× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

যেভাবে ‘মোখা’ মোকাবিলা করবে সরকার

হালিম মোহাম্মদ

১৩ মে ২০২৩, ০৭:৩৯ এএম

ঘুর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রাণহানি ও ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ত্রাণ অধিদপ্তর, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এবং বিদ্যুৎ বিভাগ অন্যতম। প্রশাসনের এসব বিভাগের প্রায় ৫০০ কর্মচারীর ছুটিছাঁটা বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনের পাঁচটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, বয়, ও পরিচ্ছন্নকর্মীরা।

তাদের সমন্বয়ে একাধিক জরুরি মেডিকেল টিম গঠন করে সমুদ্র উপকূল এলাকার আশ্রয় কেন্দ্র এবং থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জেলা হাসপাতালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাছাড়া রাজধানীর একাধিক সরকারি হাসপাতালে জরুরি ওয়ার্ড এবং অবজারভেশন রুম খোলা হয়েছে। 

অপরদিকে এ সকল মেডিকেল টিমে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানির ট্যাবলেট, পানিবাহিত রোগের ওষুধ এবং শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রচুর পরিমাণ শুকনো খাবার এবং কাপড়চোপরও প্রস্তত রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আরও রাখা হয়েছে মোমবাতি, চার্জার, টীকার বা ভ্যাকসিন। 

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল প্রশাসন) ডা. সামিউল আলম সংবাদ সারাবেলাকে বলেছেন, ‘ঘুর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক, ফার্মাসিষ্ট, নার্স, বয় সমন্বয়ে একাধিক মেডিকেল টিম সমুদ্র উপকূলের সবগুলো আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে দেয়া হয়েছে ওষুধ, খাবার স্যালাাইনসহ বিভিন্ন সামগ্রী। পাশাপাশি সমুদ্র উপকূল এলাকার সকল থানা স্বাস্থ্য কমরপ্লক্স এবং জেলা হাসপাতালগুলোতে দুর্গতদের চিকিৎসা এবং পানি বিশুদ্ধ ট্যাবলেট সরবরাহ করবে।’  

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনীর ২১টি জাহাজ ও হেলিকপ্টার।

শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে নৌবাহিনী। দুর্যোগ পরবর্তীসময়ে জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য নৌবাহিনীর ২১টি জাহাজ, হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট প্রস্তুত রয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সতর্ক করছে নৌবাহিনীর সদস্যরা।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ডিএনসিসি প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল শনিবার ডিএসসিসি এবং ডিএনসিসির নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ছুটি বাতিলসহ ডিএনসিসির যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটিতে আছেন তাদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ঢাকার কোথাও যদি গাছ হেলে পড়ে বা ডালপালা ভেঙে যায় তা সঙ্গে সঙ্গে ডিএনসিসিকে জানানোর আহ্বান জানাই। ডিএনসিসি দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক থেকে গাছ অপসারণ করবে। আর কোথাও যদি গাছ হেলে যায়, সেটি কীভাবে রক্ষা করা যায় সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সব গ্রাহকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়  মোখার কারণে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে আজ রোববার বাংলাদেশের কক্সবাজার ও অন্যান্য স্থানে আঘাত হানতে পারে। এ সময় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আপনাদের সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, স্পষ্টতই দুর্যোগকালীন বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা নানাভাবে ব্যাহত হয়। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গত শুক্রবার রাত ১১টায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে শনিবার গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে। এ সময় চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ বা আংশিক চালু থাকবে। তবে পরবর্তীতে ঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে।

এ ছাড়া বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার দরুনও প্রায়ই বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। বৈদ্যুতিক লাইনে ডালপালাসহ গাছ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটে। এতে বৈদ্যুতিক লাইন ও পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটে যান্ত্রিক ত্রুটি। সুতরাং এরূপ বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে গাছ সরানোসহ যান্ত্রিক ক্রটি সারাতে কিছুটা সময় প্রয়োজন হয়। এমতাবস্থায়ও বৈদ্যুতিক সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সব কারিগরি কর্মীরা তৎপর আছেন। তথাপি এমন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাটজনিত অসুবিধা হলে এজন্য সম্মানিত গ্রাহকদের কাছে আমরা আগাম দুঃখপ্রকাশ করছি।

বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ঝড়-বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ হয়ে যায় প্রাণঘাতী। তাই বৈদ্যুতিক ছেঁড়া তারের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার জন্য সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক করা যাচ্ছে। ঝড় থেমে গেলেও আপনারা কোনোভাবেই ছেঁড়া তার সড়াবেন না। বিদ্যুৎ কর্মীরাই ছেঁড়া তারের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি আপনাদের বৈদ্যুতিক ছেঁড়া তার দেখা মাত্র নিকটস্থ বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করা হলো।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে কক্সবাজার উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সরকার সবদিক থেকেই প্রস্তুত: প্রতিমন্ত্রী

শনিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোখা সংক্রান্ত প্রস্তুতিবিষয়ক কর্মসূচির বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরি সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, বাতাসের গতিবেগ কমে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় মোকা সুপার সাইক্লোন হচ্ছে না। এটি এখন অতি প্রবল (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন) ঘূর্ণিঝড়।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.