× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বক্সিংয়ে নতুন আশা বাংলাদেশের

স্পোর্টস ডেস্ক

৩০ মে ২০২২, ১২:৪২ পিএম

বক্সিং প্রতিযোগিতায় দেশের প্রথম স্বর্ণজয়ী সুরো কৃষ্ণ চাকমা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের পরিবেশে বক্সিং সবখানে পরিচিত খেলা নয়। রিংয়ের বাইরে খেলাটির পরিচিতর গণ্ডি খুব বেশি নয়। তবে এবার বক্সিংয়ে নতুন আলোর সন্ধান পাওয়া গেছে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।

মহাদেশীয় পর্যায়ে লাল-সবুজের দেশটির প্রথম পদক আসে বক্সিং থেকে। ১৯৮৬ সিউল এশিয়ান গেমসে বক্সার মোশাররফ হোসেন ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন। তিন যুগে এশিয়া মহাদেশীয় আসরে পদক জয় করা খেলাটি এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে পেশাদার বক্সিংয়ের আসর।প্র

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এই বক্সিং আয়োজন করে চারদিকে সাড়া ফেলে দিয়েছে। আয়োজনের পাশাপাশি সাফল্যেও মুন্সিয়ানার ছাপ দেখিয়েছে। প্রতিবেশী ভারত-নেপাল থেকেও বক্সাররা এই আসরে অংশ নিয়েছিলেন। প্রথম আসর আয়োজন করতে গিয়ে কিছুটা তড়িঘড়ি করায় বক্সারের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। এরপরও অভিষেক আসরে বাংলাদেশের দুই বক্সার আল আমিন ও সুর কৃষ্ণ চাকমা পেশাদার অঙ্গনে বাংলাদেশকে এই পথে নতুন আলো দেখিয়েছেন। 

দুই জনই পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতায় আলাদা ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। প্রথম পেশাদার বক্সিং আয়োজনে তাদের এই সাফল্যে ক্রীড়াঙ্গনে সাড়া ফেলেছে ব্যপক। অন্য খেলার তারকারাও এই দু’জনের পারফরম্যান্সে খুবই উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সুর কৃষ্ণ চাকমা দুর্দান্ত এই ক্ষণের অপেক্ষায় ছিলেন জানিয়ে বলেন, ‘পেশাদার বক্সিং আয়োজনের পর থেকেই সবার অনেক মেসেজ, কল ও ভালোবাসা পাচ্ছি। চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন।

বক্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ে বেশ তৃপ্ত এখন এই বক্সার আরো বলেন, ‘অনেকের কাছে না হলেও আমার কাছে বক্সিং একটি আকর্ষণীয় খেলা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্য খেলার চেয়ে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও বক্সাররা মেধাবী হওয়ায় সেটার প্রমাণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাখা সময় হয়েছে।’ বাংলাদেশে ফেডারেশনের অধীনে আয়োজন করা হয়ে থাকে অ্যামেচার বক্সিং। ফেডারেশনের বাইরে বক্সিং ফাউন্ডেশন এই পেশাদার বক্সিং আয়োজন করে সাড়া ফেলে দিয়েছে। 

পেশাদার বক্সিং একটু ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এই প্রতিযোগিতা থেকে বক্সাররা নিয়মিত অর্থ পেয়ে থাকেন। মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো পেশাদার বক্সিংয়ে ম্যাচটি হয়েছে সুরা কৃষ্ণ চাকমা এবং আল আমিন নিজ নিজ লড়াইয়ে জিতে বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার বক্সিং টুর্নামেন্টকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। সাউথ এশিয়ান প্রো বক্সিং ফাইট নাইট-দ্য আলটিমেট গ্লোরি নামে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় স্থানীয় নায়ক সুরা কৃষ্ণ চাকমা লাইটওয়েট বিভাগে নেপালি লাইটওয়েট চ্যাম্পিয়ন মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদকে এবং মোহাম্মদ আল আমিন ওয়েল্টারওয়েট বিভাগে নেপালি বক্সার ভরত চাঁদকে হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছেন। ভারতীয় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হর্ষ গিল বাংলাদেশের বক্সার হেরা মিয়াকে নকআউট পাঞ্চের মাধ্যমে পরাজিত করে ক্রুজারওয়েটের লড়াইটি মাত্র তিন রাউন্ডে শেষ করেছিলেন। বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আদনান হারুন, ভারতীয় বক্সিং কাউন্সিলের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার পিকেএম রাজা এবং নেপাল প্রফেশনাল বক্সিং কমিশনের সভাপতি ’ম্যাক্স’ মনোহর বাসনেট এই আয়োজনের নেপথ্যে কাজ করেছেন।

মিরপুরের এই ইনডোর স্টেডিয়ামে সাধারণত আন্তর্জাতিক ভলিবল, ফেন্সিং, জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বক্সিং প্রতিযোগিতা এবারই প্রথম আয়োজন করা হলো। পুরানা পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম থেকে এখনকার বক্সিং প্রতিযোগিতায় কিছুটা ভিন্নতা ছিল।

বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন পল্টনে যে প্রতিযোগিতা আয়োজন করে সেটা মূলত অ্যামেচার বক্সিং। মিরপুর ইনডোরে প্রথমবারের মতো পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতার সফল সমাপ্তি হলো। এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে অবশ্য বক্সিং ফেডারেশনের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়ামের এক কোণে বক্সিংয়ের রিং স্থাপিত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড বক্সিং কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় সার্বিক সহযোগিতা করেছে এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্রোমোশনস।

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের মোট ১৪ জন বক্সার ওয়েট ক্লাসে মোট সাতটি ফাইটে অংশগ্রহণ করে। টুর্নামেন্টের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে ছিল বাংলাদেশ ও নেপালের দুই পেশাদার বক্সার মোহাম্মদ আল আমিন এবং ভারত চাঁদের ফাইট। আসরে বাংলাদেশের নতুন ১১ জন পেশাদার বক্সার পার্স মানি হিসেবে পান ৫ হাজার টাকা করে। এছাড়াও চ্যাম্পিয়ন পর্যায়ের ফাইটে বক্সারদের পার্স মানি দেয়া হয় ২০ হাজার টাকা করে। এছাড়া এখানে অংশ নেয়া বাংলাদেশের ১১ জন বক্সার পেশাদার লাইসেন্স পান। 

মূলত দেশের বক্সারদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম দিতে এবং বক্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন করে এবং ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যহত থাকবে বলে জানান বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের সভাপতি আদনান হারুন জানিয়েছেন। ভারতের পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতায় খেলে আগেই সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশের সুরো কৃষ্ণ চাকমা। এবার দেশে প্রথমবারের মতো পেশাদার বক্সিয়ে সাফল্যের ধারা ধরে রাখলেন এই বক্সার। ৬১ কেজি ওজন শ্রেণিতে সুরো কৃষ্ণ চাকমা চার রাউন্ডের খেলায় নেপালের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদকে হারিয়ে দেন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজেকে নতুন একটা টুর্নামেন্টে নতুনভাবে নিজেকে চেনাতে পেরে বেশ খুশি হয়েছেন।
এছাড়া স্বাগতিকদের আরেক বক্সার আল আমিনও হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। তিনি নেপালের প্রতিযোগীকে হারিয়ে সেরার মুকুট গলায় পড়েছেন। ৬৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে নেপালের চ্যাম্পিয়ন বক্সার ভারত চাঁদ ও বাংলাদেশের আল আমিন মুখোমুখি হয়েছিলেন। চার রাউন্ডের লড়াইয়ে ভারতকে হারান আল আমিন। গত বাংলাদেশ গেমসে স্বর্ণ জেতা এই বক্সার তিন বিচারকের কাছ থেকে পান ৩৯-৩৭, ৪০-৩৬, ৪০-৩৬ পয়েন্ট।

বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে টুর্নামেন্টে আরো অংশ নিয়েছেন ভারতের হর্ষ গিল, নেপালের মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদ, ভারত চাঁদ, বাংলাদেশের সুর কৃষ্ণ চাকমা, মোহাম্মদ আল আমিন, রিয়াজুল মণ্ডল, জাহিদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ তুহিন, উৎসব আহমেদ, মোহাম্মদ আকাশ, আবু তালহা হৃদয়, রিসাতুল মাহমুদ ও হীরা মিয়া। সেখানে সুর ও আল আমিনকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে বক্সিংয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা বাড়বাড়ন্ত করার দায়িত্ব যে এখন বক্সারদের।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.