নদীতে নৌকা চালানোই ছিল পাটনী সম্প্রদায়ের একমাত্র পেশা। কালের আবর্তে হারিয়েছে নদী। তাই পেশা পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে পাটনীরা। যে পাটনীদের রক্তের স্রোতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নাম করণ হয়েছে সেই পাটনী সম্প্রদায়ের মানুষ গুলোর দিন কাটে নানা বৈষম্যে। নদী ও নৌকার পরিবর্তে বাঁশ বেতের কাজ করে জীবন চলছে পাটনী পাড়ার বাসিন্দাদের।
ইংরেজ নীল করদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পীতলগঞ্জের হাটে নির্মম ভাবে নিহত জন ঈশ্বরপাটনী নামের এক মাঝি। ঈশ্বরপাটনী কাঁচামাটিয়া নদীতে নৌকা চালাতেন। ইংরেজ নীলকরদের হাতে নির্মম ভাবে খুন হওয়ার পর পীতলগঞ্জের হাটের নাম পাল্টে মাঝি ঈশ্বরপাটনীর নামানুসারে ঈশ্বরগঞ্জ এলাকাটির নামকরণ হয়। ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার শিমরাইল এলাকায় ৩০ ঘর পাটনী পরিবার রয়েছে। পাটনীরা যে জায়গাটিতে ঘাঁটি গেরেছিল তার পাশ দিয়েই বয়ে গেছিল কটিয়াপুরী থেকে কাঁচামাটিয়া পর্যন্ত মাইজগা নদী। বর্তমানে নদীটির কোনো অস্তিত্ব নেই। কালের আবর্তে নদী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ সময় নদী ও নৌকার সাথে মিতালী করেই চলতো পাটনী পাড়ার পাটনীদের। কিন্তু এখন ওদের জীবন চলে বাঁশ বেতের কাজ করে। নদী ও নৌকার ব্যবহার না হওয়ায় পাটনীরা তাদের পূর্ব পুরুষের পেষা পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন।
সম্প্রতি পাটনী পাড়ায় গিয়ে দেখা যায় পাটনীদের জীবনচিত্র। ৩০ ঘর হিন্দু পাটনী পরিবার বসবাস করেন ছোট্ট একটি জায়গায়। তাদের পূর্জ অর্চনার জন্য একটি মন্দির নির্মানের চেষ্টা করলেও অর্থাভাবে মন্দিরটির কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন না। ভোটের সময় অনেকে পাটনীদের মন্দির ও জীবন মান উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দিলেও পরবর্তীকে কেউ তাদের খোঁজ নেয়না বলে অনেকে অভিযোগ করেন।
পাটনীপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, দলবদ্ধ হয়ে নারী পুরুষ বাঁশ বেতের কাজে ব্যস্ত। হাট বারের দিন শুক্র ও সোমবার ব্যস্ততায় কাটায় পাটনী পাড়ার প্রতিটি নারী পুরুষ। কোলা, খুরি, ঢাকি, পাখা, চালুনসহ নানা উপকরণ হাট বারের দিন বাজারে নিয়ে যান পাটনীরা। পাটনীদের তৈরী কোলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে বাঁশ বেতের ব্যবহার ক্রমশ কমে আসায় ক্রমশ ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাঁন মোহন পাটনী। তিনি বলেন, তাদের তৈরি জিনিসের উপযুক্ত বাজার না থাকায় তারা সঠিক দাম পান না।
লক্ষণ চন্দ্র দাস পাটনী বলেন, তাদের পাড়ার বাসিন্দারা বাঁশ বেতের কাজ করেই জীবন চালান। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দাদনে টাকা নিয়ে বাঁশ বেতের জিনিস তৈরি করে বাজারে নিয়ে যান। কিন্তু তাতে লাভের টাকা চলে যায় এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের হাতেই। ফলে কষ্টেই দিন কাটে পাটনীদের। তাই সহজ শর্তে তাদের ঋণ ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
পাটনীপাড়ার সবচেয়ে বৃদ্ধ প্রকাশ চন্দ্র পাটনী। নব্বইউর্ধ্ব প্রকাশ চন্দ্র পাটনী বলেন, ছোট বেলায় দেখেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা নৌকা চালাতো। কিন্তু নদী গুলো আজ নেই। তাই তাদের পেশাও পাল্টেছে। তিনি বলেন, তাদের পাড়ায় একমাত্র মন্দিরটি নির্মাণের জন্য অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কাজ থমকে আছে। তাদের শ্মশানটিও বেহাত হতে চলেছে। তাই তাদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার দাবি জানান প্রকাশ চন্দ্র পাটনী।
পাটানীপাড়ার পাশেই সাবেক সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর লাইলী আক্তারের বাড়ি। তিনি বলেন, পাটনী পাড়ার মানুষের দিনচলে নানা কষ্টে।