× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ওসমানী বিমান বন্দরের বিকল্প হতে পারে শমসেরনগর বিমান ঘাঁটি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

০১ আগস্ট ২০২২, ০৫:৪৭ এএম

স্মরণকালের ভয়াবহ  বন্যার পানিতে  বিমান বন্দরের রানওয়ে তলিয়ে গেলে  ৫ দিন আকাশ পথে যোগাযোগ বন্ধ থাকে সিলেটের । বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ অনেকটা  বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঘটনার পর থেকে নতুন করে আলোচনায় চলে আসে মৌলভীবাজার জেলার  শমসেরনগর বিমান ঘাটি। এটি চালুর প্রয়োজনীয়তা আরও অনেক বেড়ে গেছে এমন যুক্তি সিলেটের বিভিন্ন মহলের । বিমান বন্দরটি চালু হলে আপৎকালীন ব্যবস্থাসহ সিলেট বিভাগে পর্যটকদের আকাশ পথে যাতায়াতের সুবিধা দিতে পারবে প্রাইভেট এয়ার লাইন্সগুলো এমন যুক্তি তাদের । পাশাপাশি কুলাউড়ার চাতলাপুর স্থল বন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হয়ে ভারতে যাওয়া আসার সময় যাত্রীরা এবং  আমদানি রপ্তানি করতে আসা ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন। এছাড়া পর্যটন ও প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় রুটটি খুবই সম্ভাবনাময় এমন দাবি সংশ্লিষ্টদের।  আমদানি রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা মনে করেন, শমসেরনগর  বিমানবন্দর চালু করলে সরকারের রাজস্ব আয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।


সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরেনগরে ওই বিমান ঘাটি বিশাল পরিসরের।এখানের  প্রশস্ত রানওয়ে, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও অবকাঠাগত  সুবিধা বিদ্যমান। বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৫শ ফুট ও প্রস্থ ১৫০ ফুট। এ রানওয়ে দিয়ে বড় বিমানগুলোও সহজে অবতরণ করতে পারবে।
তথ্য মতে, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও দেশের সর্ববৃহৎ এই বিমানবন্দরটি সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর চা বাগানের প্রায় ৬শ' ২২ একর জমি অধিগ্রহণ করে এটি নির্মাণ করা হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত  সংবাদকর্মী জয়নাল আবেদীন জানান,  বিএনপি সরকারে থাকাবস্থায়  ১৯৯৫ সালে প্রাক্তন অর্থ মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের প্রচেষ্টায় ততকালীন  বেসামরিক বিমান চলাচল ও  পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মেজর (অবঃ) এম এ মান্নান এই বিমানবন্দরে বেসরকারিভাবে অ্যারোবেঙ্গল এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট চালু করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয়  সুযোগ-সুবিধার অভাবে এই এয়ার লাইন্স যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে পারেনি।পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগের  সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক দুই মন্ত্রী জাতীয় পার্টির জি এম কাদের এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বিমানবন্দরটি চালুর ঘোষণা দিলেও সেটি কাগজে কলমেই রয়ে গেছে।
বর্তমানে বিমানবন্দরের অবহেলিত ও পতিতভূমি ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল কৃষি খামার। এখানে বিমানবাহিনীর রিক্রুটমেন্ট অফিসও খোলা হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে রানওয়ের অল্প কিছু অংশ।বিমানবন্দরটিতে প্রতিবছর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জাতীয় ক্যাডেট কোর বিমান শাখার সদস্যদের অগ্নিনির্বাপন, প্রাথমিক চিকিৎসা, রাডার নিরাপত্তা, ফায়ারিংসহ অন্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শমসেরনগর সুজা মেমোরিয়াল কলেজের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক আশফাকুর রহমান তোফায়েল সংবাদ সারাবেলা কে বলেন, শমসেরনগর বিমান ঘাটিতে রয়েছে বিশাল রানওয়ে। এটি চালু হলে আমরা দেশে ফেরার পথে এটি ব্যবহার করে সহজে বাড়িতে যেতে পারি। এতে সরকারের আয়ও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
নয়াবাজার কে সি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকারিয়া আহমেদ শমসেরনগর বিমান বন্দর চালুর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংবাদ সারাবেলা কে বলেন, এখনকার  মানুষ ব্যস্ত সময় কাটান। মৌলভীবাজার জেলার ব্যবসা-বানিজ্যখাতে জড়িত ব্যক্তি এবং আগত পর্যটকেরা বেসরকারি বিমান ব্যবহার করে সহজে যাতায়াত করতে পারবে। এতে তাদের অনেক সময় বেচে যাবে। সকালে ঢাকায় গিয়ে বিকেলে ফেরা সম্ভব হবে।
অধিক প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার প্রবাসীরাও  সহজে প্রবাসে যাওয়া আসা করতে পারবে এমনটি মনে করেন এখানের  বিশিষ্ট জনেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজেদের ব্যবসায়িক প্রসারতা বাড়াতে  শমসেরনগর বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে দেশের  বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো।শমসেরনগর বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু হলে লাউয়াছড়া মাধবকুণ্ড সহ মৌলভীবাজার জেলার  পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাসিন্দা ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। যাত্রীসেবার পাশাপাশি ভৌগোলিক কারণে এ বিমানবন্দরের সামরিক গুরুত্বও রয়েছে।
তারাপাশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ রহিম খান বলেন,   মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ,শ্রীমঙ্গল ও সদরে গড়ে উঠেছে অনেক আন্তর্জাতিক মানের হোটেল মোটেল গেষ্ট হাউজ,  রিসোর্ট যেখানে প্রতিনিয়ত দেশ বিদেশের পর্যটকরা যান। এছাড়া দেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক গ্রুপ তাদের সাধারণ সভাসহ মিটিং আয়োজন করে এসব হোটেলে। বিমানবন্দরটি  চালু হলে মৌলভীবাজারের ব্যবসা-বানিজ্যখাতে যেমন প্রসার ঘটকে ঠিক তেমনি পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বিকশিত হবে সম্ভাবনাময় এ খাত।
জানা গেছে, এ বিমানবন্দর চালু করলে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো  ফ্লাইট চালু করার চিন্তা করছে ।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আকাশ পথে যাতায়াতে পৃথিবীর অনেক দেশই গুরুত্ব দিচ্ছে। নতুন বিমানবন্দর তৈরি করছে। যাতায়াত ব্যবস্থা যখন উন্নত হয়, তখন একটি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন সবই বিকশিত হয়। যেহেতু এখানে বিমানবন্দর রয়েছে, নতুন করে তৈরি করতে হচ্ছে না, সুতরাং এটি সংস্কার করে সরকার চালু করতে পারে। এতে তাদেরও রাজস্ব বাড়বে। তেমনই বিমানবন্দরটি চালু হলে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে ও পর্যটনের বিকাশ ঘটবে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা  বলেন, সরকার বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালুর সুযোগ সুবিধা তৈরি করলে আমরা সেখানে প্রতিদিন একটি ফ্লাইট চালাবো। সেখানকার অনেক প্রবাসীদেরও সুবিধা হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলীর বক্তব্য নেওয়ার বার বার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ হয়নি।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.