সর্বনাশী তিস্তার ভাঙ্গনের প্রায় ৩ দশক পর প্রকৃতি প্রেমিদের আবার যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রামডাকুয়া গ্রামের সবুজ ছায়ায় ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যের সেই আমের সারি।
দশক তিনেক আগে উপজেলা সদর থেকে সোজা পূর্ব দিকে এক কিলোমিটার দূরে রামডাকুয়া গ্রামের মূল রাস্তা থেকে উত্তরের দিকে নেমে যাওয়া রাস্তাটির দুই ধারে ছিল শতবর্ষী ৫০-৬০টি বিশাল আকৃতির আম গাছ। সাথে ছিল দেবদারু, বকুল ফুল ও লিচুসহ আরো কয়েকটি বড় বড় গাছ। কিন্তু ১৯৮৮ সালের দিকে প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় সর্বনাশী তিস্তা তার ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। ভেঙে তছনছ করে দেয় ওই জনপদ। একে একে ভেঙে যায় মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুলসহ আমের সাইর নামে ছায়ায় ঘেরা ঐতিহ্যবাহী রাস্তাটি। অধিবাসীরাও যে যেভাবে পারেন বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়ে শুরু করেন বসবাস।
তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের পর রাক্ষসী তিস্তার প্রবাহ হ্রাস পেতে থাকলে ২০০০ সালের দিকে জেগে ওঠে চর। ফলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অধিবাসীরা আবার ফিরতে শুরু করেন নিজ ভূমিতে। স্কুল ও মাদ্রাসা ফেরানো সম্ভব না হলেও গড়ে তোলেন ওই স্থানে একটি সুদৃশ্য মসজিদ। হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে প্রায় একযুগ আগে মসজিদ কমিটি ও স্থানীয়দের উদ্যোগে ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মাটি কেটে পুনরায় রাস্তাটি তৈরি করেন। রাস্তাটি তৈরির বছর দুয়েক পর ৩শ মিটার দৈর্ঘ্য এ রাস্তাটির দুই ধারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩০০টি আম গাছ লাগানো হয়। গাছগুলো বড় হয়ে রাস্তাটি এখন এক অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করেছে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতি প্রেমিদের। আর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে প্রকৃতির অপরূপ শোভা উপভোগ ও সময় কাটানোর জন্য ছুটে আসছেন অনেকেই। রয়েছে একটি চা দোকানও। চায়ের কাপে চুমু আর গল্প করে সময় কাটাতে দেখা যায় সবাইকে।
চা দোকানি রফিকুল ইসলাম বলেন, ৮৮ সালের দিকে নদী ভাঙ্গনে শত বছরের ঐতিহ্য আমের সারির অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যায়। ওই এলাকার বাসিন্দা জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার আলাউদ্দিন আল আজাদ (মনিরুল) ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার নুরুল ইসলামের সহযোগিতায় ও স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মাটি কেটে তৈরি করা হয় রাস্তাটি ১০-১২ বছর আগে। লাগানো হয় ৩০০টি আম গাছ। প্রতিদিন দেড়-দুইশ লোক আসে সময় কাটাতে। আসে বিভিন্ন অফিসের লোকজনও। চা ভালো হওয়ায় বিক্রিও হয় বেশ। রাস্তাটি পাকাকরণ ও কিছু বসার জায়গা করতে পারলে আরো দৃষ্টিনন্দন হতো, বলছিলেন রফিকুল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দহবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল আলম রেজা বলেন,“আমের সারির স্থানটি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”