× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পাহাড়ের বুক চিরে, নদীর ওপর দিয়ে স্বপ্নের রেল আসবে কক্সবাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি

২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:১৭ এএম

কক্সবাজার-দোহাজারী রেল পথ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ২০২৩ সালের নতুন বছরে শতাব্দীর স্বপ্ন রেল আসছে কক্সবাজারে। রেল চালু হলে পর্যটক যাতায়াত সহজ হবে। কম সময়ে এবং কম খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহন করা যাবে সহজে। এতে করে কক্সবাজারের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

এরই প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের সাথে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজ করণের দাবী ছিল বহুদিনের। এই দাবীর প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা সরকার কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দের উন্নিত করে এবং শতাব্দীর দাবী দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প গ্রহণ করে।

প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমানের  বলেন, ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৫০ কিলোমিটারের বেশি এখন দৃশ্যমান। বেশিরভাগ ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। যেগুলো বাকি আছে সেগুলো আগামি কয়েক মাসেই শেষ হবে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। তবে আমরা চেষ্টা করছি ২০২৩ সালের জুন-অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করতে।

শতাব্দীকালের দাবী দোহাজারী কক্সবাজার রেল লাইন এক সময়ের স্বপ্ন হলেও এখন আর স্বপ্ন নয়। এটি এখন বাস্তব। ২০২৩ সালের নতুন বছরে রেল আসছে কক্সবাজারে। কক্সবাজার থেকেই রেলে চড়ে মানুষ যাবে দেশের এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সহজ হবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আনা নেয়া। আর কক্সবাজারে বাড়বে পর্যটকের স্রোত। পর্যবেক্ষদের মতে কক্সবাজার দোহাজারী রেললাইন চালু হলে পর্যটকদের পাশাপাশি ঘুরে যাবে কক্সবাজার অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাকাও।

প্রবাদ আছে ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে রাত দুপুরে অই/ ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই? সেই ট্রেনের বাড়ি হতে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবরে পর্যটক নিয়ে দরিয়ানগরে ট্রেন আসার প্রত্যয়ে দ্রুত এগুচ্ছে চলমান রেল প্রকল্পের কাজ।

কাজ শেষ হলেই ঢাকা থেকে প্রতিদিন ১০ জোড়ার পাশাপশি চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ও লোকাল মিলে আরও বেশকিছু ট্রেন যাবে কক্সবাজার। পর্যটকবাহী এক একটি ট্রেনে থাকবে ৮০০ থেকে ১২০০ যাত্রী।

সব মিলিয়ে এ রেলপথে বছরে যাত্রী আসা-যাওয়া করবে প্রায় ২ কোটি। কাক ডাকা ভোরে হুইসেলের শব্দে ঘুম ভাঙবে স্থানীয়দের।

কোথাও সমতলের মাঝখানে, কোথাও পাহাড়ের বুক চিরে আবার কোথাও নদীর ওপর দিয়ে গেছে স্বপ্নের রেললাইন। যেটি দিয়ে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে যাবেন পর্যটন নগরীতে। আর উপভোগ করবেন নদী, খাল-বিল ও সবুজে ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্য।  

কক্সবাজারের মানুষের এক সময়ের স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। ২০২৪ সালে শেষ করার সিডিউল নিয়ে দ্রুত এগুচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প। তবে নির্মাণ শেষ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। চলতি বছরেই পর্যটক নিয়ে কক্সবাজার যাবে ট্রেন। ইতিমধ্যে ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

বছরে ২ কোটি যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে নতুন বছর যাত্রা শুরু করছে ঝিনুক আকৃতির বিশ্বমানের রেল স্টেশন। এ আইকনিক স্টেশনে প্রতিদিন রাজধানী থেকে আসবে ১০ জোড়া পর্যটক ট্রেন, এর বাইরে বন্দরনগরী থেকে যাবে আরো বেশ কয়েক জোড়া। যেটি চালু হলে ঢাকা থেকে ৮ ঘন্টা আর চট্টগ্রাম থেকে আড়াই ঘন্টায় যাওয়া যাবে সমুদ্র নগরে।  

রেল কর্তৃপক্ষের ধারণা, ঢাকা থেকে কক্সবাজার টিকিটের দাম পড়বে মানভেদে ৭০০-১৫০০ টাকা, আর চট্টগ্রাম থেকে ২০০-৪০০ টাকা। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ  রেলপথে এটিসহ মোট নয়টি স্টেশন তৈরি হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতি আর পর্যটনে যোগ করবে নতুন সম্ভাবনা।  

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে এটিসহ মোট নয়টি স্টেশন করা হবে। যার সাথে স্থানীয় অর্থনীতিরও যোগসূত্র তৈরি হবে। স্টেশন ঘিরে হোটেল, মোটেল, পরিবহন খাতে তৈরি হবে নতুন উদ্যেক্তা। সমৃদ্ধ হবে আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।  প্রকল্পের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আইকনিক রেলস্টেশন। ছয় শতাধিক শ্রমিক ও প্রকৌশলীর শ্রম-ঘাম আর মেধায় চার বছরেই এটি এখন দৃশ্যমান। চারদিকে চলছে গ্লাস ফিটিংস, ছাদের স্টিল ক্যানোফি, আর নানা ধরনের ফিটিংস বসানোর কাজ। ঝকঝকে আধুনিক এই স্টেশন অনেকটা উন্নত বিশ্বের কোনও বিমান বন্দরের মতোই। ভবনের নিচতলায় আছে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা, লকারসহ নানা সুবিধা। দ্বিতীয় তলায় শপিং মল রেস্তোরাঁ। তিন তলায় আছে তারকামানের হোটেলে, যেখানে ৩৯টি রুমে থাকার সুযোগ পাবেন পর্যটকেরা। চার তলাতেও রেস্তোরাঁ, শিশুযত্নকেন্দ্রসহ রাখা আছে কর্মকর্তাদের কার্যালয়।  

গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেলপথের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০০ কিলোমিটার রেলপথে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদরসহ স্টেশন থাকছে আটটি। এ জন্য সাঙ্গু মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি বড় সেতু। এছাড়াও রেলপথে তৈরি হয়েছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.