× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পেলে: এক যে ছিল ‘কালোমানিক’

মশিউর অর্ণব

০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:০৮ এএম । আপডেটঃ ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:১০ এএম

পৃথিবীজুড়ে চলছে বিশ্বকাপ উন্মাদনা। বাংলাদেশে এই উন্মাদনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থাকলেও তার পাশাপাশি পর্তুগাল, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্সসহ আরো কয়েকটি দেশের ফুটবল ভক্তও বাংলাদেশে বিদ্যমান। কাতার বিশ্বকাপের এই মৌসুমে সংবাদ সারাবেলা’র পাঠকদের জন্য থাকছে বিশেষ আয়োজন। চলমান বিশ্বকাপ ফুটবলের মাসজুড়েই থাকছে প্রিয় দলের প্রিয় তারকার পরিচিতি, সাবেক কিংবদন্তিদের স্মৃতিচারণ, বর্ণাঢ্য ও বিচিত্র ফুটবল ক্যারিয়ারসহ ফুটবল নিয়ে ব্যতিক্রমী নানা খবর। 

আজকের পর্বে থাকছে কিংবদন্তি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার পেলেকে নিয়ে কথা।

ক্রিকেটে যেমন ব্রাডম্যান , হকিতে যেমন ধ্যানচাঁদ , তেমনই ফুটবলের বাদশা হলো পেলে (চবষব) । কেউ কেউ মারাদোনাকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বলে থাকেন । কিন্তু বিশ্বের সমস্ত ফুটবলপ্রেমী মানুষদের মধ্যে একটি ভোটের আহ্বান করা হলে দেখা যাবে শতকরা ৬০ জন ফুটবলপ্রেমী হয়তো পেলেকেই নির্বাচিত করবেন ফুটবলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসাবে।

মনে প্রশ্ন জাগে পেলের মধ্যে কী এমন গুণ ছিল , যা তাঁকে অবিস্মরণীয় করে রেখেছে? বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে পেলের দক্ষতাকে ব্যাখ্যা করে থাকেন । কেউ কেউ বলেন , পেলের সবথেকে বড়ো গুণ হল প্রবল আত্মবিশ্বাস । এই আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই তিনি বিপক্ষ ডিফেন্সে ধস নামাতে পারতেন।

 আবার কেউ কেউ বলে থাকেন , না না , পেলের আসল কারিকুরি লুকিয়ে আছে তার দুরন্ত ড্রিবলিং এর মধ্যে , বল যেন তার পোষা পাখি , বলকে তিনি যেভাবে ব্যবহার করবেন , বল কথা শুনে তাই করবে । এমন ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা অন্য কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে কখনো দেখা যায় না ।

সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? পেলে না ম্যারাডোনা তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তবে ফুটবলের সম্রাট কে তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কালো মানিক খ্যাত ব্রাজিলের পেলেকে বলা হয় ফুটবলের সম্রাট। অনেকে আবার ভাবতে পারেন পেলে যদি সম্রাট হন তাহলে ম্যারাডোনা কি? ম্যারাডোনাকে বলা হয় ফুটবলের রাজপুত্র।

১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাকোয়েস শহরের এক বস্তিতে জন্মেছিলেন পেলে।

আমরা যাকে পেলে নামে চিনি জন্মের পর তার বাবা-মা তার নাম রাখেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের সঙ্গে মিল রেখে। পেলের পুরো নাম ‘এডসন অ্যারানটিস দো নাসিমেন্ট’। পর্তুগিজ উচ্চারণে এডিসনকে তাঁরা বলতেন এডসন। ‘এডসন অ্যারানটিস দো নাসিমেন্ট’ নামটা যে কী করে পেলে হয়ে গেল, পেলে নিজেও সেটা বলতে পারেন না। বস্তির বন্ধুরা পেলেকে চিনতো ‘ডিকো’ নামে।

দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে পরিবারের অভাব অনটন মেটানোর জন্য ছেলেবেলাতেই পেলেকে চায়ের দোকানে কাজ করতে হয়েছিল। এছাড়া রেলস্টেশন ঝাড়ু দেওয়ার পাশাপাশি কিছুদিন জুতা পরিষ্কারের কাজও করেছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছিল পেলের। একদিন সেই স্বপ্ন সত্যি হলো। ফুটবল খেলে বিশ্বজয় করল ছেলেটি। কিন্তু তার পেছনে রয়েছে আরও অনেক ইতিহাস। আসুন সে রকম কিছু তথ্য জেনে নিই।

ফুটবলের দেশ ব্রাজিলের এক গরিব মা-বাবার পরিবারে জন্ম নেওয়া কালো ছেলেটির জীবনের গল্প অদ্ভুত রোমাঞ্চকর। ফুটবলে সহজাত প্রতিভা তো ছিলই, ব্রাজিলের আর দশটা সাধারণ ছেলের মতোই গলির ফুটবল ছিল তাঁরও অবসরের সঙ্গী। কিন্তু সত্যিকারের ফুটবল কেনার টাকা ছিল না বলে মোজার ভেতরে খবরের কাগজ ঠেসে বানানো ফুটবলে চলত তাঁর অনুশীলন।

গলির ফুটবলেই পেলের প্রতিভা ফুটে ওঠে। এই প্রতিভা একদিন চোখে পড়ে স্যান্টোসের গ্রেট ওয়ালডেমার ডি ব্রিটোর। জীবনের মোড় ঘোরা শুরু। পেলে যখন স্যান্টোসের মূল দলে যোগ দেন তখন তার বয়স ১৬ বছর। সেবার ব্রাজিলের পেশাদার ফুটবল লীগে স্যান্টোসের হয়ে লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটি অর্জন করেন।

বস্তির সেই ছেলেটিকে নিয়ে এবার ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো কাড়াকাড়ি শুরু করে দেয়। এদের মধ্যে বর্তমান সময়ের জায়ান্ত রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসের মতো দলগুলোও ছিল। সবাই-ই যে কোনো মূল্যে পেলেকে তাদের দলে ভেড়াতে দৌড়ঝাপ শুরু করেন। কিন্তু সেবার পেলের ইউরোপে খেলা হয়ে ওঠেনি। কারণটা নিচের কোনো এক জায়গায় জানাবো।

ব্রাজিলের হয়ে পেলের আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয় চিরপ্রতিদ্বন্ধী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। সময়টা ছিল ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই। সেই ম্যাচে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার কাছে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে গেলেও প্রথম ম্যাচেই বিশ্ব রেকর্ডটি করতে ভুল করেনটি পেলে। ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে গোল করে অর্জন করেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ড।

১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে পেলের অভিষেক ঘটে। ম্যাচটি ছিল ১৯৫৮ বিশ্বকাপের তৃতীয় খেলা। ১ম রাউন্ডের খেলায় পেলে গোল করতে না পারলেও অন্তিম মুহূর্তে এসে পেলে ঠিকই জ্বলে উঠেন। কোয়ার্টার ফাইনালের ওই ম্যাচে ওয়েলসের বিপক্ষে পেলের করা গোলে ব্রাজিল সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে এবং পরবর্তীতে ব্রাজিল স্বাদ পায় প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের। এই গোলটিও ছিল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের গোল। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে জোড়া গোল করে ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বনে যান ১৭ বছর বয়সী পেলে। 

  এভাবে একে একে ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ এর বিশ্বকাপে খেলেন পেলে। এর মধ্যে তিনবার (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০) সালে বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেন। তবে পেলে তিনবার বিশ্বকাপ জয় করেছেন নাকি দুইবার বিশ্বকাপ জয় করেছেন তা নিয়ে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কিছুটা বিতর্ক ছিল। ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে ২য় ম্যাচেই ঘুরুতর আঘাত পান। এই আঘাতই তাকে বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে দেয়। সেবারও ব্রাজিল বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে। তবে পেলে সেই দলের সদস্য কিনা তা নিয়েই চলছিল বিতর্ক। অবশেষে ১৯৯৭ সালে ফুটবলের বিশ্ব সংস্থা ফিফা বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁকে ১৯৬২’র বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ঘোষণা করে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.