আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী (৭০)। বয়স যখন ২৩ বছর তখন হঠাৎ করে বাড়ী থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। তার সন্ধানে হন্য হয়ে খুঁজতে থাকে স্বজনরা। অনেকে ধারণা করেন কোনভাবে মৃত্যু হয়েছে তার। অবশেষে নিখোঁজের ৪৭ বছর পর আপন ঠিকানায় ফিরে এসেছেন এই কুদ্দস মুন্সী।
স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রামের মৃত খোকা মুন্সীর ছেলে কুদ্দুস মুন্সী। যুবক বয়সে রোকেয়া বেগম নামের এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি । বছর খানেক পর তাদের কোলজুড়ে আসে আব্দুল করিম নামের এক সন্তান। এরই মধ্যে কুদ্দুস মুন্সী তার বাবার পিটুনি খেয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে যায় । কিন্ত দিন শেষে রাত ঘনিয়ে আসলেও আর ফিরে আসেনি কুদ্দুস মুন্সী। এরপর থেকে স্বজনরা তাকে বিভিন্নভাবে খুঁজেতে থাকে। দীর্ঘদিন খোঁজাখুঁজি অব্যাহত থাকলেও কিছুতে সন্ধান মেলেনি কুদ্দুস মুন্সীর। এভাবে যুগ যুগ ধরে নিখোঁজ থাকায় অনেকে ধারণা করেন কুদ্দুস মুন্সী হয়তো মারা গেছে। এমন ধারণা থেকে পরিবাররা আর কখনো তাকে খোঁজার চেষ্টা করে নাই। তবে স্ত্রী রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে আব্দুল করিম সবসময় প্রার্থনা করতেন কুদ্দুস মুন্সীকে ফিরে পেতে। অনেক সময় কেঁদে ফেলতেন অশ্রুজল। এভাবে মা-ছেলে কাঁদছিলেন ৪৭ বছর।
এরই একপর্যায়ে গত ১৫ দিন আগে পলাশবাড়ী উপজেলার হাজিরহাট গ্রামের প্রতিবেশী হারুন মিয়া দিনাজপুরের রানীগঞ্জের শ্বশুর বাড়ীতে বেড়াতে যায়। সেখানে দেখা হয় কুদ্দুস মুন্সীর। চেনা-পরিচয়ের চেষ্টায় আবার সেখান থেকে কুদ্দুস মুন্সী রংপুরের পীরগঞ্জের কুমেতপুর এলাকায় অবস্থান করে। বিষয়টি পরিবারকে জানানো হলেও প্রায় ১৫ দিন আগে কুমেতপুর থেকে কুদ্দুস মুন্সীকে উদ্ধার করে বাড়ী আনেন স্বজনরা। এরপর থেকে নিখোঁজ হওয়া ওই ব্যক্তিকে দেখতে উৎসুক মানুষেরা ভিড় জমায়।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের হাজিরহাট গ্রামের নিখোঁজ কুদ্দুস মুন্সীর নাতী নাঈম মিয়া।
নাঈম মিয়া আরও বলেন, জন্মের পর থেকে দাদুকে কখনো দেখিনি। শুধুই শুনেছি তিনি বাড়ী থেকে রাগ করে বের হয়ে গেছে আর ফিরে আসেনি। এরই মধ্যে দাদুকে পেয়ে মহাখুশি আমরা।
কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক এ ঘটনার সতত্য স্বীকার করে জানান, আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী নিখোঁজ হওয়ার ৪৭ বছর পর বাড়ীতে ফিরে এসেছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি অন্য এক জায়গায় বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছিলেন।