× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ত্রিশালে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ঢেঁকি

ইমরান হাসান, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

০১ আগস্ট ২০২২, ০৭:১২ এএম

একসময় গ্রামাঞ্চলের মানুষ দৈনন্দিন জিবনের প্রয়োজনীয় ছিল ঢেঁকি। এই ঢেঁকির উপর নির্ভর করেই চলতো ধান থেকে চাল, চাল থেকে গুড়া, মরিচ, হলুদেও গুড়ো করার কাজ। ময়মনসিংহের ত্রিশালে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঢেঁকি আর ব্যবহার হয়না। এখন সবাই আধুনিক যোগের ইঞ্জিন চালিত মেশিন, বাসা বাড়িতে ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার ব্যবহারের ফলে হারিয়ে গেছে ঢেঁকির ছন্দময় শব্দ। শহরে অনেক কাল আগে ঢেঁকির ব্যবহার বন্ধ হলেও গ্রামেও এর ব্যবহার আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। তাই এখন আর ঢেঁকির শব্দ শোনা যায়না গ্রামে গ্রামে পাড়ায় পাড়ায়। এখন তা শুধুই স্মৃতি বললেই চলে। তাই বিলুপ্তির পথে গ্রামের  ঐতিহ্যবাহী কাঠের তৈরি ঢেঁকি।


একসময় গ্রামে ঢেঁকির প্রাণ ভড়া যৌবন ছিল। ঢেঁকির ঢেঁক ঢেকানি ও ধুপধাপ ছন্দময় শব্দে মুখরিত ছিল  চারপাশ । তবে যন্ত্র আবিষ্কারের পূর্বে ঢেঁকি শিল্পের বেশ কদর ছিল। একসময় বৈশাখ থেকে চৈত্র সারাবছরই গ্রামাঞ্চলের মানুষ ঢেঁকির উপর নির্ভরশীল ছিল। বিশেষ করে শীতের সময় পৌষ ও মাঘ মাসে ঢেঁকির ব্যবহার অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। তখন ঢেঁকি দ¦ারা  ধান থেকে চাল,গম থেকে আটা, চাউলের গুড়া, মাশ কালাই ডালের গুড়া, নারিকেল ও চিড়ার গুড়া, চাল গুঁড়া করা হতো।


সরেজমিনে দেখা গেছে, ত্রিশালে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের ঢেঁকি। তবে পৌর শহরের ফকির বাড়িতে এখনো অস্তিত্বের দেখা মেলে ঐতিহ্যের ঢেঁকি। ইট-পাথরের তৈরী ইমারতে ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সংরক্ষণে রাখা হয়েছে এই ঢেঁকি। যা পৌর শহর তথা উপজেলার ১২ ইউনিয়নেও  আর দেখা মিলেনা পূর্বের ন্যায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের ঢেঁকি।


এক সময় ভোরে আজানের সঙ্গে সঙ্গে নিস্তব্ধতা ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো ঢেঁকির শব্দ। আমন ধান কাটা শেষে পৌষ মাসে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার শব্দে অনেকের রাতের ঘুম ভাঙ্গত। পরিবারের নারীরা সে সময় নানান ছন্দ গানে গানে  দৈনন্দিন ধান, গম ও চিড়া কুটা, পিঠা তৈরীর চালেরগুড়া  ভাঙার কাজ ঢেঁকিতে করতেন। বিশেষ করে তিন থেকে চার দশক আগেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শবে বরাত, ঈদ, পূজা, নবান্ন উৎসবসহ বিশেষ বিশেষ দিনে পিঁঠা ,পুলি খাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাড়িতে ঢেঁকিতে চালের গুড়া  তৈরি করা হতো।   


বর্তমানে প্রযুক্তিগত যন্ত্রের ব্যবহার ও বিদ্যুৎ চালিত মেশিন দিয়ে ধান ও চাল ভাঙার কারণে ঢেঁকি আজ কদরহীন। গ্রামে এখন পুরোপুরি যান্ত্রিক হাওয়া লেগেছে। গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এক সময় ঢেঁকির ব্যবহার ছিল ঘরে ঘরে  সেই ঢেঁকি- আজ মুখ থুবড়ে  পড়েছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনের কাছে।

ত্রিশাল পৌর এলাকার ফকির বাড়ির আব্দুল মজিদ জানান, আমাদের বাড়িতে এখনো একটি ঢেঁকি রয়েছে। সংরক্ষণ করে রেখেছি। এখনও আমরা ঢেঁকির ব্যবহার করেই  ঢেঁকিতে তৈরি করা চালের গুড়া দিয়ে পুলি, ভাপা, পাটিসাপটা, তেলে ভাজা, চিতইসহ বাহারি পিঠা-পুুলি বানিয়ে খাই। বিদ্যুৎ চালিত মেশিনে ভাঙানো চাল দিয়ে সেই ঢেঁকিছাঁটা চাল ও চালের পিঠার গন্ধ ও স্বাদ পাই না। এখন তো কোনো বাড়িতে ঢেঁকি চোখেই পড়েনা। এখনো অনেকে আমাদের বাড়িতে আসে ঢেঁকি ব্যবহার করার জন্য। তাই নিজের প্রয়োজন ও ঐতিহ্যে ধরে রাখার জন্য ঢেঁকি সংরক্ষণ করে রেখে দিয়েছি। অথচ আগে প্রায় বাড়িতেই ঢেঁকি ছিল।

ত্রিশাল উপজেলার একাধিক প্রবীণরা বলেন, ঢেঁকি আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। এক সময় হয়তো এই ঐতিহ্যের দেখা মিলবে কেবল জাদুঘরে। আধুনিক যুগে নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে যেসব খাবার খাই তাতে কোন স্বাদ নেই গন্ধ নেই। দিন দিন ঢেঁকি শিল্প বিলুপ্ত হলেও এ শিল্পকে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই।

স্থানীয় স্কুলের প্রবীন শিক্ষক হরমুজ আলী বলেন, ঢেঁকি আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। আগে সবার ঘরেই এর ব্যবহার হতো। আধুনিকতায় ছোয়ায় ও প্রযুক্তির ব্যবহার সহজ হবার ফলে এটার ব্যবহার কেউ কওে না। তবে অনেকে এর ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও পিঠা খেতে রেখে দিয়েছে। তবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি আগামী প্রজন্মকে চেনাবার জন্য হলেও আমাদের সংরক্ষন করা প্রয়োজন। নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে এটা আমাদের স্বর্ণযোগ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ছিল। এটা তাদের পূর্ব পুরুষরা ব্যবহার করতো।

সুশীল সমাজের অনেকেই মনে করেন, সরকারী বা বেসরকারীভাবে আমাদের হারানো ঐতিহ্যগুলো নিয়ে বিশেষ মেলার আয়োজন করলে বর্তমান প্রজন্ম ঢেঁকিসহ হারানো ঐতিহ্যগুলো চিনতে পারবে এবং তা রক্ষায় এগিয়ে আসবে।



Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.