× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

স্মরণ

একজন নীতিবান রাজনীতিক সৈয়দ আশরাফ

০২ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:৪৬ পিএম । আপডেটঃ ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০২:০৮ এএম

বাংলাদেশের প্রচল রাজনীতির বিপরীতে সততা, শুদ্ধতা, নীতি-নিষ্ঠার প্রবর্তক ও সাবেক মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দু'বারের সফল সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার তিন দিনের মাথায় ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

শুদ্ধতম রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরে আওয়ামী রাজনীতিতে নতুন এক ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। ব্রিটেনে প্রবাসজীবন কাটানোকালে সেখানকার লেবার পার্টির রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন সৈয়দ আশরাফ। এ কারণে নিজের মধ্যে তৈরি হয় ব্রিটিশ ধারার উদারতান্ত্রিক সততা ও বিচক্ষণতার অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। গত শতকের মধ্য নব্বই দশকে শেখ হাসিনার আহ্বানে তিনি ব্রিটেনের প্রবাসজীবন ছেড়ে স্বদেশে ফিরে আসেন এবং আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারের মতো কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ওই বছর আওয়ামী লীগ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়। সেই সরকারে তিনি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০৫ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ব্যাপক গণআন্দোলন সৃষ্টি হলে সে সময়ের সরকার বিচারপতি কেএম হাসানের বয়স বাড়িয়ে তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার নীলনকশা প্রণয়ন করে।

তৎকালীন সরকারের ওই একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। আন্দোলনের মুখে খালেদা সরকার রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করে এবং ইয়াজউদ্দিন সরকার ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বয়কট করে। সৃষ্টি হয় নতুন সংকট। অবশেষে ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়।

সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথাকথিত মাইনাস টু ফর্মুলার বিরুদ্ধে আবারও দেশব্যাপী অসন্তোষ দানা বাঁধে। সেই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাঘা বাঘা নেতা গ্রেপ্তার হয়ে যান। অনেকে আত্মরক্ষার জন্য ভোল পাল্টে সেদিকে ঝুঁকে পড়েন। রাজনীতির এই বিপর্যয়কালে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সব ঝুঁকি পাশ কাটিয়ে অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে দলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যান। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তার বিচক্ষণ কর্মকাণ্ডই দল ও নেত্রীর কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পরপর দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শুধু একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবেই নন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত সৈনিক হিসেবে এবং একজন সর্বজনগ্রাহ্য নেতা হিসেবে নিজের ইমেজ গড়ে তুলেছিলেন। রাজনীতিতে সততা, ক্ষমতার দম্ভ পরিহার ও সর্বপ্রকার তদবিরবাজির বিরুদ্ধে তিনি সাহসের যে উদাহরণ রেখে গেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। তিনি ছিলেন শুদ্ধতম রাজনীতির প্রতীক।

২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়ে দেওয়ার আগে তিনি একটি অসাধারণ বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন। সেই আবেগঘন বক্তব্যে দলীয় প্রধানসহ সব নেতাকর্মী এত বেশি আপ্লুত হয়েছিলেন যে, তার সেই বক্তব্যটি আজও কর্মীদের মুখে মুখে ফেরে। তিনি বলেছিলেন, 'প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমি আওয়ামী লীগের সন্তান। আওয়ামী লীগের ঘরেই আমার জন্ম। আওয়ামী লীগ যদি ব্যথা পায়, আমিও বুকে ব্যথা পাই। আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী যদি ব্যথা পায়, আমারও অন্তরে ব্যথা লাগে। আওয়ামী লীগ তো আওয়ামী লীগই, এটা কোনো দল না, এটা আমার কাছে একটা অনুভূতির নাম।' তার এই বক্তব্য শুনে সেদিন অনেকেই কেঁদেছিলেন। এই প্রজ্ঞাবান রাজনীতিকের মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণযোগ্য নয়। গভীর শ্রদ্ধায় তাকে স্মরণ করি।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.