বিদেশের মাটিতে ঘাম ঝরানো প্রতিটি প্রবাসীই বাংলাদেশের প্রকৃত নায়ক। তাদের কষ্টার্জিত অর্থেই দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ বেশি। বর্তমানে প্রায় ৭৫ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসে অবস্থান করছেন এবং তাদের উপার্জনই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ২৬ বিলিয়ন ডলারের ওপরে তুলেছে। দেশের মোট জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ৫ শতাংশেরও বেশি।
প্রবাসীদের পাঠানো টাকা প্রথমে পৌঁছায় তাদের পরিবারের হাতে। খাবার, শিক্ষা, চিকিৎসা কিংবা ঘরবাড়ি নির্মাণ সবক্ষেত্রেই এ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এর মাধ্যমে কৃষক, দোকানদার, শিক্ষক, চিকিৎসক, রিকশাচালকসহ প্রত্যেকের হাতে সেই অর্থ ঘুরে ফিরে যাচ্ছে। ফলে একজন প্রবাসীর উপার্জন কেবল তার পরিবারের জীবনমানই উন্নত করছে না, গোটা দেশের অর্থনীতিকে করছে শক্তিশালী।
তবে এই সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে অগণিত সংগ্রাম। বিদেশের অচেনা পরিবেশ, ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় তাদের। নির্মাণশ্রমিক, কারখানার শ্রমিক কিংবা ট্যাক্সি চালক প্রতিটি ক্ষেত্রেই দিনরাত পরিশ্রম করে প্রবাসীরা দেশের জন্য যোগাচ্ছেন বৈদেশিক মুদ্রা। অথচ এই শ্রমশক্তির বড় অংশ দেশে ফিরে ভোগ করছেন প্রশাসনিক হয়রানি, সম্পত্তি নিয়ে জটিলতা এবং বিমানবন্দরে লজ্জাজনক অভিজ্ঞতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন প্রবাসীদের প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করার সময় এসেছে। এ জন্য ১৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—দূতাবাসে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন, বিনিয়োগে ১০ বছর ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা, রেমিট্যান্সে ৫% ইনসেনটিভ, প্রবাসী পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যবীমা ও শিক্ষাসুবিধা, বিমানবন্দরে আলাদা দ্রুত ইমিগ্রেশন কাউন্টার, সম্পত্তি রক্ষায় বিশেষ পুলিশ ইউনিট এবং ফেরত আসা প্রবাসীদের প্রশিক্ষণ ও ঋণসুবিধা।
প্রবাসীরা কেবল শ্রমিক নন, তারা দেশের মেরুদণ্ড। তাদের প্রতিটি ঘামবিন্দু আজকের উন্নয়নযাত্রার ভিত্তি, প্রতিটি ত্যাগ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাই সরকারের দায়িত্ব তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা। কারণ রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জীবনই হলো আমাদের গৌরব, তাদের সংগ্রাম আমাদের বিজয় এবং তাদের স্বপ্নই সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
লেখক: ফরেন রেমিট্যান্স এনালিস্ট ও প্রবাসী ব্যবসায়ী