চাঁদপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে চাঁদপুর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণিভুক্ত জেলা। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে এ জেলা অবস্থিত। ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজনন অঞ্চল হিসেবে চাঁদপুরকে ‘ইলিশের বাড়ি’ নামে ডাকা হয়। ১,৭০৪.০৬ বর্গকিমি আয়তনের জনসংখ্যা প্রায় ২৪,১৬,০১৮ জনের ছোট্ট শহরে নেই তেমন পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা। ভ্রমন পিয়াসু চাঁদপুরবাসীর এ অভাব পূরণ করতে চাঁদপুরের পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর নান্দনিক চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন পুনাক এর সভানেত্রী ডা. আফসানা শর্মী। তিনি চাঁদপুরবাসীর এ অভাব পূরণ করতে চাঁদপুরে নান্দনিক এক মেলার আয়োজন করেছেন। যা চাঁদপুরবাসীর প্রানের মেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে পুনাক শিল্প ও পণ্য মেলা। মাসব্যাপী এ মেলাটি অল্প সময়ের মধ্যে চাঁদপুরবাসীর প্রানে মেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই শুধু চাঁদপুর জেলাই নয়, আশপাশের জেলা থেকেও এ মেলায় দর্শনার্থীরা আসছেন এবং মেলাটিকে দারুনভাবে উপভোগ করছেন। সরজমিনে মেলায় গিয়ে ঠিক এমনই চিত্র প্রতিবেদকের নজরে আসে।
মেলায় প্রবেশ পথটিকে করা হয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের তৈরী বিশাল এক ফটক দিয়ে। তবে দিনের থেকে রাতে মেলার সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে সেলার নানান রঙের আলোকসজ্জা দেখে। মেলায় রয়েছে আগত দর্শনার্থীদের জন্যে প্রায় শতাধিক স্টল যেসব স্টলে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সবধরণের সামগ্রী। যা সুলভ মূল্যে কিনতে পেরে অনেক খুশি ও আনন্দিত হচ্ছেন। এছাড়াও রয়েছে শিশুদের জন্যে আকর্ষণীয় খেলনা সামগ্রী। খেলনা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে নৌকা, নাগরদোলা, ঝুলন্ত নৌকা, ট্রেন, জাম্পিং স্ট্যান্ডসহ নানা কিছু। যা ঘুরতে আসা আগতে সাথে থাকা শিশুতের মন কেড়ে নেয়ে। এবং ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও তাদের শিশুদের বিনোদন দিতে পেরে নিজেরাও খুশি হচ্ছেন।
ঘুরতে আসা একজন দর্শনার্থী উম্মে সালমার সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, চাঁদপুরে এত সুন্দর একটি মেলা হতে পারে তা আগে জানতাম না। মেলাতে ঘুরতে ভারো লাগছে। এতসুন্দর করে সাজিয়েছে যা ঘুরে দেখতেও ভালো লাগে।
আরেকজন দর্শনার্থী রুবেলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, চাঁদপুরে আসলে বিনোদনের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। কিছু হলেই আমরা বেশিরভাগ মানুষ বড়স্টেশন মোলহেডে ঘুরতে যাই। কিন্তু সেখানে এ মেলারমত সবধরণের ব্যবস্থা না থাকায় আমরা অল্পতেই সন্তুষ্ট হতে বাধ্য হই। এ ধরণের মেলা হওয়ায় আমরা চাঁদপুরবাসীরা অনেক আনন্তিত হয়েছি।
ঘুরতে আসা এক শিশু দর্শনার্থী সামিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আব্বু আম্মুর সাথে ঘুরতে এসেছি। এখানে নৌকায় চড়েছি, ট্রেনে চড়েছি, খুব ভালো লাগছে।
সত্যিই শিশুদের এমন আনন্দে দিতে পেরে ঘুরতে আসা বাবা-মা রাও খুব আনন্দিত। এমনিই এক পরিবারের সাথে কথা হলে তারা প্রতিবেদককে জানান, সত্যি কথা বলতে কি, নিজেদের কাজ শেষে সন্তানদের যে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবো বা সন্তানদের কোন খেলার ব্যবস্থা করে দিবো এমন জায়গা চাঁদপুরে খুব একটা নেই বললেই চলে। এ মেলাতে এত সুন্তর পরিবেশের মধ্যে যে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তারজন্যে মেলা কর্তৃপক্ষ ও পুনাককে অনেক অনেক অভিবাদন জানাই। আমরা চাই এধরণের মেলা আরো হোক।
সুন্দর পরিবেশের তৈরী করা মেলার কর্ণধার আবিদ হোসেন তপু'র সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি প্রথমেই পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার) ও পুনাক এর সভানেত্রী ডা. আফসানা শর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মেলাটির মুল আযোজক হচ্ছে পুনাকের, আমি শুধু ইভেন্টের কাজটা করছি। পুনাকে নির্দেশনা অনুযায়ী বৃষ্টির কথা মাথায় রেখেই আমরা এই আয়োজন করেছি। এ মেলাটিকে চাঁদপুরবাসী সাদরে গ্রহণ করেছে তার জন্যে ধন্যবাদ জানাই। সবাই মেলায় আসছেন এবং কেনাকাটা করছেন, বলতে গেলে তারা একটা উৎসব মনে করছেন।
তিনি আরো জানান, এ মেলাতে স্টল রয়েছে প্রায় ১০০ টি, প্যাভেলিয়ন রয়েছে ৮টি। এখানে থ্রীপিছ, ক্রোকারিজসহ প্রায় সবকিছুই সুলভমূল্যে পাওযা যাচ্ছে। এছাড়াও ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের সাথে থাকা শিশুদের জন্যেও রাখা হয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা। রয়েছে অত্যাধুনিক ধরণের শিশুদের ইভেন্ট। যা চাঁদপুরবাসী হয়তো দেখেনি চাঁদপুরে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা সস্পর্কে জানতে চাইলে কর্ণধার জানান, আসলে মেলা হচ্ছে সাধারণত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রসারিত করার জন্যে। আমরা চেষ্টা করছি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেন প্রসারিত হয়। আমরা চেষ্টা করবো দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন মেলার আয়োজন করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রসারিত করতে।
মেলার নিরাপত্তার নিশ্চিতকরণ বিষয়ে তিনি জানান, আমরা পুরো মেলার ভিতরে এবং বাইরে প্রায় ২৬ টি সিসি ক্যামরের আওতাধীন রেখেছি। এছাড়াও আমাদের মেলা মাঠে রয়েছে ৩৯জন সিকিউরিটি ফোর্স, রয়েছে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, রয়েছে ফাস্টএইড এর ব্যবস্থা। এছাড়াও মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয় পর্যাপ্ত পুলিশের ব্যবস্থা রেখেছেন।
কর্ণধার আবিদ হোসেন তপু আরো জানান, চাঁদপুরবাসীর কাছ থেকে আমরা প্রচুর সারা পাচ্ছি। যদি ভবিষ্যতে এমন মেলার করার সুযোগ পাই তাহলে এর থেকেও আরো বেশি কিছুর আয়োজন করতে পারবো আমরা এবং চাঁদপুরবাসীকে আরো নতুনত্ব কিছু দেয়ার চেষ্টা করবো।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh