কাতারের রাজধানী দোহায় রোববার বিশ্বকাপের এবারের আসরের পর্দা উঠবে। ক্লাব ফুটবলে আলো ছড়ানো তরুণদের অনেকেই শোনাতে পারেন নতুনের আগমণী গান, হয়ে উঠতে পারেন ম্যাচের নির্ণায়ক, তাদের কয়েকজনকে নিয়ে এই আয়োজন।
দুসান ভ্লাহোভিচ, সার্বিয়া
ফিওরেন্তিনায় থাকার সময় পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসা; দলটির হয়ে ১০৮ ম্যাচে ৪৯ গোল করা এবং ৮ অ্যাসিস্টের পরিসংখ্যান দিয়ে। বর্তমানে ২২ বছর বয়সী এই তরুণের মধ্যে সার্বিয়ার আক্রমণভাগের অন্যতম ভরসা হয়ে ওঠার সব রসদই আছে মজুদ।
গত বছর ইউভেন্তুসে পাড়ি জমানোর পর শুরুটা ছিল একটু ধীরগতির। তবে চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে (৭ নভেম্বর পর্যন্ত) সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে খেলেছেন ১৫ ম্যাচ, গোল ৭টি। অনেকের চোখে ‘আক্রমণভাগে খুনি’ খেতাব পাওয়া এই তরুণ স্ট্রাইকারের ঝলকানিতে ঝলসে যেতে পারে যে কোনো প্রতিপক্ষই।
তাকেফুসা কুবো, জাপান
তাকে ডাকা হয় ‘জাপানের মেসি’ বলে। বার্সেলোনার যুব দলে বেড়ে ওঠা কুবো ২০১৯ সালে যোগ দেন বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদে। যদিও দলটির হয়ে কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি। ধারে অনেক ক্লাব ঘুরে বর্তমান ঠিকানা রিয়াল সোসিয়েদাদে।
জাপানের বয়সভিত্তিক দলগুলোতে খেলার পর সিনিয়র দলে অভিষেক ২০১৯ সালে। যদিও জাতীয় দলের হয়ে আহামরি কিছু করতে পারেননি এখনও। কিন্তু ২১ বছর বয়সী এই তরুণের স্কিল, গতি এবং ড্রিবলিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে সামান্যই। এবারের বিশ্বকাপে জাপান পড়েছে শক্ত গ্রুপে। ‘ই’ গ্রুপে আছে স্পেন, জার্মানি ও কোস্টা রিকা। তবে শক্তিশালীদের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে পারলে কুবোও হয়ে উঠতে পারেন বিশ্বকাপের উদীয়মানদের একজন।
জুড বেলিংহ্যাম, ইংল্যান্ড
যখন বয়স মাত্র ১৭ বছর, তখন থেকে বলা হয় ছেলেটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে শিহরণ জাগানো মেধাবী মিডফিল্ডার। বর্তমানে বয়স ১৯ বছর। এই তরুণকে নিয়ে ইউরোপের বড় দলগুলোর মধ্যে টানাটানি শুরু হয়ে যাওয়ার খবর প্রতিদিনই আসছে গণমাধ্যমে।
বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ইতোমধ্যে ৯১ ম্যাচ খেলে ১১ গোল করেছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন ১৯টি। ২০২০ সালে ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষিক্ত হওয়া এই তরুণ কাতার বিশ্বকাপে স্বাভাবিকভাবে থাকবেন কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের পরিকল্পনায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরতে মুখিয়ে থাকবেন বেলিংহ্যামও।
ইংল্যান্ড দলে আছে ফিল ফোডেনের মতো তরুণ মিডফিল্ডারও। ২২ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় এরই মধ্যে ম্যানচেস্টার সিটিতে কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার বিশ্বস্ত সেনানিদের একজন। অভিজ্ঞ হ্যারি কেইনের সঙ্গে আক্রমণভাগে জুটি গড়ে যে কোনো দলকে ধ্বসিয়ে দিয়ে তিনিও কাতারে হয়ে উঠতে পারেন উদীয়মান তারকাদের একজন।
রুবেন দিয়াস, পর্তুগাল
২০১৬ সালে ইউরো জয়ের পর পর্তুগালের জন্য সবচেয়ে জরুরি ছিল রক্ষণ দেয়াল পুননির্মাণ। পেপে, জোসে ফন্তে এবং ব্রুনো আলভেসরা চল্লিশের পথে থাকায় তরুণ ও তরতাজা ডিফেন্ডারের প্রয়োজন তারা মিটিয়েছিল দিয়াসকে দিয়ে। ২০১৮ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সী আন্তর্জাতিক অভিষেক। বর্তমানে বয়স ২৫ বছর। তারুণের দ্বীপ্তি যেমন আছে, অভিজ্ঞতাও আছে। পর্তুগাল কোচ ফের্নান্দো সান্তোসের বিশ্বকাপ দলে তাই অপরিহার্য সদস্যদের একজন তিনি।
ক্লাব ফুটবলেও ম্যানচেস্টার সিটির দুর্বার গতিতে ছুটে চলার পেছনে দারুণ অবদান দিয়াসের। লিগের অভিষেক মৌসুমে ফুটবল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভোটে সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি পাওয়া এই ডিফেন্ডার নিখুঁত ট্যাকল এবং বল চালাচালির দক্ষতা দিয়ে কাতার বিশ্বকাপেও হয়ে উঠতে পাবেন পর্তুগালের রক্ষণের নয়নমণি।
আনসু ফাতি, স্পেন
এরই মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসাবে রেকর্ড বইয়ের প্রায় ডজনখানেক পাতায় নিজের নাম তুলেছেন। লা লিগায় বার্সেলোনার সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতার মুকুট তার মাথায়।
২০২০ সালে স্পেন দলে অভিষেকের পর খুব যে আলো ছড়িয়েছেন, তা নয়। চার ম্যাচে গোল পেয়েছেন একটি। তবে ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ হতে পারেন স্পেন কোচ লুইস এনরিকের কার্যকরী অস্ত্র। দুর্ভাবনা শুধু তার ফিটনেস নিয়ে। চোট জর্জর শরীর নিয়ে প্রায়ই মাঠের বাইরে থাকতে হয় তাকে। বিশ্বকাপের সময় চোট থাবা না বসালে গতিময় ফুটবলের পসরা মেলে, প্রতিপক্ষের রক্ষণ এলোমেলো করে ফাতিও হয়ে উঠতে পারেন বড় মঞ্চের নায়ক।
ফাতির মতোই সম্ভাবনা আছে তার জাতীয় দলের সতীর্থ গাভির; ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ মিডফিল্ডারও নজর কাড়তে পারেন মাঝমাঠে আলো ছড়িয়ে। এছাড়ও আছেন পেদ্রি। ১৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার অনেকের দৃষ্টিতে ‘সোনার ছেলে।’ নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলে কাতারে তিনিও হতে পারেন আগামীর তারকা।
দারউইন নুনেস, উরুগুয়ে
দলের আক্রমণভাগে আছে লুইস সুয়ারেসের মতো অভিজ্ঞ গোলমেশিন। কিন্তু উরুগুয়ে গোলের জন্য তাকিয়ে থাকবে নুনেসের দিকেও। ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ এরই মধ্যে লিভারপুলের জার্সিতে সামর্থ্যের ছাপ রেখে চলেছেন। এর আগে আলো ছড়িয়েছেন বেনফিকার হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৮৫ ম্যাচে ৪৮ গোল করে।
জাতীয় দলের জার্সির ভার তার কাঁধে উঠেছে ২০১৯ সালে। কাতার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কলম্বিয়ার জালে গোল আছে তার। সবশেষ কানাডার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচেও একবার পেয়েছেন জালের দেখা। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা এই ফরোয়ার্ডের গতি এবং ফিনিশিংয়ের সামর্থ্যে মুগ্ধ তার ক্লাব লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। তবে এই তরুণকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কারণ-তার মেজাজ। গত অগাস্টেই প্রতিপক্ষে খেলোয়াড়কে ঢুস মেরে দেখেছিলেন লালকার্ড। এমন কাণ্ড না করে নিজের সেরাটা দিলে কাতারে চমকে দিতে পারেনি তিনিও।
জামাল মুসিয়ালা, জার্মানি
১৯ বছর বয়সী এই তরুণের জন্ম জার্মানিতে, বেড় ওঠা মূলত ইংল্যান্ডে। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে দুটি দেশের হয়ে খেলার পর শেষ পর্যন্ত জার্মানির জাতীয় দলের জার্সিই গায়ে তুলেন তিনি। বিনয়ী আচরণ, দৃঢ় সংকল্প এবং একই সঙ্গে ফুটবলীয় দক্ষতা দিয়ে আস্থা অর্জন কোচ হান্স ফ্লিকের। ছয় ফুট লম্বা মুসিয়ালা কাতারে জার্মানদের মাঝমাঠের ‘নেতা’ হতেই পারেন।
মূলত মিডফিল্ডার হলেও যে কোনো পজিশনে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলার সামর্থ থাকায় মুসিয়ালাকে নিয়ে মুগ্ধ হান্সি ফ্লিক। কদিন আগে ফিফাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও সে কথা বলেছেন জার্মান কোচ, “এত নরম পায়ে এবং এত নির্ভার চিত্তে সে যেভাবে ফুটবল খেলে, তা দারুণ এবং আশা করি, এটা দীর্ঘদিন চলবে। চাপের মধ্যে থাকার সময়েও সে ভালো সমাধান খুঁজে নেয় এবং দলের জন্য ইতিবাচক।”
অহেলিয়া চুয়ামেনি, ফ্রান্স
কিলিয়ান এমবাপে ও অহেলিয়া চুয়ামেনি- দুজনেই তরুণ। এমবাপের চেয়ে চুয়ামেনির বয়স এক বছর কম। দুজনের অবস্থানও ভিন্ন। প্রথমজন ফরোয়ার্ড, এরই মধ্যে ২০১৮ সালে রাশিয়ার আসরে বিশ্বকাপ জয়ের অনির্বচনীয় স্বাদ পেয়েছেন। অন্যদিকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার চুয়ামেনি ফ্রান্সের জার্সিই গায়ে তুলেছেন গত বছর।
কাতার বিশ্বকাপে ফরাসিরা যে ক’জন তরুণের দিকে তাকিয়ে থাকবে, তাদের মধ্যে চুয়ামেনিও একজন। কদিন আগে ১০ কোটি ইউরোয় এই ফরাসিকে দলে টেনেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এত মোটা অঙ্কের বিনিয়োগের কারণ রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে সাহায্যের হাত বাড়ানোর সামর্থ্য এবং প্রয়োজনে আক্রমণের বল জোগান দেওয়ার পারদর্শীতা। ফ্রান্স কোচ দিদিয়ে দেশম বিশ্বকাপের মুকুট ধরে রাখার স্বপ্ন পূরণে আস্থার হাত রাখবেন তার কাঁধে। চুয়ামেনিও চাইবেন প্রতিদান দিয়ে আগমণী গান শোনাতে।
ভিনিসিউস জুনিয়র, ব্রাজিল
নামের সঙ্গে ‘জুনিয়র’ পদবী থাকলেও ক্লাব পর্যায়ে তিনি আর ‘জুনিয়র’ নেই। রিয়াল মাদ্রিদের সিনিয়র টিমের আক্রমণভাগের নিয়মিত সদস্য। সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে শুরুর মৌসুমটা সাদামাটা হওয়ার পর দিন যত গড়াচ্ছে, ২১ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান তত আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স উপহার দিচ্ছেন। রিয়ালের হয়ে প্রথম তিন মৌসুমে ১১৮ ম্যাচে মাত্র ১৪ গোল ও ২৩ অ্যাস্টিস্টের পরিসংখ্যান ছিল তার। সেই মলিনতা তিনি কাটিয়ে উঠেছেন কার্লো আনচেলত্তির হাত ধরে। গত মৌসুমে ৫২ ম্যাচে ২২ গোল করেন, অ্যাসিস্ট ছিল ৫২টি। লিভারপুলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল রিয়াল জিতেছিল ভিনিসিউসের একমাত্র গোলেই!
২০১৯ সালে ব্রাজিলের হয়ে অভিষেকের পর খুব বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি ভিনিসিউসের। তা না হওয়ার কারণগুলোর একটি ছিল চোট। তবে ২০০২ সালের পর ফের বিশ্বকাপের স্বাদ পেতে মুখিয়ে থাকা তিতের ব্রাজিল শক্তপোক্ত ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার এই গতিময় ফরোয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে থাকবে বড় আশা নিয়েই। সে আশা পূরণ করতে পারলে ভিনিসিউসও হয়ে উঠবেন আগামীর তারকা।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh