× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শুভ জন্মদিন, সঞ্জীব'দা!

২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪:১৩ এএম

আজ ২৫ ডিসেম্বর কবি, সাংবাদিক, গীতিকার, প্রতিরোধযোদ্ধা ও শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের আজকের এই দিনে তিনি হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সঞ্জীব চৌধুরী ও বাপ্পা মজুমদারের যৌথতায় সৃষ্টি ব্যান্ড দলছুট। বাংলা সঙ্গীতে ভিন্ন মাত্রার জন্য এ গানের দল খ্যাত। দলছুটের গানে ঐ অর্থে গিটার ও ড্রামর্স উচ্চকিত নয়। কিন্তু এর ধার ও ভার রককেও ছাড়িয়ে যায়।

১৯৯৫ সালে বাংলাদেশে ঘটেছিলো এক বিরল ঘটনা। রাষ্ট্রের পুলিশের হাতে ধর্ষণের শিকার ও খুন হয় দিনাজপুরের শ্রমজীবী নারী ইয়াসমীন। ইয়াসমীন খুনের পর সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানে দিনাজপুর হয়েছিল এক পবিত্র মুক্তাঞ্চল। উত্তেজিত জনতা থানায় আগুন দেয়। হাজারো মানুষের দ্রোহী মিছিলের শহর হয় এ জনপদ। বলা যায় পালায় বা রাষ্ট্রের ভাষায় “বদলি করা হয়” জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে। টানা ৭ দিন রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব মুক্ত ছিল দিনাজপুর। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক বিরল ঘটনার সাক্ষ্য এই দিনাজপুর। জনতার এই উত্থানে গান দিয়ে সংহতি জানিয়েছিলেন একমাত্র সঞ্জীব চৌধুরী। তার লেখা ও গাওয়া “আহ ইয়াসমীন” এরই স্মারক।

সঞ্জীব ছিলেন অনন্য বহুমুখী ও বোহেমিয়ান সৃষ্টিশীল। তিনি ছাত্র জীবন থেকে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে যুক্ত। ৯০ এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াকালে এরশাদ বিরোধী স্বৈরাচার তাড়াও আন্দোলনে ব্যাপকমাত্রায় সক্রিয় ছিলেন। কবিতা, গান প্রকাশে সহজাত ছিলেন। তার লেখা বই "রাশপ্রিন্ট" এর সাহিত্য মূল্য কম নয়।

একই সঙ্গে বারুদ ও প্রেম ধারণে সক্ষম স্বত্তা সঞ্জীব চৌধুরী। রূপে অন্ধ করে দেয়া মেয়ের প্রতি নৈবদ্য সাজাতে পারেন। আবার “চল বুবাইজান” গানে প্রান্তিক গ্রামের ভিজিএফ কর্মসূচি বা কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে দরিদ্রের হক লুটের রাষ্ট্রীয় আয়োজন তিনি উন্মোচন করেন। কিসে মুগ্ধ হয় তার এই বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীলতা? গানে তো বলেন না সে কথা, “আমি কাউকে বলিনি সে নাম, কেউ জানে না, না জানে আড়াল…”

ভাটিবাংলার পুত্র সঞ্জীব চৌধুরী জানতেন বাংলা লোকগানের হৃদয় ছোঁয়ার আকুল ভাব। শাহ আবদুল করিমের গান “গাড়ি চলেনা” নতুনভাবে উপস্থাপনের কৃতিত্ব দলছুটের। আবার ফিউশনের নামে অজর সঙ্গীত স্রষ্টার কর্ম নিয়ে যা খুশি তাই করা চলে না। এর মধ্যে দরকার পরিমিতি বোধ। দলছুট সেটি করে দেখিয়েছে। পরের অনেকে যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তুমুল ব্যবসা হয়েছে গান নিয়ে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে রয়ালিটি দূরে থাক উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি গানের মূল স্রষ্টা শাহ আবদুল করিমের নাম।

সঞ্জীব চৌধুরী ও দলছুটকে প্রথম দেখি বিটিভিতে হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "ইত্যাদি"তে। "সাদা ময়লা রঙ্গিলা পালে আউলা বাতাস খেলে" ছিল সে গান। এর কিছু সময় পরে একুশে টিভি এসে যায়। দলছুটের “আমি তোমাকেই বলে দেব”, “তুমি আমার বায়ান্ন তাস” ব্যাপক হিট হয়।

সাংবাদিকতায় সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন তুখোড় সৃষ্টিশীল। তার সম্পাদিত আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিনের ফিচার পাতাগুলো সে সাক্ষ্যই বহন করে। তার অধীনের কর্মরতদের এখন মিডিয়াপাড়ায় দাপট। কিন্তু তারা সুরাপ্রীতিটুকু ছাড়া সঞ্জীব'দার আদর্শ কতটা ধারণ করছেন তা জানা নেই। তারা জন্মদিন, মৃত্যুদিনে সঞ্জীব'দাকে নিয়ে ফেসবুকিংয়ে ব্যস্ত হন। অথচ দুঃখের বিষয় খুব কম লোকই রাখেন সঞ্জীব'দার একমাত্র কন্যা কিংবদন্তির খবর আর পরিবারটির সাম্প্রতিক হাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র সঞ্জীব চৌধুরী প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার লোভনীয় চাকরি হাতের মুঠোয় ছিল। আরও কত প্রলোভনের হাতছানি। কিন্তু তিনি জীবন জুড়েই যেন কড়া নাড়লেন ভুল দরজায়। দশ, পাঁচটি মানুষের চেয়ে হাঁটলেন স্বকীয় পথে।

২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর মাত্র ৪২ বছর বয়সে মস্তিকে রক্তক্ষরণজনিত কারণে অ্যাপোলো হসপিটালে চিকিৎসাধীন সঞ্জীব চৌধুরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার দেহটি পর্যন্ত গবেষণার জন্য দান করে গেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য।

শুভ জন্মদিন সঞ্জীব দা।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.