ফরিদপুরের সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রায় মোহন কুমার রায়কে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সাথে ঐ কমিটির সহ সভাপতি ফিরোজ খাঁন রাজকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী (রিয়ান) ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফাহিম আহামেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানা যায়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ফরিদপুর জেলা শাখার এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সালথা উপজেলা শাখার সভাপতি রায়মোহন রায়-কে অব্যাহতি দেওয়া হইলো। সেই সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সালথা উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি ফিরোজ খান রাজ-কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হলো।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা এ ঘটনার পর ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। তদন্ত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ওই তদন্ত কমিটি রায়মোহনসহ তাদের এলাকার লোকজনের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন। এছাড়া ভুক্তভোগী ওই মেয়েসহ তার পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন তদন্ত কমিটি।
তামজিদুল রশিদ রিয়ান বলেন, সেখানে ঘটনার সঙ্গে রায়মোহনের দোষ-ত্রুটি খুঁজে পায় তদন্ত কমিটি। তাইতো, সংগঠনের সামাজিক ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়া ও বদনাম রক্ষাতে তাকে (রায়মোহন রায়) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. সাদিক বলেন, ছাত্রলীগ নেতা রায় মোহনের সঙ্গে একটি মেয়ের চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত দুই মাস ধরে তাদের সম্পর্ক ব্রেকআপ হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১০ মার্চ দুই পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক করে। সে সময় সেখানে লোকজনের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সালথা থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় মঙ্গলবার রায়মোহনকে আটক করে সালথা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জানা যায়, ফরিদপুর জেলার সালথা থানা এলাকার গৌড়দিয়া গ্রামের ভিকটিম অর্পিতা পাল @ পূজা(১৭) কে উক্ত আসামী বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতো। গত ১০ মার্চ ২৩ তারিখে ভিকটিম তার বাড়ির পাশের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করার সময় উক্ত আসামী একা পেয়ে তাকে হাত ধরে টানাহেঁচড়া করে এবং কুপ্রস্তাব দেয়। তখন ভিকটিম ভয় পেয়ে চিৎকার করলে তার পরিবারের লোকজন এগিয়ে আসলে উক্ত আসামী সহ আরো চারজন ভিকটিমের বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্রের সাহায্যে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে আহত করে। উক্ত আসামীর অত্যাচার ও দৌরাত্বে এলাকা অতিষ্ট হয়ে ওঠে। আসামীকে গ্রেফতারের জন্য সংবাদ সম্মেলন সহ এলাকাবাসী জোর দাবি তোলে। এই ঘটনা সারা দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ঘটনাটি সোসাল মিডিয়া, প্রেস ও টিভি মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। আসামীর গ্রেফতারের দাবিতে ফরিদপুরের সুশীল সমাজ সরব হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে সালথা থানায় একটি মামলা করে যা দেশব্যাপী এবং এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। উক্ত ঘটনার পর থেকে আসামি এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। উক্ত ঘটনার পর থেকে র্যাব-৮, ফরিদপুর ক্যাম্প গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব গোয়েন্দা বিভাগের সার্বিক তত্বাবধানে উক্ত মামলার প্রধান আসামী সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রায় মোহন কুমার রায়কে সোমবার (২০ মার্চ) দিবাগত রাত সোয়া ৮ টার দিকে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ধৃত আসামীকে সালথা থানায় হস্তান্তর করা হয়।