× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শুভ জন্মদিন সংগীতজ্ঞ হাসন রাজা

০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৩:৪২ এএম । আপডেটঃ ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৫২ এএম

‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা না আমার

কি ঘর বানাইমু আমি, শূন্যের-ই মাঝার

ভালা করি ঘর বানাইয়া, কয় দিন থাকমু আর

আয়না দিয়া চাইয়া দেখি, পাকনা চুল আমার’

এই গান শোনেননি, এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। গানের রচয়িতা মরমী কবি এবং বাউল হাসন রাজা। আজ এই সাধকের ৯৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯২২ সালের এই দিনে তার মৃত্যু হয়। ১৮৫৪ সালের সালের ২১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহরের লক্ষণশ্রীর ধনাঢ্য জমিদার পরিবারে জন্ম নেওয়া হাসন রাজা। জীবদ্দশায় প্রায় ২০০ গান রচনা করেছেন তিনি। তার গানে সহজ-সরল স্বাভাবিক ভাষায় মানবতার চিরন্তন বাণী উচ্চারিত হয়েছিল। তবে সেসব বাণী ছিল আধ্যাত্মিক। ধর্মের বিভেদ ভুলে গিয়ে তিনি গেয়েছেন মাটি ও মানুষের গান। হাসন রাজার গবেষণা, সাধনা ও শিল্পকর্ম ছিল মানুষের জন্য কল্যাণমুখী। তিনি একইসঙ্গে ছিলেন জমিদার এবং সুরসাধক।

হাসন রাজার গান শুনলে মনের মধ্যে আধ্যাত্মবোধের জন্ম হয়। তাইতো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ১৯২৫ সালে কলকাতায় এবং ১৯৩৩ সালে লন্ডনের হিবার্ট বক্তৃতায় হাসন রাজার দুটি গানের প্রশংসা করেছিলেন।

এক সময়কার প্রতাপশালী অত্যাচারী জমিদার হাসন একসময় হয়ে ওঠেন একজন দরদী জমিদার এবং মরমিয়া কবি ও বাউল সাধক। এ নিয়েও প্রচলিত রয়েছে একটি কাহিনী।

বাবা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী এবং মা হুরমত জান বিবির ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় হাসন। হুরমত বিবি ছিলেন আলী রাজার খালাতো ভাই আমির বখ্শ চৌধুরীর নিঃসন্তান বিধবা। পরবর্তীতে আলী রাজা তাকে পরিণত বয়সে বিয়ে করেন। হাসন রাজা ছিলেন তার দ্বিতীয় পুত্র।

হাসনের পূর্বপুরুষরা ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের অয্যোধ্যার। বংশ পরম্পরায় তারা হিন্দু ছিলেন। তার দাদা বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব মতান্তরে বাবু রায় চৌধুরী সিলেটে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হাসনের দাদার মৃত্যুর পর তার বাবা মাতৃ এবং পিতৃবংশীয় সব সম্পদের মালিক হন। ১৮৬৯ সালে তার বাবা আলি রেজার মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর তার বড় ভাই ওবায়দুর রেজা মারা যান। ভাগ্যের এমন বিড়ম্বনার স্বীকার হয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে হাসন জমিদারীতে অভিষিক্ত হন।

হাসন বেশ সুপুরুষ দর্শন ছিলেন। ছিলেন স্বশিক্ষিতও। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় সহস্রাধিক গান এবং পংক্তি রচনা করেছেন। এ ছাড়াও আরবী ও ফার্সি ভাষায় ছিল বিশেষ দক্ষতা। তখন সিলেটে ঘরে ঘরে আরবী ও ফার্সির প্রবল চর্চা চলত।

হাসন যৌবনে ছিলেন ভোগবিলাসী এবং সৌখিন। বিভিন্ন সময় তিনি অনেক নারীর সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। প্রতি বছর, বিশেষ করে বর্ষাকালে, নৃত্য-গীতের ব্যবস্থাসহ নৌকাবিহারে চলে যেতেন। বেশ কিছুকাল ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত করে দিতেন। এই ভোগবিলাসের মধ্যেও হাসন প্রচুর গান রচনা করেছেন। বাইজী দিয়ে নৃত্য এবং বাদ্যযন্ত্রসহ এসব গান গাওয়া হত। সেই গানে অন্তর্নিহিত ছিল নশ্বর জীবন এবং নিজের কৃতকর্মের প্রতি অপরাধবোধের কথা। কে জানতো সেই অত্যাচারী, ভোগবিলাসী জমিদারই হবেন পরবর্তীকালের সবচেয়ে প্রজাদরদি এবং দরবেশ জমিদার!

হাছন রাজা পশু পাখি ভালোবাসতেন। ঘোড়াও পুষতেন তিনি। পশু পাখির যত্ন ও লালন পালনের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন। তার প্রিয় দুটি ঘোড়ার একটি হলো জং বাহাদুর, আরেকটি চান্দমুশকি। তার পোষা ৭৭টি ঘোড়ার নাম পাওয়া যায়। হাসন রাজার অন্যতম শখ ছিল ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জড়ো করে রুপোর টাকা ছড়িয়ে দেওয়া। বাচ্চারা যখন হুটোপুটি করে কুড়িয়ে নিত, তা দেখে তিনি খুব মজা পেতেন।

হাসন রাজার এই কালো অধ্যায়ের ইতি ঘটে বেশ অলৌকিকভাবে। লোক মুখে শোনা যায়- একদিন তিনি একটি আধ্যাত্নিক স্বপ্ন দেখলেন এবং এরপরই তিনি নিজেকে পরিবর্তন করা শুরু করলেন। বৈরাগ্যের বেশ ধারণ করলেন। জীবনযাত্রায় আনলেন পরিবর্তন। তিনি তার ভোগ বিলাস ছেড়ে দিলেন। নিয়মিত প্রজাদের খোঁজ খবর রাখা থেকে শুরু করে এলাকায় বিদ্যালয়, মসজিদ এবং আখড়া স্থাপন করলেন। সেই সঙ্গে চলতে লাগলো গান রচনা।

সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়ায় এলাকায় সুরমা নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে হাসন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি। এ বাড়িটি একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। কালোত্তীর্ণ এ সাধকের ব্যবহৃত কুর্তা, খড়ম, তরবারি, পাগড়ি, ঢাল, থালা, বই ও নিজের হাতের লেখা কবিতার ও গানের পাণ্ডুলিপি আজও বহু দর্শনার্থীদের আবেগাপ্লুত করে। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীতে তার মায়ের কবরের পাশে কবর দেওয়া হয়। তার এই কবরখানা তিনি মৃত্যুর পূর্বেই নিজে প্রস্তুত করেছিলেন।

বর্তমানে শহরের তেঘরিয়ার জন্মভিটায় হাসনরাজা মিউজিয়ামকে একটি পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়াম হিসেবে গড়ে তোলার দাবি পর্যটকসহ হাসন প্রেমিদের। একইভাবে তার সুরের বিকৃতিরোধেও কার্যকর উদ্যোগের দাবি তুলেছেন হাসন ভক্তরা।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.