পারিবারিক পুষ্টি বাগান। কৃষিতে এক নতুন দিগন্ত। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর সরকার এবার দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য কাজ শুরু করেছে। চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু পুষ্টির দিক দিয়ে দেশের মানুষ এখনও পিছিয়ে আছে। তাই পুষ্টির ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে দেশের সব মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। সেই সঙ্গে চায় পুষ্টিমান প্রজন্ম তৈরি করতে।
ব্রহ্মোত্তর পাড়া গ্রামের কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘ আমার বাড়ীর সামনে পরে থাকা প্রায় দেড় শতক জায়গায় কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহোযোগীতায় পুষ্টি বাগান করেছি । বাগানে লাউ, বেগুন, শিম, বরবটি, পেঁপে, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা, কায়তা, পাটশাক, লালশাক ও সবুজ শাক চাষ করছি। এখন আর আমাদের বাজার থেকে শাক-সবিজ কিনতে হয় না। নিজেদের বাগানে শাক-সবজি জৈব সার দিয়ে চাষ করছি।
আফতাব উদ্দিনের স্ত্রী জোহরা বেগম বলেন, বাড়ির সামনের প্রায় দেড় শতক জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল, ময়লা ফেলতাম, গরু-ছাগল বেঁধে রাখতাম দুর্গন্ধ ছড়াত। এখন এ জায়গায় অনেক ধরনের শাক-সবজির চাষ করছি। টাটকা সবজি সংগ্রহ করে খেতে পারছি। বাগানটি করে আমার উপকৃত হয়েছি।
রূপা আক্তার বলেন, আমাদের পারিবারিক পুষ্টি বাগানে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করি না। জৈব সার, মুরগির বিষ্ঠা, মাছের পানি, গুলের পানি উচ্ছিষ্ট সার হিসেবে ব্যবহার করছি। অর্গানিক উপায়ে চাষ করায় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে । নিজে খাওয়ার পাশাপাশি আমরা বাজারে বিক্রি করি আবার অনেকে বাগানে এসে সবজি কিনে নিয়ে যান । কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এটি সম্ভব হয়েছে, বিশেষ করে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আমাদের সার্বক্ষনিক সহোযোগিতা করেন । তিনি আমাদের বীজ দিয়েছেন, কোথায় কী বীজ লাগাতে হবে, কিভাবে জাংলা দিতে হবে, সব শিখিয়ে দিয়েছেন।
ব্রহ্মোত্তর পাড়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোমিনুর মোস্তফা জামান আলাপনকে বলেন, ‘চলতি বছরের শুরু থেকে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন শুরু হয়। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণ, বীজ ও সার দিয়ে পরিকল্পনামাফিক এ বাগান তৈরি করা হয়। এর সুফল পাচ্ছেন বাগান মালিক ও এলাকার বাসিন্দারা। বাগানের মালিকরা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শাক-সবজি গ্রহণ করতে পারছেন, উৎপাদনে মনোনিবেশ তৈরি হচ্ছে এবং সংসারের কাজের ফাঁকে তারা কৃষিতে সময় দিতে পারছেন। এটি কৃষি বিভাগের একটি সফলতা।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মমতা সাহা আলাপনকে জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিলো যেন এক ইঞ্চি জমিও খালি না থাকে। সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ । সৈয়দপুরে বাড়ির আঙিনায় পুষ্টি বাগান তৈরি হচ্ছে। কামার পুকুর ইউনিয়নের ব্রহ্মোত্তর পাড়া ব্লক এখন নিরাপদ সবজির গ্রাম হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে । এখানকার বাসিন্দারা এখন নিরাপদ সবজি গ্রহণ করছেন। সরকারিভাবে তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে । সুবিধাভোগী কৃষকরা শাক-সবজির পাশাপাশি কমলা, পেয়ারা, মাল্টা ও লেবুও উৎপাদন করছেন ।
প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির উঠানে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পে কাজ চলমান আছে । এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যহত জমিতে একশ’টি করে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হবে। এসব বাগান থেকে উৎপাদিত হচ্ছে নিরাপদ শাক-সবজি, মসলা ও মৌসুমি ফল। যা সারা বছরের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে আয় বৃদ্ধি করছে সুবিধাভোগী পরিবারগুলোর।
© 2023 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh