২০০৪ সালে রাঙামাটির নানিয়া চর উপজেলার গিলছড়ি ইউনিয়নের দুর্দগম ভুইয়াদাম এলাকায় উপজাতি পরিবারে জন্ম রুপনা চাকমার। জন্মের আগেই হারায় বাবা মানি চাকমাকে। দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করে মা কালা সোনা চাকমা। পাহাড় জংলা বেষ্টিত দুঃখ কষ্টের জনপথ পেরিয়ে আজ যেন চাঁদের আলোর মতন উজ্জল হয়ে জ্বলছে। সদ্য সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়ন সেরা গোল কিপার রুপনা চাকমার। ভুইয়াদামের গ্রামের বাড়িতে চলছে আনন্দ মহাউৎসব। আনন্দে চোখের কোনে ভাসছে আনন্দ অশ্রু মা কালা সোনা চাকমা’র।
এশিয়ার সেরা গোল কিপার খ্যাত রুপনা চাকমা জাতীয় দলে নিজেকে সেরা হিসেবে প্রতিষ্টিত করেছে। দেশ বিদেশে খেলছে নিয়মিত। এর আগে খেলার সুযোগ হয়েছে দেশের সেরা নারী ফুটবল ক্লাব বসুন্ধরা কিংস ক্লাবে। রুপনা চাকমার এখন সোনার জীবন। এমন আলো ঝলমলে স্বপ্নের জীবনে আসতে কত সংগ্রাম কত দুঃখ কষ্ট যে লুকিয়ে আছে দুর্গম পাহাড়ের যেন দুর্দান্ত এক গল্প। যে গল্পের প্রতিটি শব্দ থেকে জীবন চলার প্রেরণা পাওয়া যায়। গ্রামের হাচাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভর্তির পর নানিয়া চর উপজেলা পর্যায়ে খেলতে গিয়ে তার অনবদ্য ফুটবল শৈলী নজরে আসে শিক্ষক বীর সেন চাকমার। তৃতীয় শ্রেনী পড়ার সময় তার শিক্ষক তাকে গাগড়াতে নিয়ে যান। গাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির পর গোল কিপারের প্রশিক্ষণ দেন শান্তি চাকমা। তার অদম্য শক্তি সাহস ও কঠিন পরিশ্রমের ফলে একদিন আর্ন্তজাতিক অনুর্ধ্ব ১৯ নারী দলে ডাক আসে। ২০১৬ সালে সর্ব প্রথম অভিষেক হয় জাতীয় নারী ফুটবল দলে। ছোট্ট বেলা থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি দারুণ আগ্রহ দেখা যায় রুপনার মাঝে। রুপনার মা কালা সোনা চাকমা বলেন,বল খেলার প্রতি এতটাই আগ্রহ ছিলে যে একদিন প্রচন্ড জ¦রে আক্রান্ত হলো কিন্তু মাঠে যেতে ভুলল না। জ্বর নিয়েই খেলতে নামে। তার ফুটবল খেলার কাছে আমরা হেরে গেছি। এখন আমার মেয়ে দেশের জন্য বিরাট বিজয় ছিনিয়ে এনেছে তাই আমিও খুব খুশি। আমরা গর্ববোধ করি।
তার ফুটবল খেলার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে ছিলো তার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা। তাদের মাধ্যমে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব আন্তঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্ণামেন্টে পা রাখে রুপনা। ধীরে ধীরে উপরের সিড়ি বেয়ে উঠা। রুপনা একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন খেলার শুরু থেকেই গোল কিপারের কিপিং পজিশন দারুণ পছন্দ ছিলো আমার। টিভিতে খেলা দেখতাম গোল কিপাররা কত সুন্দর করে বল ধরে। আর সাথে সাথে মাঠের চারদিক থেকে হাজার হাজার করতালি ভেসে আসে। সেই করতালি আমাকে এত দূর আসতে সাহায্য করেছে।
রুপনার উচ্চতা একজন আদর্শ গোল কিপারের উচ্চতার চেয়ে কিছুটা কম থাকায় মাঠের ভিতরে বাহিরে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে নানা অপমান অপবাদ। সেই অপবাদের মুখে কলুপটিলা ঢেলে দিয়ে মাত্র ৫ ফুট উচ্চতা নিয়ে উঠে এলো অনেক উচ্চতায়। রুপনা চাকমা আজ হলেন দেশ সেরা এবং কি এশিয়ার সেরা গোল রক্ষক। তার চেয়ে বেশি উচ্চতা নিয়ে অনেকেই পড়ে আছে রুপনার অনেক পিছনে। কোচ গোলাম রব্বানী বলেন উচ্চতা নিয়ে কোন তর্ক বিতর্ক করার মানে নেই কারণ রুপনার চেয়ে বেশি উচ্চতা সর্ম্পন্ন অনেক খেলোয়াড় বারবার গোল হজম করছে। আর এদিকে রুপনা দিন দিন ভালো করছে। সাফ এশিয়া কাপে প্রতিটি খেলায় বাংলার বাঘিনীর মতই গ্রাস করেছে বিপক্ষের প্রতিটি বল। দেশের জন্য বয়ে আনলেন মহা বিজয় নিশান। পাচ্ছেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর পুরস্কার।
গত মঙ্গল বার রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান ভুইয়াদাম রুপনার গ্রামের বাড়ি যান এবং তার পরিবারের কাছে ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকার চেক উপহার দেন। সেই সাথে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর উপহার হিসেবে একটি পাকা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি ভুইয়াদাম এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য একটি ব্রিজ করে দেয়ার কথা ব্যক্ত করেন।
দুর্দগম পাহাড়ের ভাঙ্গা কুড়ে ঘরে বেড়ে উঠা পাহাড়ি কন্যা আজ দেশের জন্য যে সম্মান বয়ে আনলো তা যেন এক ইতিহাস হয়ে থাকবে বাঙালির মনে। অনেক পুর¯কার আর প্রশংসায় ভাসছে পাহাড়ি ললনা বাংলার পাহাড়ি রাজকন্যা রুপনা চাকমা। প্রমান করেছে আরেক বার নারীরাও পারে। নারী শুধু হাতে চুড়ি পড়ে চুলায় ভাত রান্নার জন্য নয়। চুড়ি বালা পড়া হাত যে ছিনিয়ে আনতে পারে মহাবিজয় তা দেখিয়ে দিয়েছে। রুপনা চাকমার সাথে জীবন দিয়ে খেলেছেন অন্যরা সবাই। খেলায় নিজেদের মধ্যে ভালো বুজাপড়া থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা সময়ের ব্যবধান মাত্র। রুপনারা বাংলাদেশের ফুটবলকে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে সকলের প্রত্যাশা।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh