কথা ছিল ঋণ পরিশোধ করে মামলা তলে নিবে। কিন্তু ব্যাংকের সম্পন্ন টাকা পরিশোধ করার পরেও মামলা তুলে নেয়নি ব্যাংক কর্তপক্ষ। এ ঘটনাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার। তার বাড়ি ওই উপজেলার গোমস্তাপুর ইউনিয়নের বালুগ্রামে। সে মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে আফজাল হোসেন ওরফে বাবলু।
বন্ধকি দায়মুক্তি দলিল সম্পাদনও করে দিয়েছে ব্যাংক। তারপরও ব্যাংকের মামলায় এখন তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। যদিও ব্যাংক ম্যানেজার বলেছিলেন টাকা পরিশোধ করলেই মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা করেনি।
জানা গেছে, আফজাল হোসেন ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের রহনপুর শাখা থেকে তার জমি বন্ধক রেখে ‘এবি কৃষি খামার’ এর ওপর ২০ লাখ টাকা ঋণ নেন। ওই টাকায় তিনি জমিতে আম, পেয়ারা ও পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন।
কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঋণের কিস্তি সঠিকভাবে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান। তারপরও তার নামে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চারটি মামলা করা হয়। তখন ব্যাংকের মোট দাবি ছিল ২২ লাখ টাকা। এদিকে মামলার পর আফজাল ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এ সময় ব্যবস্থাপক আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ঋণ পরিশোধ করলে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। ওই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে ও বিভিন্নভাবে টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকের সব পাওনা পরিশোধ করেন। সুদ ও মামলার খরচসহ তার কাছ থেকে ২৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা আদায় করে। যদিও ব্যাংক ২২ লাখ টাকার দাবিতে মামলা করেছিল। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ওই টাকা আদালতের মাধ্যমে না নিয়ে সরাসরি ব্যাংকে জমা নেন।
এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রহনপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তাকে বন্ধকি দায়মুক্তি দলিল নিবন্ধন করে দেয়। কিন্তু এখনো মামলা প্রত্যাহার করেনি। বিষয়টি গত নভেম্বর মাসে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের উদ্যোগ নেন। তবে তিনি সফল হতে পারেননি।
আফজাল হোসেনের ছোট ভাই ফারুক হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, আমার ভাই মামলার কারণে পলাতক থাকায়। ব্যাংকের কথা মতো আমি সম্পন্ন টাকা পরিশোধ করে দি। তারপর মামলা তুলে নেয়ার কথা বলে, আজকাল করেও এখন পর্যন্ত মামলা তুলে নি। তাই পুলিশ আমার ভাইকে আবার গ্রেফতার করেছে। আর ব্যাংকেও গেলে বিরক্তবোধ করে বলে এতোবার ব্যাংক কেন আসছেন বলে।
গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে গোমস্তাপুর থানার (ওসি) মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে । তিনি বলেন, কৃষক আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে ৪ টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকায় তাকে বৃহস্পতিবার নাচোল থেকে গ্রেফতার করে ওইদিন রাতেই আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ইসলামি ব্যাংক রহনপুর শাখার ব্যবস্থাপক সোলায়মান আলী বলেন,কৃষক আফজাল হোসেনকে আদালতে টাকা জমা দিয়ে আত্নসমর্পণ করতে হবে। তাহলে তাঁরা বলবেন,সব পাওনা তাঁরা বুঝে পেয়েছেন। তারপর আদালতে জমা দেয়া টাকা কৃষক পরে ফেরত পাবেন। আর মামলা প্রত্যাহারে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আদালত অবমাননা হওয়ায় এখন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়ে গেছে। তাই এখন তাঁকে আদালতেই যেতে হবে।
কৃষক আফজাল হোসেনের গ্রেফতারের বিষয়টি জানার পর জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন মোবাইল ফোনে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি বিষয়টি আগেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে বলার পরও সমাধান হয়নি। তিনি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য শুক্রবার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বলেছেন বলে নিশ্চত করেছেন।
© 2023 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh