হুয়াওয়ে সম্প্রতি ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে গত বছরে প্রতিষ্ঠানটির দৃঢ়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি উঠে এসেছে এবং সামনে কীভাবে হুয়াওয়ে আইসিটি খাতকে সামগ্রিক কল্যাণে কাজে লাগাতে এগিয়ে আসবে সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে।
বার্ষিক প্রতিবেদন উন্মোচন উপলক্ষে ঢাকায় সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যান জুনফ্যাং, বাংলাদেশ বোর্ড অব ডিরেক্টর জেসন লিজংশেং, চিফ টেকনিক্যাল অফিসার কেভিন স্যু, পাবলিক এফেয়ারস এন্ড কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর ইউয়িং কার্ল এবং আরও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে হুয়াওয়ের আয় হয়েছে ৮.৬৫ ট্রিলিয়ন টাকা (প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার) যেখানে নিট মুনাফা ১.৫৪ ট্রিলিয়ন টাকা (১৭.৮৫ বিলিয়ন ডলার)। এই অর্জন বিগত বছরের তুলনায় ৭৫.৯ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বাবদ প্রতিষ্ঠানটির খরচ হয়েছে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন টাকা (২২.৪০ বিলিয়ন ডলার), যা প্রতিষ্ঠানটির মোট রাজস্বের ২২.৪ শতাংশ। পাশাপাশি, বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময়ে প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বাবদ খরচ হয়েছে ১১.৪৮ ট্রিলিয়ন টাকা (১৩২.৬৬ বিলিয়ন ডলার) -এরও বেশি।
সামনে ডিজিটাল পাওয়ার ও ক্লাউডে হুয়াওয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে যেতে চায়। এজন্য সামনের দিনগুলোতেও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট খাতে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
সাংবাদিকদের সাথে এই আলোচনায় প্যান জুনফ্যাং ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রায় হুয়াওয়ের বিভিন্ন অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “গত ২৩ বছর থেকে হুয়াওয়ে বাংলাদেশে বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই সময়ে বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অনেক এগিয়েছে এবং এই উত্তরণের একজন সক্রিয় আমরা খুবই আনন্দিত। বাংলাদেশের সামনে যে অমিত সম্ভাবনা সেক্ষেত্রে ইনোভেশন, লোকালাইজেশন ও কলাবোরশনের মাধ্যমে কাজ করে যেতে চাই আমরা।”
এর মধ্যেই হুয়াওয়ের ক্লাউড সার্ভিস বিশ্বব্যাপী সারাবিশ্বে পঞ্চম এবং চীনে তৃতীয় অবস্থান অর্জন করেছে। পাশাপাশি ডিজিটাল পাওয়ার সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ সোলার প্লান্টে হুয়াওয়ের স্মার্ট ফটোভোলটিক সল্যুশন ব্যবহার করা হয়েছে। এই বছর বাংলাদেশে এই খাতগুলোর আরও বেশি সহযোগী হয়ে উঠতে চায় হুয়াওয়ে।
জেসন লিজংশেং বলেন, “তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যত পৃথিবীতে দক্ষ তরুণদের অনেক প্রয়োজন তৈরি হবে। বাংলাদেশের এক দারুণ শক্তি এই দেশের তরুণ। আমরা চাই এদেশের তরুণরা বিশ্ববাজারে নিজদের জায়গা করে নিক এবং নিজেদের দক্ষতা, দারুণ সব আইডিয়া দিয়ে বাংলাদশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাক। তাই আমরা গত অনেকগুলো বছর থেকেই এদেশের তরুণদের আইসিটি খাতে দক্ষ করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় এক লক্ষ তরুণদের আইসিটিতে দক্ষ করে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছি যেখানে বাংলাদেশ থেকে অনেক তরুণ অংশ নিতে পারবে। এবছর বাংলাদেশ থেকে ছয় হাজাররেও বেশি তরুণ এই সুযোগ পাবে”।
হুয়াওয়ের যে গ্লোবাল বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের আয়োজন করা হয় সেখানে হুয়াওয়ের সিএফও মেং ওয়ানঝৌউ বলেন, “২০২১ সালে আয় হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও, আমাদের মুনাফা করার সক্ষমতা ও নগদ অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে।” প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ব্যবসাগুলো এ মুনাফা বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নগদ অর্থের প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর দায় অনুপাতও ৫৭.৮ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি, এর সামগ্রিক আর্থিক কাঠামো আরও স্থিতিশীল হয়েছে।”
২০২১ সালে হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার বিজনেসে ৩.২৮ ট্রিলিয়ন টাকা (৪৪.১৯ বিলিয়ন ডলার) আয় হয়েছে এবং সারা বিশ্বজুড়ে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেতৃস্থানীয় ফাইভজি নেটওয়ার্ক স্থাপনে সহায়তা করেছে। তৃতীয় পক্ষের দ্বারা করা এক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরব সহ ১৩ দেশের গ্রাহকদের জন্য হুয়াওয়ে নির্মিত ফাইভজি নেটওয়ার্কগুলো ব্যবহারকারীদের উন্নত অভিজ্ঞতা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। ক্যারিয়ার এবং অংশীদারদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে হুয়াওয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইভজি অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ৩০০০ এর বেশি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই ধরনের ফাইভজি অ্যাপ্লিকেশনগুলো বর্তমানে উৎপাদন, খনি, লোহা ও ইস্পাত প্ল্যান্ট, বন্দর এবং হাসপাতালের মতো খাতগুলোতে বড় আকারের বাণিজ্যিক ব্যবহার করেছে।
ডিজিটাল রূপান্তরের প্রবণতা অব্যাহত রাখার জন্য হুয়াওয়ের এন্টারপ্রাইজ ব্যবসাও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে,। গত বছর, হুয়াওয়ে সরকার পরিবহন, অর্থ, শক্তি এবং উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য ১১টি সিনারিও-বেজড সল্যুশন চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি একটি কোল মাইন টিম, স্মার্ট রোড টিম এবং একটি কাস্টমস ও পোর্ট টিম সহ একাধিক নিবেদিত প্রাণ দল তৈরি করেছে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো একত্রিত হয়ে, আরো দক্ষতার সাথে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে৷ সাতশ’টিরও বেশি শহর এবং ২৬৭টি ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ কোম্পানি তাদের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন পার্টনার হিসেবে হুয়াওয়েকে বেছে নিয়েছে এবং হুয়াওয়ে এখন সারা বিশ্বে ছয় হাজারেরও বেশি পরিষেবা এবং অপারেশন পার্টনারদের সাথে কাজ করছে।
হুয়াওয়ের কনজ্যুমার বিজনেস গ্রাহকদের চাহিদা এবং প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সিমলেস এআই লাইফ কৌশলের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের জন্য একটি স্মার্ট, অল-কানেক্টেড এরা নিশ্চিতে গ্লোবাল ইকোসিস্টেম তৈরিতে কাজ করেছে। হুয়াওয়ের এ ব্যবসা ২০২১ সালে ৩.৩০ ট্রিলিয়ন টাকা (৩৮.২১ বিলিয়ন ডলার) আয় করেছে এবং স্মার্ট ওয়্যারেবলস, স্মার্ট স্ক্রিন, ট্রু ওয়্যারলেস স্টেরিও (টিডব্লিউএস) ইয়ারবাড এবং হুয়াওয়ের মোবাইল সার্ভিসেস (এইচএমএস)-এর বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, স্মার্ট ওয়্যারেবলস এবং স্মার্ট স্ক্রিন দু'টি ক্ষেত্রেই বছরে ৩০ শতাংশের ও বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। সব মিলিয়ে, ২০২১ সাল পর্যন্ত ২২০ মিলিয়নেরও বেশি হুয়াওয়ে ডিভাইসে হারমনিওস ব্যবহৃত হয়েছে, যা বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল মোবাইল ডিভাইস অপারেটিং সিস্টেম হয়ে উঠেছে।
অনুষ্ঠানে গুয়ো আরো বলেন, "সামনের দিনগুলোতে হুয়াওয়ে এর ডিজিটালাইজেশন, ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সফরমেশন এবং কার্বন নিঃসরণকে কমিয়ে এগিয়ে যাবে। প্রতিভা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং একটি উদ্ভাবনী অনুপ্রেরণার ওপর নির্ভর করে আমরা মৌলিক তত্ত্ব, স্থাপত্য, এবং সফ্টওয়্যারগুলোর জন্য আমাদের দৃষ্টান্তগুলোকে পুনর্নির্মাণ করার জন্য ক্রমাগত বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবো এবং আমাদের দীর্ঘমেয়াদী সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবো।"
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh