ছিপ ফেলে মাছ ধরা পৃথিবীব্যাপী মানুষের অন্যতম একটি শখ। আমাদের দেশে নদী-নালা, পুকুর, ডোবাসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ছিপ ফেলে মাছ শিকার করার প্রচলন আছে। অনেকেই ছিপ দিয়ে মাছ শিকার করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকে শখের বসে বাহারি ছিপ বা হুইল বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে থাকেন।
সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীতে বুড়িদহ খেয়া ঘাটে বাহারি ছিপ দিয়ে মাছ শিকারের উৎসবে মেতেছেন শৌখিন মৎস্য শিকারিরা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বুড়িদহ খেয়া ঘাটে মাছ শিকারের এই উৎসব চলে। ছোট, বড়, যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ মাছ শিকারে বসেন সেখানে।
বুধবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০০ জন শিকারি পাড়ে বসে নদীতে বরশি ফেলেছেন। উৎসুক লোকজনও আছেন। এর মাঝে ফ্লাস্কে করে চা আর ব্যাগে পান সিগারেট নিয়ে হকারও চলে এসেছেন। সব মিলিয়ে এ দৃশ্য মন ভাল করে দেওয়ার মত।
জানা যায়, এই নদীতে পানি কমতে শুরু করলেই বড়শি নিয়ে মানুষ মাছ শিকার করেন বুড়িদহ খেয়াঘাটে। এখানে অনেকে পেশা হিসেবে আর অনেকে শখের বসে মাছ শিকার করতে আসেন। সকাল ৮টা থেকে রোদে পুড়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করেন তারা। এদের অনেকের মাছ শিকারের নেশা। তাই এই চড়া রোদে ছাতা ছাড়াই বসে থাকেন; আর ভাবেন কখন বড়শিতে একটা মাছ আটকাবে। তাদের অনেকই নিরাশ হন না, ছোট মাছ এমনকি রুই, কাতলা, আইড় ও বড় বোয়াল মাছ আটকা পড়ে বরশিতে।
বুড়িদহ খেয়াঘাটের মাঝি গোপাল চৌধুরী বলেন, কয়েক বছর থেকে এই জায়গায় বরশি দিয়ে মাছ ধরা খুব বেড়ে গেছে। বালি উত্তোলনের ফলে এই স্থান অনেক গভীর হয়ে গেছে। মাছ এসে এখানে আশ্রয় নেয়। বড় বড় মাছ পাওয়া যায় এখানে। স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে মাছ ধরতে আসেন এখানে। এছাড়া ছিপ ফেলে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে চা-পান-সিগারেটের হকার বেড়েছে এবং তাদের আয় রোজগার বেড়েছে। বাহারি হুইল বড়শি, মাছের দামি চার নিয়ে আসেন শিকারিরা। মাছ ধরার চার তৈরিতে যে পরিমাণ খরচ সে টাকা দিয়ে মাছ কেনা যায়। তবুও মাছ ধরার শখ বলে কথা। প্রতিদিন বিকেল হলে মানুষজন মাছ ধরা দেখতে ভিড় জমায় বুড়িদহ ঘাটে।
উপজেলার প্রসাদপুর বাজার থেকে আসা মাছ শিকারি তুষার জানান, বড়শিতে মাছ ধরা তার শখ। আর এই শখ এখন তার নেশায় পরিণত হয়েছে। ছিপে মাছ ধরতে তার খুব ভাল লাগে। তাই প্রতিদিন বিকেল হলেই তিনি দুই-তিনটা হুইল বড়শি নিয়ে চলে আসেন বুড়িদহ ঘাটে। তিনি বলেন, আমার মত অনেকেই আছে যারা বিকেল হলে এখানে মাছ শিকার করতে আসেন। এদের মধ্যে অনেকে সরকারি চাকরি করেন। আমি কোনদিন মাছ পাই আবার কোনদিন পাইনা। এছাড়াও অনেক পেশাদার মাছ শিকারি আছেন যারা বিক্রির জন্য মাছ শিকার করে থাকেন।