ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের ঝুঁকিতে রয়েছে রোহিঙ্গারা। ঘুর্ণিঝড়ের বিষয়ে মাইকিং করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবাইকে সতর্ক করছে প্রশাসন। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ভেতরেই নিরাপদে সতর্ক পাহারায় রেখেছে প্রশাসন।
ক্ষতি যতটা কমানো যায়, সে লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণাসহ বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গাদের সতর্ক করা হচ্ছে। ক্যাম্পের ঝুঁকিপুর্ণ এলাকার তাঁবুগুলোর ভেতর থেকে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। স্কুল এবং এনজিও কার্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা দিয়ে সেখানে তাদের রাখা হয়েছে। এনজিওকর্মী স্বেচ্ছাসেবক ও রেডক্রিসেন্ট সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ এবং প্রশাসন কর্মকর্তারা প্রস্তুতিমূলক কাজ করে যাচ্ছে। এবিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গারা যেন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য এপিবিএনসহ সব সংস্থাকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে তেজগাঁও মহিলা কলেজের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দুর্যোগের সুযোগে রোহিঙ্গারা যাতে কাঁটাতারের বেড়া ক্রস করে বের হতে না পারে, এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ আছে। তবে মোখা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দক্ষিণ সমুদ্র উপকুল কক্সবাজার এবং টেকনাফে আঘাত হানবে। তখন পরিস্থিতি বুঝে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ জায়গায় আনা হবে। অপরদিকে কক্সবাজারের স্থানীয় প্রসাশন বলছে, মোখার প্রভাবে ভারী বর্ষণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সমতল এবং নিচু এলাকা ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাদেরকে সরিয়ে ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপদে নেয়া হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার অতিক্রমের সময় প্রভাবে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কঠোর পাহারায় তাদেরকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে মোখা নামে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূল দিয়ে ভোররাতে অতিক্রম করার সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ওপর আঘাত হানবে। এমনটাই বলেছেন দেশের আবহাওয়াবিদগণ। এমতাবস্থায় মোখার প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। ক্ষতি যতটা কমানো যায়, সে লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণাসহ বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কাজ করে চলেছে স্থানীয় প্রসাশন।
প্রশাসন জানায়, ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এর মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাইকিং করে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সার্বিক সহযোগিতায় সেচ্ছাসেবী টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভূমিধস ও বন্যায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অনেককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুল, মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ মজবুত সেন্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।এদিকে টেকনাফের মোছনী ন্যাচার পার্কের ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে মাইকিং করে ক্যাম্পের সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পলিথিনে ভরে নিরাপদে রাখার জন্য বলা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া উনচিপ্রাং ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি সাব্বির বলেন, ক্যাম্পে ঝুঁকিপূর্ণ ঝুঁপড়ি ঘরগুলো শক্তভাবে বেঁধে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রশাসন ও এনজিও’র পক্ষ থেকে রশিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয়া হয়েছে। মাইকিং করে সবাই সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার খালিদ হোসেন সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, সব রোহিঙ্গা শিবিরের লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা পাহারা দিচ্ছে। মাইকিং করে ক্যাম্পের দুর্বল ঘরগুলো বাঁশ ও রশি দিয়ে মজবুত করতে বলা হচ্ছে। পাহাড় ধসে হতাহতের শঙ্কায় পাহাড়ে অতি ঝুঁকিপূর্ণদের চিহ্নিত করে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এবিষয়ে ১৬-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) জামাল পাশা সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে তাদের সব ধরনের সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের স্বেচ্ছাসেবক টিম প্রস্তুত রয়েছে। কোনো সমস্যা দেখা গেলে তাদের উদ্ধার বা যে কোনো ধরনের সহোযোগিতায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব ঠেকানো এবং ক্ষতি কমাতে কক্সবাজারকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে আসছে। আজ রোববার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে। আঘাত হানার পর ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়বৃষ্টি জলোচ্ছাসসহ এর প্রভাব থাকবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh