নওগাঁয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হেফাজতে থাকা একটি নবজাতক শিশু চুরির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ চুরির ঘটনা ঘটে। এর আগে রোববার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের চতুর্থ তলার সিঁড়িতে পড়ে থাকা অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয় ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত রোববার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলার সিঁড়িতে এক টুকরো কাপড়ে মোড়ানো ছিল নবজাতকটি। তার কান্নায় হাসপাতালে সেবা নিতে আসা মানুষ ভিড় করে। মানুষের চিৎকার শুনে এগিয়ে যান দায়িত্বরত ওয়ার্ডবয় রাজু হোসেন। এসময় শিশুটি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিল।
অজ্ঞাত হওয়ায় রাজু শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে ৫ম তলা শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করান। শিশুটি ৪-৫ দিন বয়সী হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তাকে উদ্ধারের পর বিষয়টি তাৎক্ষণিক সদর মডেল থানা পুলিশকে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিরপত্তার জন্য রাতেই এক নারী পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জানা যায়, শিশুটিকে দেখভালের জন্য হাসপাতালে শিশুটির সঙ্গেই ছিলেন ওই নারী কনস্টেবল। ওইদিন রাতে অক্সিজেনের ব্যবস্থাসহ চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করে তোলা হয়। পরে শিশুটিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কেএমসি ইউনিটে রাখা হয়েছিল। পরের দিন এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জিম্মায় শিশুটিকে রেখে চলে আসেন ওই নারী কনস্টেবল। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত শিশুটিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কেএমসি ইউনিটে দেখা গেলেও দুপুর ১টার পর আর দেখা যায়নি।
ওই ওয়ার্ডের ওই সময়ে দায়িত্বরত ইন্টার্ন নার্স আকলিমা খাতুন বলেন, দুপুর ১২টার দিকে বাচ্চার অভিভাবক পরিচয়ে দুইজন মহিলা কেএমসি ইউনিটে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করেছিল। পাশের কক্ষে রোগী দেখতে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর কেএমসি ইউনিটে ফিরে এসে কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে দরজা বন্ধ রেখে তারা আমাকে কিছুক্ষণ পর আসতে বলেন। একটু পর এসে দেখি, শিশুটি এবং ওই দুই নারী কোথাও নেই।
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স মৌসুমী আক্তার বলেন, বাচ্চাটিকে কে বা কারা নিয়ে গেছে এ বিষয়ে কোনো সাংবাদিকের সাথে কথা বলা নিষেধ আছে। তাই আমরা কিছু বলতে পারবো না।
জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. রতন কুমার সিংহ বলেন, মঙ্গলবার সকালে রাউন্ডে বাচ্চাটিকে দেখবার পর একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তারপর বাচ্চাটি কীভাবে চুরি হলো আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কিছু জানতে হলে তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, শিশুকে উদ্ধারের পর থানায় জিডি এবং এজাহার করা হয়েছিল। বাচ্চাটিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বুঝেও দেওয়া হয়। আমরা শুধু নিজেদের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। পরে বাচ্চাটিকে ছাড়পত্র ছাড়াই কে কীভাবে নিয়ে গেছে আমার জানা নেই।
নওগাঁ সদর মডেল থানার (ওসি তদন্ত) রাজিবুল ইসলাম বলেন, একটি শিশু পাওয়া গেছে মর্মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় অবগত করলে সেখানে একজন নারী কনস্টেবলকে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করে। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে অভিভাবক প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগতভাবে বাচ্চাটি তারা হস্তান্তর করবে এমন লিখিত দিলে বাচ্চাটি তাদের হেফাজতে বুঝিয়ে দেওয়ার পর নারী কনস্টেবল চলে আসে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক এবং সদর ইউএনও মহোদয় অবগত আছেন। বাচ্চাটি হারানোর বিষয়টি এখনও আমাদেরকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়নি। বাচ্চা হারানোর ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া ওই নবজাতককে শিশু আইন অনুযায়ী জেলা কমিটির সভার মাধ্যমে সমাজসেবার ছোটমনি নিবাসে পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় পরামর্শ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি শিশুটিকে হাসপাতালে গিয়ে সুস্থ অবস্থায় দেখেও এসেছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা। পরে জানলাম শিশুটির অভিভাবক হিসেবে একটি পক্ষ দাবি করছে। এক্ষেত্রে তারা আসলেই শিশুটির অভিভাবক কি না? সে বিষয়টি পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছিল। এরমধ্যেই হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানলাম। বাচ্চা হারানোর বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।