ছবিঃ সংগৃহীত।
বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতের পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের অর্থায়নে গঠিত এই ব্যাংকটির মূল লক্ষ্য হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত (এসএমই)–এ অর্থায়ন জোরদার করা। চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে প্রাথমিক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একটি সময়সূচিও নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি বিশেষ টিম গঠনের কাজ শুরু করেছে। আগামী তিন মাস ধরে এসব টিম সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং বিভিন্ন তথ্য যাচাই করে দেখবে। এসব টিমে ব্যাংকগুলোর মধ্য থেকেও কিছু যোগ্য কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই পাঁচটি ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেয়। এক্সিম ব্যাংক ছাড়া অন্য চারটি ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। ৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এই পাঁচ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে একীভূতকরণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জানানো হয় এবং ব্যাখ্যা দেওয়া হয় যে, প্রথম ধাপে এসব ব্যাংককে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় আনা হবে। তবে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার কারণে গ্রাহকদের লেনদেনে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ব্যাংকের গ্রাহক হয়ে যাবেন।
এ প্রসঙ্গে জানানো হয়, ব্যাংকগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপাতত তাদের দায়িত্বে বহাল থাকবেন। তবে পরবর্তীতে এই প্রক্রিয়া এগিয়ে গেলে কিছু জনবল ছাঁটাই হতে পারে এবং পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় তিন বছর সময় লাগতে পারে। ইতোমধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তাদের একীভূত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
এই পাঁচটি ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ যাচাই কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে যদি কোনো ব্যাংক আর্থিকভাবে স্থিতিশীল প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য হলো, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক তৈরি করা, যাতে আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার হয় এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হয়। একীভূতকরণের পর যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি, সেগুলোর দায় ও সম্পদ পৃথক একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ফলে নতুন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে ব্যাংকটির পরিচালন ব্যয় কমে এবং পুনঃঅর্থায়নের সুবিধা বৃদ্ধি পায়।
এই নতুন ব্যাংকের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে, এবং এতে অর্থায়ন করবে সরকার ও কিছু আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী। ব্যাংকগুলো একীভূত হওয়ার পর তাদের সম্পদ, দায় এবং শাখাগুলো নতুন ব্যাংকের অধীনে হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে কিছু শাখা বন্ধ কিংবা স্থানান্তর করা হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্যমতে, এই পাঁচ ব্যাংকের বর্তমানে মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়েছে।
যদিও মালিকানা ও পরিচালনায় অনিয়মের কারণে এই ব্যাংকগুলোর দুরবস্থা তৈরি হয়েছে, তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে যে, তাদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ও ব্যাংকিং অবকাঠামো নতুন ব্যাংকটিকে কার্যকরভাবে পরিচালনায় সহায়তা করবে। বর্তমানে এই পাঁচটি ব্যাংকের রয়েছে ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ। কর্মী ছাঁটাই না করলেও, নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা পুনঃমূল্যায়ন করা হবে।
সবশেষে, এই পুরো একীভূতকরণ প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে 'ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫'-এর আওতায় পরিচালিত হবে। নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh