ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গত রোববার রাত থেকে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত অমাবস্যার প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং শুরু হয়। এতে বাড়তে থাকে প্রতিটি নদ-নদীর পানির উচ্চতা। বেড়েছে বাতাসের চাপও। বাতাসের চাপে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছগাছালি ও বসতঘর ভেঙে লন্ডভন্ড হয়েছে। এবং বেরীবাঁধের বাহিরের গ্রামের সড়কগুলো প্লাবিত হয়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। এ ছাড়া ফসিল জমি, মাছের ঘের, পুকুর ডুবে গেছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বেতুয়া প্রশান্তি পার্ক সংলগ্ন ও চালচর, চরপাতিলা, চরনিজামের নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে ইতোমধ্যে জোয়ারের ঢেউয়ের ঝাপটায়। প্লাবিত হওয়ায় পরিবার গুলো রান্নাবান্না করতে না পেরে অর্ধহারে-অনাহার মানবেতর জীবনযাপন পার করছে। ওইসব চরঞ্চলে জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষদের শুকনো খাবার বিতরণ করেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা।
চরপাতিলার গ্রামের মো.নোমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে পানিবন্দি অবস্থায় ছিলাম। দিনে-রাতে দুবার জোয়ারের পানি ওঠায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চৌকিতে বসে রাত পার করতে হয়েছে।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. নুরে আলম বলেন, ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে জোয়ারের ঝাপটায় বসতঘর ভেঙে গেছে। শিশুসহ গবাদিপশু নিয়ে খুব বিপদে ছিলাম। গরু কোনো মতে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখেছি,ছাগল বেসে গেছে। আবার অনেকের হাঁস, মুরগি, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। জোয়ারের পানি বেড়ে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। পানির কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। আমাদের এখানে বেড়িবাঁধ না থাকায় নদীর পানি খুব দ্রুত প্রবেশ করে এসব এলাকায়, সরকারের কাছে বেড়িবাধ নির্মাণের দাবি জানান।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে উপজেলার চরকলমি,ঢালচর, চরপাতিলা, কুকরি- মুকরির ইউনিয়নের প্রায় ৪৭ টি মাছের ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মাছের ঘেরের তালিকা দ্রুতই জেলায় পাঠানো হবে।
চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে ১২ শ ৬০ হেক্টর আমন ধান, ৫০ হেক্টর শাক-সবজি, ১ হেক্টর পানের বর, ২০ হেক্টর কলার বাগান, ৪ হেক্টর পেঁপে বাগান সহ উপজেলায় প্রায় ১৩ শ ৬৫ হেক্টর কৃষি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এইসব ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা করে খুব দ্রুতই জেলায় পাঠিয়ে কৃষকদের সাহায্য সহযোগীতা করা হবে বলে জানান তিনি।
চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড ( ডিভিশন-২) এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, গত সোমবার রাতে জোয়ারের উচ্চতা ছিল প্রায় -৫ মিটার, যা ৯ ফুটের কাছাকাছি। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে উপজেলার কোথাও বেরীবাঁধের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান রাহুল বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আংশিক ১ হাজার ২ শত ৭২ টি বাড়ি ও প্রায় ৫ শত ২ টি বাড়ি পুরোপুরি বিধস্ত হওয়ার ধারণা করা হচ্ছে। ইউনিয়ন
পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুরো তালিকা করে জেলায় পাঠিয়ে খুব দ্রুতই তাদের সাহায্য সহযোগীতা করা হবে।