পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় ধানসি এবং মাছ ধরার চরের সাব-ইজারা দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে মৌডুবী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছলেমান প্যাদার বিরুদ্ধে। টাকা নিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ধানসির চর না দিয়ে অন্যত্র ইজারা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব-এর নিকট আত্মীয় পরিচয়ে মৌডুবী ইউনিয়ন সংলগ্ন সংরক্ষিত বনের বিভিন্ন চরে মাছ ধরা এবং ধানসি কাটার ইজারা দিয়েছেন তিনি। যারা টাকা দিতে অপরাগতা করেন তাদেরকে চরে মাছ ধরতে যেতে দেওয়া হয়না বলেও অভিযোগ করেন জেলেরা।
মৌডুবী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কর্মী রিয়াজ হাওলাদার জানান, ‘চর দেয়ার কথা বলে ছলেমান চার ধাপে ৯০ হাজার টাকা নেয় আমার থেকে। কিন্তু আমাকে চর না দিয়ে চড়া দামে উলানিয়ার এক ব্যবসায়ীর কাছে ইজারা দেয়।’ তুফানিয়া চর সাব-ইজারা নেয়া মোসলেম জানান, ‘চর ওই ছলেমান ভাই-ই পাইছে। হে আবার এমপির প্রতিনিধি তো। আমি আর হাবিব খাঁ মিলে এবছর ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় নিয়েছি। কাগজ দিছে ছলেমান ভাই, এমপির সুপারিশ দিছে তো হে। বিট অফিসারও কাগজ দিছে। একটা পারমিট দিছে আরেকটা বিএলসিসি দিছে। সাব-ইজারাদার হিসেবে দুই থেকে আড়াই মাস তুফানিয়া চরে ধানসি কাটবো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে বলেন, ‘আমরা এই চরে মাছ ধরে কোনভাবে সংসার চালাই। চরে মাছ ধরতে প্রত্যেক বছর ছলেমানকে মোটা অংকের টাকা দেওয়া লাগে। যদি টাকা না দেই, তাহলে সে চরে মাছ ধরতে যেতে দেয় না। টাকা না দিয়েও উপায় নেই। সে নাকি এমপি সাহেবের নাতি। হ্যার অনেক ক্ষমতা।
প্রতিবেদকের সাথে ছদ্মবেশে কথা হয় চর তালুকদার সাব-ইজারা নেয়া মামুন ভূঁইয়া সাথে। তিনি বলেন, ‘এবছর চর নিতে অনেক খরচ। দলীয় ঝামেলা আছে, এইসেই। ওঠি হিসাব কইরা, ওই কথা কারো কাছে কওয়া যায়না। আসলে ওই চরে ব্যবসা বাণিজ্যে করি তো। কারো কাছে কইতে রাজি না। আমরা আদত্ব কথা কাউরেই বলি না, যে আমাগো কয় টাকা খরচ হয়। আমগো লাগে আমরা আনি, হেগো লাগে হেরা টাহা খায়। উন্মুক্ত জিনিস এইসেই কইয়া খমাহা একটা মানুষরে বিপদে হালাইয়া লাভ আছে। আমনের লগে আমার লগে একটা চুক্তি বাণিজ্য হইয়া যায় ওইডা তো মানুষ বিশ্বাসের উপর চলে। এহন ব্যাডায় আমার ফরে আছে আমারে দেছে। আমার ফরে থাকবে না আমারে দিবে না। আমার একটা কথায় হ্যার ক্ষতি হইয়াও তো যাইতে পারে। ছলেমান এমপি সাইবের নাতি। চর তালুকদার শুধু ছলেমানের থেকে নেয়া।
মৌডুবী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এমপি মহোদয় নাকি বিট অফিসারকে বলে দিছে তাদের ছাড়া বাহিরের কাউকে চর দিবা না। এই কথা বিট অফিসার ও ছলেমান বলছে। ফরেস্ট টাকা পায়। তারা দেয় এমপির প্রতিনিধি হিসেবে। এ ব্যাপারে কেউ বিরোধিতা করতে যায় না। যেহেতু এইডা সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা। এইডা ইজারা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। গতবছর আমার থেকে চর দিবে বলে জামিল এক লাখ টাকা নিছে। হেরপর টাকাও না চরও না।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ‘চর তালুকদার, গ্যাপের চর, জাহাজমারা ও মায়ার চর মাছ ধরা এবং চর তুফানিয়া ধানসির জন্য মোটা অংকের লেনদেনের বিনিময়ে সাব-ইজারা দিয়েছে ছলেমান প্যাদা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ফরেস্ট ক্যাম্পের বিট কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলেও জানা যায়।
সংসদ সদস্যের সুপারিশ করা চরের ইজারাদার ও মৌডুবী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছলেমান প্যাদা বলেন, ‘আমাগোরে এমপি সাহেব চর দিছে। আমি যেহেতু এমপির প্রতিনিধি। আমার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। এবছর অহনও লেনদেন হয় নাই। এইডা তো মনে করেন আশ্বিনের ১৫-২০ শে লেনদেন হইবে। লেনদেন হইলে ওদের কাগজ দিবো। কিসের কাগজ দিবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই যে এমপির সুপারিশ আর ফরেস্টে পারমিশন কাগজ দিবে। যাতে কোস্টগার্ড না ধরে।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব-এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সংযোগ না পাওয়ায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।