বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম (মাঝে)
চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় খুলনায় চিকিৎসকদের চার দিনের কর্মবিরতি স্থগিত হয়েছে। এক সপ্তাহের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করে চিকিৎসকদের এখন থেকে কর্মস্থলে ফেরার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শনিবার (৪ মার্চ) খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নেতাদের বৈঠকের পর শর্তসাপেক্ষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা জানানো হয় চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে।
কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণার পর চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে আগামী ৭ দিনের মধ্যে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নাঈম শেখকে (সাতক্ষীরা সদর) গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা এবং ডা. নিশাত আব্দুল্লাহর নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এর আগে, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশিদা সুলতানা, খুলনা বিএমএর সভাপতি ডা. বাহারুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মেহেদি নেওয়াজসহ চিকিৎসকরা বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘তারা (চিকিৎসক) সাতদিনের জন্য কর্মবিরতি স্থগিত করবেন। আমরা অনুরোধ করবো এখন থেকেই তারা কর্মস্থলে যাতে যোগদান করেন। সন্ধ্যায় সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেবেন তারা। সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যার যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
বিএমএ খুলনা জেলা শাখার সভাপতি ডাক্তার শেখ বাহারুল আলম বলেন, ‘আমরা আমাদের কর্মসূচি সাত দিনের জন্য স্থগিত করলাম। তবে সন্ধ্যায় আমরা সাধারণ সভা করে প্রেস ব্রিফ করবো।’
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা পুলিশে কর্মরত এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখ ও তার কয়েকজন সঙ্গী খুলনা নগরীর শেখপাড়া এলাকার হক নার্সিং হোমে হামলা চালান বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসকরা। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে তারা অস্ত্রোপচার কক্ষে ঢুকে ডা. নিশাত আবদুল্লাহকে মারধর করেন। ওই ঘটনায় ডা. নিশাত আবদুল্লাহ বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। বুধবার (১ মার্চ) একই থানায় এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখের স্ত্রী নুসরাত আরা ময়না বাদী হয়ে ডা. নিশাত আবদুল্লাহ এবং হক নার্সিং হোমের মালিক নুরুল হক ফকিরের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন।
মারধরের ঘটনায় গত বুধবার (১ মার্চ) ভোর ছয়টা থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছেন চিকিৎসকরা। এর ফলে চার দিন ধরে খুলনার সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরাও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না।
চিকিৎসকদের দাবি, দায়ী পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়।
সঙ্কট নিরসনে শনিবার সকালে বিএমএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন খুলনা সিটির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। বৈঠকে মেয়রের আশ্বাসে শর্তসাপেক্ষে সাত দিনের জন্য কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।
এর আগে সকালে খুলনার বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মো. শহিদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকদের আজই যেকোনো সময় কর্মবিরতি স্থগিত করবেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘শনিবার যেকোনো সময় বিএমএ সভাপতি শেখ বাহরুল আলম আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন।’
© 2023 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh