কক্সবাজার জেলায় চলছে প্রায় তিন শতাধিক করাতকল। সরকারি কোন অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর চলে আসলে ও নির্বিকার বনবিভাগ। ফলে করাতকলের থাবায় নিধন হচ্ছে বনজ, ফলজ, ওষুধি সহ নানা প্রজাতির গাছ। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য,আর বিলুপ্ত প্রায় পশু পাখির অভয়ারণ্য বাসস্থান। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বনাঞ্চলের আশপাশে অবৈধভাবে এসব করাতকল স্থাপন করা হলেও তা উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করছেন সমিল মালিকদের কাছ থেকে।
সংরক্ষিত বনের ভিতর বা আশেপাশে করাতকল স্থাপনের নিয়ম নেই। অথচ জেলায় বিভিন্ন সংরক্ষিত বিভিন্ন বনাঞ্চল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতশত অবৈধ করাতকল।
করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা-২০১২ আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কোন ব্যক্তি লাইসেন্স ব্যতীত কোনো করাত-কল স্থাপন বা পরিচালনা করতে পারবেন না। বন বিভাগ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বনের মধ্যে এই করাতকল স্থাপনের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মিল মালিকরা সরকারি কোন নিয়ম মানছেন না। অনেকেই ২০/২৫ বছর ধরে অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছেন অবৈধ স’মিল।
কক্সবাজারের মহেশখালীর রেঞ্জের শাপলাপুর জেমঘাট সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এক কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করেন মোকতার, মাতারবাড়ী নতুন বাজার সিএসজি স্টেশন এলাকায় মোনাফের করাত কল। এসব কলে প্রতিদিন চিরাই হচ্ছে বনাঞ্চলের অসংখ্য চোরাই কাঠ। এ রেঞ্জে আরো রয়েছে ১৭ থেকে ২০ টির অধিক অবৈধ স-মিল। এসব স’মিল গুলোর একটিরও বন পরিবেশের বৈধ কাগজপত্র (লাইসেন্স) নেই। সবই স্থানিয় বিটে মাসোহারা দিয়ে ১৫/২০ বছর ধরে অবৈধভাবে চালিয়ে আসছে মিল মালিকরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ করাতকলের জন্য বনাঞ্চলের কোন গাছপালা রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। করাতকল বিধিমালা, ২০১২-এ বলা আছে, জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার এবং সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। তবে এই নিদের্শনা কেউ মানছে না। যত্রতত্র বসানো হয়েছে করাতকল।
চকরিয়া সুন্দরবন রেঞ্জ কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, তার দায়িত্বরত রেঞ্জের মধ্যে ২৩টি করাতকল রয়েছে,একটির লাইসেন্স আছে মাত্র। তারমধ্যে ১২টির বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব কটি অবৈধ করাতকল মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। এবং তার রেঞ্জের আঠারো হাজার একর বনভূমির সবজমি জবর দখল হয়ে গেছে। তার স্টাফ আছে মাত্র একজন।তাই অবৈধ জবর দখল কারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে চাইলেও জনবল না থাকার কারণে করতে পারেন না বলেও জানায় সে।
কক্সবাজার (উত্তর) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকারকে এ ব্যাপারে অবহিত করে বক্তব্য জানতে চাইলে অবৈধ করাতকলের তালিকা চেয়ে বলেন, মোবাইলে কথা না বলে সরাসরি অফিসে গেলে বিস্তারিত জানাবেন।
উল্লেখ্য যে,কক্সবাজারে উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় করাতকল আছে ১১৮টি। এর মধ্যে ১১২টিই অবৈধ। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় বৈধ করাতকল আছে ৮১টি। এর মধ্যে ৭৩টি অবৈধ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh