× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

প্রিয়জন হারিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে পরিবারগুলোর

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি

২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:৩৩ এএম

গত ২৩ ডিসেম্বর ২৮ দিনের সদ্যোজাত পুত্র সন্তান সিফাতুল্লাকে দেখতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে চড়েন রিয়াজ হাওলাদার। ওই দিন লঞ্চটি ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে পৌঁছালে ভোর রাত ৩টার দিকে লঞ্চটিতে আগুন লেগে যায়। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা মারা যান তাঁদের মধ্যে ছিলেন রিয়াজও। প্রিয় স্বামীকে হারিয়ে দুই ছেলের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে মুক্তা বেগমকে।

সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ ট্র্যাজেডির এক বছর পর শুক্রবার দুপুরে নিহত রিয়াজের গ্রামের বাড়িতে যায় এ প্রতিবেদক। বাড়িতে গিয়ে রিয়াজের কথা মনে করিয়ে দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী মুক্তা বেগম। শোকার্ত স্ত্রীকে এ সময় সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রতিবেশীরা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুক্তা বলেন, ২৮ দিনের ছেলের মুখ দেখতে সেদিন বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন রিয়াজ।  কিন্তু ছেলের মুখ আর দেখতে পারেননি। সেই ছেলের বয়স এখন ১ বছর ২৮ দিন। শুধু ভিডিও কলেই ছেলের মুখ দেখেছিলো রিয়াজ। বড় ছেলের নামের সাথে মিল রেখে সিফাতুল্লাহ নামটাও তিনি রেখেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে আমরা এখন দিশেহারা। দুই ছেলে আর শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে অনেক অভাব অনটনে সংসার চলছে। সরকারি বেসরকারি যেটুকু সহায়তা পেয়েছি তা দিয়ে কোনমতে একটি বছর চলেছি। আমার শ্বশুর জমি চাষ করে যেটুকু উপার্জন করে এখন তাতেই সংসার চালাতে হয়। ছেলেদের মুখে দু'বেলা ভালো খাবার তুলে দিতে পারি না। ওদের কীভাবে মানুষ করব এখন সেই চিন্তাই করি এখন।’

রিয়াজের বাবা-মা ছেলে হারানোর শোক ভুলতে পারছেন না। ছেলের কথা মনে করিয়ে দিতেই কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যান মা পিয়ারা বেগম। বৃদ্ধ বয়সে শেষ সম্বল একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা আব্দুল কাদেরও। সেই সঙ্গে ছোট ছোট দুটি নাতি ও পুত্রবধূর ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাঁদের।

রিয়াজের বাবা আব্দুল কাদের বলেন, ‘সামান্য যে জমিটুকু আছে তা চাষাবাদ করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি। যত দিন শরীরে শক্তি আছে তত দিন সংসার চলবে। কিন্তু এরপর সংসার কীভাবে চলবে। নাতিদের ভবিষ্যৎ কী হবে সে অনিশ্চতায় দিন কাটছে এখন।’

শুধু রিয়াজ হাওলাদারের পরিবারই নয়। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর অভিযান ১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রিয়জন হারিয়েছেন অনেকেই। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বহু পরিবারেরই অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে। সরকারি সহযোগিতা বড় দরকার তাঁদের।

মুক্তার মতো সুগন্ধা ট্র্যাজেডিতে প্রিয়জন হারিয়েছেন বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন। অভিযান ১০ লঞ্চে ওইদিন তার বোন রিনা আর ১২ বছরে ভাগ্নি লিমা তার অসুস্থ বাবাকে দেখতে আসছিলেন। লঞ্চের ভয়াবহ আগুন তাদেরও জীবন কেড়ে নেয়। মোকামিয়া ইউনিয়নের খাদিজা বেগমের স্ত্রী আরিফুর রহমান ও ৪ বছরের মেয়ে কুলসুমও ফিরেছেন লাশ হয়ে।

রিনা বেগমের ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, অসুস্থ বাবাকে দেখতে আমার বোন তার মেয়েকে নিয়ে ওইদিন বাড়িতে আসতেছিল। লঞ্চের আগুল লাগার খবর পেয়ে রাতেই আমরা ঝালকাঠি যাই। কিন্তু আমার বোন আর ভাগ্নির লাশ পাই নি। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করি। মেয়ে ও নাতনীর মৃত্যু শোকে আমার বাবাও কিছুদিন পর মারা যান। স্ত্রী সন্তানকে হারিয়ে আমার বোন জামাইও এখন পাগলপ্রায়।

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। নতুনভাবে সরকারি সহায়তা আসলে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব পরিবারের কাছে তা পৌঁছে দেবো।

উল্লেখ্য, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডে ঘটনায় ৪৯ জন। এর মধ্যে ১৭টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তন করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে বরগুনায় ২৩ জনকে দাফন করা হয়। এর ভিতরে নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গত এক বছরে ১৪টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.