্গীতে’র
অভিজ্ঞতা যদি রবীন্দ্রনাথের জীবনে না ঘটতো তাহলেও তিনি মহৎ কবি হতেন, কিন্তু দিব্য
দৃষ্টি সম্পন্ন কবি হতেন কিনা ও বিশ্ববোধ ঘটতো কিনা সন্দেহ। প্রভাত সঙ্গীতের প্রধান
কবিতা ‘নির্ঝরের স্বপ্নভগ্ন’ ও ‘প্রতিধ্বনির’ মধ্যে বীজ রূপে রবীন্দ্রকাব্যের তত্ত্ব
নিহিত। নির্ঝরের গতিময় বিশ্ব এবং প্রতিধ্বনির ছায়াময় বিশ্ব এ দুইয়ে মিলে রবীন্দ্রকাব্যের
পূর্ণতত্ত্ব। ‘ছবি ও গান’ ও ‘কড়ি ও কোমল’ এ এসে কবির অভিজ্ঞতা যেন কোন দূর আকাশ হতে
বাণীর বিদ্যুত দীপ্তিতে দিব্য দৃষ্টি বহন করে কবির মধ্যে যেন দুটি সত্তা বাস করে। একটি
অনুপ্রেরণা নির্ভর কবিসত্ত্বা অপরটি শিল্পী সত্তা। মূলে আছে নিছক শিল্প সৃষ্টির তাগিদ।
‘সন্ধ্যাসঙ্গীত’ ও ‘প্রভাত সঙ্গীত’ এ দু’খানি
কাব্যের অনুপ্রেরণা যদি আসে বাহির হতে তাহলে ‘ছবি ও গান’ ও ‘কড়ি ও কোমল’ কাব্যদ্বয়ের
প্রেরণা এসেছে কবির অন্তর হতে। সে শিল্পের একমাত্র উদ্দেশ্য সৌন্দর্য সৃষ্টি- ‘মরিতে
চাহি না আমি সুন্দর ভূবনে/মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।’ শুধু সৌন্দর্য সৃষ্টি নয়,
সুন্দর ভুবনের সৃষ্টি। সর্বজনের অভিজ্ঞতা কেবল সর্বজন গ্রাহ্য ভাষাতেই প্রকাশ সম্ভব।
পূর্ববর্তী কাব্যদ্বয়ে ‘সন্ধ্যাসঙ্গীত’ ও ‘প্রভাত সঙ্গীত’ ছিল কেবল স্বকীয় জগতভাব প্রকাশের
ই”ছা । কিš‘ পরবর্তী কাব্যদ্বয়ে (‘ছবি ও গান’ ও ‘কড়ি ও কোমল) মূখ্যত ঃ পরকীয়া জগতভাব
প্রকাশ পেয়েছে। অপরপক্ষে মানসী কাব্যের মূল সুর প্রেম ও প্রকৃতি।
কবি ও সমালোচক
বুদ্ধদেব বসু মানসীকে সমস্ত রবীন্দ্র কাব্য সাধনার অনুবিশ্ব বলে অভিহিত করেছেন। মানসী
কাব্যে পরিণত শক্তির কবিতা থাকা সত্ত্বেও ইহা রবীন্দ্রনাথের পরীক্ষা পর্বের শেষ কাব্য।
পরীক্ষা উত্তীর্ণ পর্বের আদি কাব্য নহে। মানসীতেই এসে একটি পথের শেষ, মানসীর প্রারম্ভে
চিত্ররীতি ও পরিণামে সঙ্গীত রীতি। তার এক কোটিতে মেঘদূত অন্য কোটিতে সুরদাসের প্রার্থনা।
এ কাব্যে এসে কবির সীমা টানার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। মানসী’র কবিতা কোন নির্দিষ্ট স্থানের
মধ্যে আবদ্ধ নয়, বিশেষত এ কাব্যে এসে ছন্দে স্বাধীনতা আসাতে রচনা রীতিতে নুতন শক্তি
আসায় পূর্বতন রচনা ধারা থেকে স্বতন্ত্র একটা কাব্য রূপের বহিঃপ্রকাশ। এ কাব্যে এসে
একটা উদার উন্মুক্ততা ও কল্পনার অকৃত্রিম বিশালতা উপলব্ধি হয়।
মানসীতে কবির
প্রকাশ সামর্থ সুনির্দিষ্ট হয়েছে। তার চিন্তাশক্তি পরিপুষ্টি হয়েছে। তিনি দেশের অতীত,
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিষয়সমূহ সুনিপুণভাবে এবং
সমতার সঙ্গে চিত্রিত করেছেন। কবি এ কাব্যে এসে আত্মপত্যয় লাভ করেছেন। এ সময় থেকে কবি
তার রচনার তারিখ নির্দেশ করতে আরম্ভ করেন। মানসী কাব্যে এসে কিব দক্ষস্রষ্টা হয়ে ওঠেন।
সাহায্যকারী
পুস্তক সমূহ: ১) রবীন্দ্র জীবনী (১ম খণ্ড)- প্রভাত কুমার মুখপাধ্যায় ২) রবীন্দ্র কাব্য প্রবাহ - প্রমথ নাথ বিশী ৩) কবি
রবীন্দ্রনাথ- বুদ্ধদেব বসু ৪) রবি রশ্মি- চারু চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ৫) সংস্কৃত কথা
- মোতাহের হোসেন চৌধুরী ৬) রবীন্দ্রনাথ কবি
ও দার্শনিক - মনোরঞ্জন জানা ও ৭) বক্তৃতামালা-
ড. আবু হেনা মোস্তাফা কামাল।
লেখক: নাট্যকার,
প্রবন্ধকার ও সংগঠক। পরিচালক, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার । সভাপতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, কেন্দ্রীয় কমিটি।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh