পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী জজ) দেবাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা যায়। গত মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) তার বিরুদ্ধে ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রংপুর।
রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। চিকিৎসক স্ত্রী হৃদিতা সরকারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা একটি মামলায় এই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান।
মামলার বাদী চিকিৎসক হৃদিতা সরকারের আইনজীবি খন্দকার মোহাম্দ রফিক হাসনাইন ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেবাংশু কুমার সরকার। তিনি চাকরি সূত্রে কর্মস্থল রংপুরের ম্যাজিস্ট্রেট কোয়াটারসহ একাধিক স্থানে বিভিন্ন সময়ে অবস্থানকালে ৩০লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী চিকিৎসক হৃদিতা সরকারের ওপর শারিরিক ও মানুষিক নির্যাতন চালাতেন। শুধু তাই নয় তার নির্যাতনের কারণে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। প্রকাশ্যে আদালত চত্বরের পাশেও তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তিনি মামলার বাদিকে নির্যাতন চালিয়ে বাসা থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন। এর পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে তার সন্তান ও চিকিৎসক স্ত্রীকে তার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।
এ নিয়ে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে গত ২৪ এপ্রিল একটি পিটিশন মামলা-৩৭/২০২২ দায়ের করেন। এতে দেবাংশু কুমার সরকার (৩২), বাবা সুধাংশু কুমার সরকার চয়ন (৬০), ফুফাতো ভাই নিলয় দে সরকার (২৭) ও চাচা রঞ্জন সরকারকে (৫০) আসামি করা হয়। তাদের সকলের ঠিকানা ময়মনসিংহরে হালুয়াঘাট উপজেলা।
ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (সংশোঃ/২২)১১(ক)/(খ) ও পেনাল কোড ৩২৩ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের বিচারক জেলা জজ মোস্তফা কামাল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই পুলিশের নিকট প্রেরণ করেন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক যতীন্দ্রনাথ শর্মা অনুসন্ধান শেষে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে গত মঙ্গলবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, বাদি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার উত্তর খয়রাকুড়ি গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র সরকারের মেয়ে এর সাথে একই জেলা ও উপজেলার হালুয়াঘাট পূর্ববাজার গ্রামের শুধাংশু কুমার সরকারের ছেলে তৎকালীন সময়ে সহকারী জজ দেবাংশু কুমার সরকারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মামলার আসামি তার ওপর যৌতুক দাবি করে আসছিল। যৌতুকের টাকা না দেয়ায় তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়।
মামলাটি তদন্ত চলাকালে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিভিন্ন আলামত থেকে ৪ জন আসামির মধ্যে প্রধান আসামি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সাবেক সহকারী জজ) দেবাংশু কুমার সরকার ও তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ওই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।