× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ট্রলারে ১০ লাশ: জবানবন্দিতে বেরিয়ে এলো রোমহর্ষক কাহিনি!

হোবাইব সজীব, কক্সবাজার

০৩ মে ২০২৩, ০৯:১২ এএম । আপডেটঃ ০৩ মে ২০২৩, ০৯:১৩ এএম

কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

এ নিয়ে তিনজন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলেন। তাদের জবানবন্দিতে তিনজনই প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। উপরন্তু মামলার প্রধান আসামি বাইট্টা কামাল বলেছেন, সাগরে জলদস্যুতার অভিযোগেই ১০ জেলেকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

গত সোমবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি মহেশখালী দ্বীপ উপজেলার মাতারবাড়ীর সাইরার ডেইলের বাসিন্দা ট্রলার মালিক বাইট্টা কামাল ও ৪ নম্বর আসামি ট্রলার মাঝি করিম সিকদারকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালতে আসামি বাইট্টা কামাল স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মতি প্রকাশ করেন। অপর আসামি করিম মাঝি জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ আসামি বাইট্টা কামালের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কামালের জবানবন্দি নেন বিচারক। এর আগে গত রবিবার বাঁশখালীর ফজল কাদের মাঝি ও আবু তৈয়ুব মাঝি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন। 

তিন আসামির স্বেচ্ছায় জবানবন্দির কথা নিশ্চিত করলেও তারা (আসামি) আদালতে কী বলেছেন তা বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস। তবে তিনি বলেছেন, মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি এবং ট্রলার মালিক বাইট্টা কামাল জবানবন্দিতে ঘটনায় জড়িত অন্তত ২০ জনের নাম প্রকাশ করেছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আসামি বাইট্টা কামাল সেদিনের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি ঘটনার দিন কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছিলেন বলে জানান। 

তিনি আদালতকে জানান, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে তার ভাই আনোয়ারের (মামলার এজাহার নামীয় পলাতক আসামি) মালিকানাধীন ট্রলারে দস্যুতা সংঘটন নিয়ে। নামবিহীন ট্রলারের মালিক নিহত শামছু মাঝি বাইট্টা কামালের ভাই আনোয়ারের মাছ ধরা ট্রলারে ডাকাতি (দস্যুতা) করার কারণে অন্যান্য ট্রলারের জেলেরা ক্ষুব্ধ হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।

পুলিশের একটি সূত্র মতে আরো জানা গেছে, জবানবন্দিতে বাইট্টা কামাল আরো জানান, সাগরে মাছ ধরারত মাতারবাড়ীর আবদুল গফুর, বেলাল ও আক্কাসের সঙ্গে তার মোবাইলে গত ৯ ও ১০ এপ্রিল কয়েক দফা কথা হয়েছে। সাগরে মাছ ধরারত ট্রলারে থাকা এই তিন জেলেই তাকে (বাইট্টা কামাল) নিশ্চিত করে যে নিহত শামছু মাঝির ট্রলারের লোকজন তার ভাই আনোয়ারের ট্রলারের লোকজনকে মারধরের পর ডাকাতি করেছে।

৯ এপ্রিল ভোরে আনোয়ারের ট্রলারে ডাকাতির ঘটনার পর সাগরে মাছ ধরারত আফসার মাঝি ও বাবুল মাঝি তাদের দুই ট্রলারে বাঁশের মাথায় কাপড় বেঁধে (ডাকাতির সংকেত) উড়িয়ে দেয়। গভীর সাগরে ডাকাতির সংকেত পেয়েই তাৎক্ষণিক ১০-১২টি ট্রলার একই স্থানে জড়ো হয়ে শামছু মাঝির নামবিহীন জেলেবেশী ট্রলারটিকে ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে। এরপর এসব ট্রলারের ক্ষুব্ধ জেলেরা শামছু মাঝির ট্রলারে থাকা লোকজনকে এলোপাতাড়ি মারতে থাাকে।

সে সময় সাগরে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল গফুর, বেলাল ও আক্কাসের বরাত দিয়ে বাইট্টা কামাল তার জবানবন্দিতে জানান, এতগুলো ট্রলারের ক্ষুব্ধ জেলে একটি ট্রলারের জেলেদের পেয়ে বরফ ভাঙার কাঠের হাতুড়ি, বইঠা, কাঠ ও লোহার রড দিয়ে যার যেমন ইচ্ছা তেমন করে মারতে থাকে। মারের চোটে সব জেলে মারা যায়। এরপর তাদের লাশ গুম করার ফন্দি করে সবার মরদেহ ট্রলারটির বরফ রাখার হিমাগারে ঢুকিয়ে পাটাতনে পেরেক মেরে দেয়। একপর্যায়ে ট্রলারটি ফুটো করে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। জবানবন্দির পর আদালত বাইট্টা কামালকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।

এদিকে এ মামলায় গত ২৫ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলার বদরখালী এলাকা থেকে গিয়াস উদ্দিন মুনির (৩২) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। মুনির বদরখালী এলাকায় মো. নুর নবীর ছেলে। গত রবিবার দুপুরে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা এ আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মুনিরকে যেকোনো সময় রিমান্ডের জন্য পুলিশ নিয়ে যাবে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্জয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ এপ্রিল গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধিন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা নামবিহীন ট্রলারটিকে নাজিরারটেক উপকূলে নিয়ে আসে। ওই ট্রলারের হিমঘর থেকে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ইতোমধ্যে উদ্ধার হওয়া ছয়জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়ে গেছে চারজনের মরদেহ ও একটি কঙ্কাল। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে এ পাঁচজনের পরিচয়।


আরও পড়ুন

ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও তিন

কক্সবাজারে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দুই আসামি পাঁচ দিনের রিমান্ডে

ট্রলারে ১০ লাশ: রহস্য উদঘাটনে মরিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

কক্সবাজারের ট্রলারে উদ্ধার ১০ মরদেহের পরিচয় মিলেছে

ট্রলার থেকে উদ্ধারকৃত ১০টি লাশই ছিল ‘হাত-পা বাঁধা’

সমুদ্রে ভাসমান ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.