ভোরের আলো ফোটার পর থেকে চাষি ও ব্যবসায়ীরা নৌকায় পাট নিয়ে হাজির হন সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের যমুনার চর নাটুয়ার পাড়া হাটে। সপ্তাহে দুইদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের আসা যাওয়া ও বেচাকেনা সব কিছুই চলে নৌকায়। সকলের হাঁক ডাকে জমে উঠে বেচাকেনা।
পাট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি মন পাট বিক্রি হচ্ছে ২৫শ থেকে ২৬শ টাকায়। এতে প্রতি হাটে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার পাট কেনাবেচা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই হাটে জেলার কাজিপুর ছাড়াও বগুড়া, টাঙ্গাইল ও জামালপুরের কৃষক ও পাইকারীরা আসে পাট ক্রয় ও বিক্রয় করতে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯ টি উপজেলায় এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬,৮৪০ হেক্টর জমিতে। চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১২,৩৬৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে তোষা পাট ১১,৭৭০ হেক্টর মেস্তা পাট, ৫৩৫ হেক্টর দেশি পাট, ১০৫০ হেক্টর কেনাপ পাট, ৩,৩৮৫ হেক্টর। এই সকল পাট কাটা ও ধোয়ার পর শুরু হয়েছে পাট বাজারজাতকরণ। ঐতিহ্যবাহী নাটুয়াপাড়া হাটে যমুনা নদীর পাড়ে নৌকার উপরে জমে উঠেছে পাট বেচা-কেনা। পাটের ভালো দাম থাকায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।
হাট কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম জানান, ভোরের আলো ফোটার পরেই জেলার কাজিপুর, জামালপুরের সরিষাবাড়ি, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট, শেরপুর, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাট ক্রয় করতে ব্যাপারীরা আসে এই ঐতিহ্যবাহি হাটে। প্রতি মন পাট বিক্রি হচ্ছে ২৫০০টাকা থেকে ২৬০০ টাকায়। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। কেনাবেচা এবং আসা যাওয়া সহজ হওয়ায় এই হাটের কদর দিনদিন বাড়ছে। এবার পাটের দাম ভাল থাকায় কৃষকরাও খুশি।
সরিষাবাড়ি উপজেলার পাটের ব্যাপারী তাহের আলী জানান, পাট কিনে এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় তোলা সহজ হয়। যোগাযোগের সুবিধা ও পরিবহন খরচ কম হয়। প্রতিহাটে তিনি ৫০ থেকে ৬০ মন পাট নৌকা থেকে ক্রয় করে থাকেন।
ভুয়াপুরের সোলেমান ব্যাপারি বলেন, অন্য হাট থেকে পাট কিনে নৌকায় তোলা অসুবিধা হয়। তাই নৌকা থেকে পাট কিনি। তিনি প্রতিহাটে ৬০-৭০ মন পাট ক্রয় করেন।
নাটুয়ারপাড়ার কৃষক আব্দুর হাদিউদজ্জামান বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম বন্যায় ডুবে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে তবুও বিক্রি করে বেশ দাম পেয়েছি।
হাট ইজারাদার ও নাটুয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, এ হাটে কাজিপুরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাট ক্রয়-বিক্রয় করতে পাইকাররা আসে। প্রতি হাটে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার মন পাট ক্রয়- বিক্রয় করে। এবারের পাটের দাম ভালো থাকায় কৃষকরা খুশি। অগাস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই তিন মাস ভাসমান হাটে পাট ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকৃত মৌসুম। নৌকা ছাড়া শুকনো স্থানেও এখানে হাট বসে বলে তিনি জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সুত্রধর জানান, এ বছর বন্যার কারণে পাটের আশানুরূপ ফলন হয়নি। হাটে ২৫শ থেকে ২৬শ টাকায় মন দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। আগের চেয়ে তুলনায় দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা এখন পাট চাষে মনোযোগী হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এবছর বিঘা প্রতি গড়ে ৭ থেকে ৮ মন পাটের ফলন হয়েছে বলে তিনি জানান।