লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সাত বছরের শিশু পপি সাহাকে হত্যার দায়ে রুনা আক্তার আঁখি নামে এক নারীকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। এ সময় আসামিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর স্বামী এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় দন্ডপ্রাপ্ত রুনা ও তার স্বামী এমরান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দন্ডপ্রাপ্ত ওই নারীর বিরুদ্ধে আরো একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডের রায় রয়েছে।
দন্ডপ্রাপ্ত রুনা রায়পুর উপজেলার পূর্ব কেরোয়া গ্রামের এমরানের স্ত্রী। নিহত পপি সাহা একই উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো।
এর আগে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্রী রোজিনা আক্তার (১৫) কে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন রুনা। ২০২২ সালের ১৮ মে একই আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি রুনা আক্তার আঁখিসহ চারজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় দিয়েছেন।
মামলার এজাহার এবং আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত রুনা এবং তার স্বামী এমরান ঘটনার তিন মাস আগ থেকে রায়পুর উপজেলার সাগরদি গ্রামের ফারুক হওলাদার বাড়ির কাশেম হাওলাদারের একটি ঘর ভাড়া নেন। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটার দিকে রুনা পার্শ্ববর্তী নেপাল সাহার বাড়ির নির্মল সাহার শিশুকন্যা পপি সাহাকে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নেন। এ সময় শিশুর কানে থাকা তিন আনা ওজনের স্বর্ণের দুল ছিনিয়ে নেন রুনা। এতে শিশুটি চিৎকার করতে চাইলে রুনা তার মুখ ও গলা চেপে ধরেন। এতে শিশুটির মৃত্যু হয়। পরে তার মৃতদেহ খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন রুনা। এদিকে দীর্ঘ সময় শিশুটির কোনো খোঁজ না পেয়ে বাড়ির লোকজন এবং স্বজনরা তাকে সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজতে থাকে। ওই বাড়ির এক নারী রুনার ঘরে পপির মরদেহটি দেখতে পান। পরে রায়পুর থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে এবং রুনা ও তার স্বামী এমরানকে আটক করে। পরে রুনা হত্যার ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। এ ঘটনায় ওইদিনই শিশুটির মা ববিতা রানী সাহা (৩২) রায়পুর থানায় রুনা এবং তার স্বামী এমরানকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর আদালতে দুইজনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দেন।
এদিকে মামলার বাদী ববিতা রানী সাহা বলেন, আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে তিনি সন্তুষ্ট। তবে তার মেয়েকে সামান্য স্বর্ণের জন্য গলা টিপে হত্যা করায় রুনাকে ফাঁসি দিলে তিনি আরো খুশি হতেন বলে জানান।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বলেন, আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে রুনাকে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদন্ডের রায় এবং তার স্বামী এমরানকে খালাস দিয়েছেন।