× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বাগেরহাটের শশীখালী বিলে আমন ফলনে সংশয়, লবণাক্ত পানি ও বৃষ্টিকে দায়ী করছেন অনেকে

জেলা প্রতিনিধি

০১ আগস্ট ২০২২, ০৬:৫০ এএম

আষাঢ় - শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল। তবুও দেখা মিলছে না বৃষ্টির। অপরদিকে প্রখর রোদ। ঋতু অনুযায়ী চলছে আমন চাষাবাদের ভরা মৌসুম। প্রতিবছর এমন সময় আমনের চারা রোপনে ব্যস্ত থাকে কৃষকেরা। কিন্তু এবছর চারা উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছে কৃষক। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমনের বীজতলা। এজন্য বৃষ্টি না হওয়াকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। তবে অনেকের অভিযোগ লবণাক্ততার কারণেই আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মুলত আষাঢ় মাস থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমনের বীজ থেকে ধানের চারা তৈরি করে তা জমিতে রোপন করা হয়। কোনভাবেই তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না আমনের চারা। রয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার বিঘা জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা। বিলের বিভিন্ন এলাকা যেমন বারাকপুর, পূর্ব সায়েড়া, পাটরপাড়া ও সুন্দরঘোনা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। জমিতে হাল চাষ করছে না কেউই। আমনের চারা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে রয়েছে তাদের শঙ্কা। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া, প্রখর রোদে পুড়ে যাওয়া কিংবা চারা সংগ্রহ করে রোপন করলেও ধান না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।


বাগেরহাট জেলা সদরের বৃহত্তর বিল শশীখালী। প্রায় ১৪ হাজার একর জমি নিয়ে এই বিলে ধান চাষের সাথে মৎস্য ও সবজি চাষ করে কিছুটা স্বাবলম্বী এ অঞ্চলের কৃষক ও জমির মালিক। ঋতু অনুযায়ী এ বছর বৃষ্টি না হওয়াতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে চাষিরা। ইতিমধ্যে মৎস্য খামার গুলো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাগদা চিংড়ি চাষে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সাথে মৎস্য খামারে থাকা অন্যান্য মাছের পোনাও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এই বিলের মৎস্য খামারের বাঁধের উপর কিংবা খামারের মধ্যে ঘুরি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি চাষ করে আসছিল এতদাঞ্চলের কৃষক ও জমির মালিকগণ। তরমুজ, লাউ, কুমড়া, করলা, শশা, বেগুন, ঢেঁড়শসহ বিভিন্ন প্রজাতির শাক সবজি উৎপাদন করে তারা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে লাভবান হচ্ছিল। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না থাকায় ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে সকল সবজির বীজ, মাথায় হাত উঠেছে চাষীদের। মূলত শশীখালী বিলের স্লুইজগেট থেকে চৈত্র -বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে বিলের মধ্যে লোনা পানি না ঢুকালে অন্তত সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উত্তোলন করে আমন ধানের চাষ সহ সকল প্রকার সবজি চাষ করা সম্ভব হতো। রাতের আঁধারে কে বা কারা শশীখালি স্লুইজ গেট দিয়ে বিলে লোনা পানি ঢুকিয় সর্বস্বান্ত করেছে হাজার হাজার চাষীকে। বিলের মধ্যে সকল নদীতে লোনা পানি থাকায় সেচ পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ থেকে মিঠা পানি উত্তোলন করেও ধান কিংবা সবজি চাষ কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।

এলাকার চাষী গৌতম কুমার দাস বলেন, ওয়াপদা বেড়িবাঁধ এলাকার মধ্যে এই শশীখালী বিল হওয়া সত্বেও ধান, মাছ ও সবজি চাষে সবাই ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ একটাই কিছু অসাধু লোকজন ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এই বিলে লোনা জল ঢোকাচ্ছে। বিলে লোনা জল না ঢুকলে বৃষ্টি না হওয়া সত্বেও সেচ পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উত্তোলন করেফসল ফলানো সম্ভব হতো।

ষাট গম্বুজ ইউপি সদস্য দুলাল হালদার বলেন, শশীখালী বিলে রাতের আঁধারে একটি চক্র জল ঢুকিয়ে মাছ শিকার করে। ফলে সারা বিলে লোনা জলে ভরে গেছে। স্লুইস গেটটি নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। গেট থেকে জল নিয়ন্ত্রণ হলে আমন চাষ সহ সকল সবজি চাষে ফলন ভালো হতো। তাছাড়া অধিক বৃষ্টি হলে লবণাক্ততা কেটে গেলে ধান চাষে এই জল ব্যবহার করা যেত। এখন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নাই।

ষাটগুম্বজ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত মন্ডল বলেন, আমরা আমনের বীজতলা তৈরিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। নিজেরা উপস্থিত থেকে পর্যবেক্ষণ করছি। শশীখালী বিলে লোনা জল থাকার কারণে আমন চাষসহ সকল প্রকার সবজি চাষ ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা নাই। বৃষ্টি না হলে এই বিলের চাষী ও জমির মালিকেরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ষাটগুম্বজ ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বেই প্রাকৃতিক মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে কখনো এমনটি হয়নি। আমরা খুবই শংকিত। প্রচুর বৃষ্টি ছাড়া বিলের এই পানির লবণ কাটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। শশীখালী বিলের পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি শক্তিশালী "বিল ব্যবস্থাপনা'' কমিটি গঠন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সাথে প্রতিনিয়ত পরামর্শ করা হচ্ছে। চাষীদের এমন দুর্দশা দেখে আমরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করছি। তবে এখনো সময় আছে। প্রচুর বৃষ্টি হলে বিলের পানির লবণাক্ততা কেটে গেলে ধান মাছ ও সবজি চাষে ফিরে আসবে এলাকার কৃষকগণ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, শশীখালি বিলে মূলত লবণাক্ততা ও স্বল্প বৃষ্টির কারণে আমন চাষসহ অন্যান্য সবজি চাষ ব্যাহত হচ্ছে। বাগেরহাট জেলায় বর্তমান আমন মৌসুমে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৭৪ হাজার ৪ শত ২৫ হেক্টর। তারমধ্যে ৩৪ হাজার ১শত ৮৪ হেক্টর জমিতে আমন চাষ এবং বাকি জমিতে উপশি ও হাইব্রিড চাষ হবে। ইতিমধ্যে আমাদের ১০৯ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে।বর্তমানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম যার জন্য আমনের আবাদ কম হচ্ছে। গত দু-একদিনে কিছুটা বৃষ্টি হচ্ছে এবং কৃষকেরা বীজতলা তৈরি করছে। এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হব।
Attachments area

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.