রামগঞ্জে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় গত ৩ সপ্তাহে নবজাতকসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে । এদের মধ্যে রামগঞ্জ বাইপাস সড়কের আল-ফারুখ হাসপাতালে ২, উপশম হাসপাতালে ১, আধুনিক হাসপাতালে ১, ইসলামীয়া হাসপাতালে ১ জনের মৃত্য হয়।
জানা গেছে, রামগঞ্জ পৌর শহরে অনুমোদনহীন হাসপাতাল ক্লিনিক রয়েছে অন্তত ২০টি। পর্যাপ্ত ডাক্তার কিংবা টেকনেশিয়ান, ডিপ্লোমাধারী নার্স নেই । এসব হাসপাতালগুলোতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই শুধু মাত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনলাইন আবেদন করে অদক্ষ ডাক্তার, টেকনেশিয়ান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে হাসপাতালগুলো। দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বাস্থ্যসেবার নামে মানুষের সাথে প্রতারনা করছে একদল অসাধু ব্যাবসায়ি। অদৃশ্যর কারনে এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ। মানুষকে প্রতারনা থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে রামগঞ্জ আল ফারুক হাসপাতাল, উপশম হাসপাতাল ও আধুনিক হাসপাতাল ও ইসলামীয়া হাসপাতালসহ সকল অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করার দাবী করেন উপজেলার সচেতন মহল।
তাদের মধ্যে গত ২৯ জুন রামগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে পৌর পশ্চিম আঙ্গারপাড়া গ্রামের মোল্লা বাড়ির হারেজ মোল্লা মেয়ে ও সাহাদাৎ হোসেন স্বপনের স্ত্রী নাজমা খাতুন, ৪ জুলাই উপশম হাসপাতালে লামচর ইউনিয়নের দক্ষিণ হাজীপুর চৌকিদার বাড়ির মনর আলীর স্ত্রী ফাতেমা আক্তার, ১২ জুলাই ইসলামীয়া হাসপাতালে হানুবাইশ মুন্সি বাড়ীর নূর নবীর স্ত্রী শাহেদা বেগম ও ১৭ জুলাই আল ফারুক হাসপাতালে পৌর জগতপুর গ্রামের নুর মোহাম্মদের স্ত্রী নাজমা আক্তার ও তার নবজাতক সন্তান এসব হাসপাতালে অপচিকিৎসার বলি হয়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে নিহতের স্বজনদের মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখানো ছাড়াও ভয়ভীতি প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
২৩ জুলাই বরিবার সরেজমিনে ঘুরে কথা হয় নিহতের স্বজনদের সাথে। এসময় হাসপাতালের অবহেলায় ও ভুল চিকিৎসা নিহত নাজমা খাতুনের পিতা হারেজ মোল্লা জানান, মাতৃগর্ভের শুরু থেকে আধুনিক হাসপাতালে ডাঃ লায়লা ইয়াছমিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন তার মেয়ে নাজমা খাতুন। পরবর্তিতে ২৩ জুন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ওই দিন বিকেল ৫টায় নাজমা খাতুনের শরিরে অস্ত্রপ্রচার করেন ডা. লায়লা ইয়াছমিন। অস্ত্রপ্রচারের সময় অসাবধানতাবশত রক্তনালী কেটে পেলে ডাক্তার। এতে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারনে তার মেয়ের অবস্থা অবনতি হলে ঢাকায় রেপার করেন। পরে ঢাকা মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ২৯ জুন মারা যায়।
ফাতেমা আক্তারের স্বামী মনর আলী জানান, ৪ জুলাই ডাক্তার দেখাতে শহরের বাইপাস সড়কের উপশম হাসপাতালে আসেন ফাতেমা আক্তার । এ সময় ডাক্তার নাজমুল হক রোগীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বাচ্ছা বড়, পানিকম আছে এসব বলে দ্রুত সিজার করার জন্য বলে। পরে বিকেল ৪টায় ডা. নাজমুল হক তার শরিরে অস্ত্রপাচার করেন। অস্ত্রপাচারকালে এনেসথেসিয়া না দেয়ায় প্রচন্ড ব্যাথায় রোগী ওটি রুমে উচ্চস্বরে চিৎকার করে। পরে অজ্ঞান ইনজেকশন দেওয়া হয়। তড়িঘড়ি করে অস্ত্রপাচারকালে রোগীর রক্তনালী কেটে পেলে দেয় ডাক্তার। পরে অবস্থা অবনতি দেখে রোগীকে কুমিল্লায় রেফার করে। কুমিল্লা নেওয়ার পথে রাত ৮ টায় মারা যায়।
শাহেদা বেগমের ছেলে ইসমাইল খোকন জানান, ১২ জুলাই সকাল ১০টার দিকে পেট ব্যাথা জনিত কারনে তার মা শাহেদা বেগমকে রামগঞ্জ ইসলামীয়া হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ইনজেকশন পুস করে ডাক্তার। তাৎক্ষণিক তার মায়ের মৃত্যু হয়।
এসময় তিনি আরও বলেন, রামগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মত প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এদের অনেকেরই অনুমোদন নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
নিহত নাজমা আক্তারের স্বামী নুর মোহাম্মদ জানায়, গত ৪ জুলাই সকাল ১১টার দিকে প্রসব ব্যাথা নিয়ে আল ফারুক হাসপাতালে ভর্তি হয় তা স্ত্রী নাজমা। ওই দিন বিকাল ৩ টার দিকে নাজমার শরিরে অস্রপাচার করে ডা. ফারজানা তালুকদার ন্যান্সি। তড়িঘড়ি করে মাত্র ১০/১৫ মিনিটে সিজার শেষ করে ডাক্তার। অপারেশন টেবিলে রোগীর অবস্থা অবনতি হলে পেটের ভিতরে ময়লা পরিষ্কার না করে এবং কোন রকম সেলাই করে দিয়ে দ্রুত নবজাতক সহ নাজমা আক্তারকে ঢাকায় রেপার করে। ঢাকা যাওয়ার পথে নবজাতক মারা যায়। প্রসূতি নাজমা আক্তার দীর্ঘ তের দিন ঢাকার আদ দীন হাসপাতালের আইসিউতে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুরে মারা যায়।
এ ব্যাপারে জানতে ডা. ফারজানা তালুকদার ন্যান্সিকে পাওয়া না গেলেও ডাঃ ন্যান্সির এসিস্টেন্ট শামছুন্নাহার বলেন, রোগী নাজমা আক্তার সিজারের ১দিন আগে ম্যাডামের কাছে আসলে আমরা তাকে কটসন ইনজেকশন দিয়ে দিই। পরদিন আবার আসলে তার সিজার করে ম্যাডাম। সিজার টেবিলেই রোগীর অবস্থা খারাপ হলে ম্যাডাম তাকে বাচ্চাসহ ঢাকায় পাটিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামগঞ্জ উপজেলা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক এবং আল ফারুক হাসপাতালের এমডি ফারুক হোসেন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এবং বলেন,যা পারেন লিখেন। আমরা সবার সাথে আলোচনা করে হাসপাতাল চালাই। মানুষতো মারা যেতেই পারে। ইসলামীয়া হাসপাতালে ব্যাপস্থাপনা পরিচালক সাইফুল্লাহ মানিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা তাৎক্ষণিক ডাক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গুনময় পোদ্দার বলেন, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুও ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। তবে আমি শুনেছি। আর ডাঃ ন্যান্সিসহ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যেসব ডাক্তার বসেন তাদের কোন তথ্য আমার কাছে নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাক্তাদের তথ্য দেওয়ার জন্য কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা দেয়নি। খুব শীঘ্রই এসব ব্যাপারে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
রামগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, এ ব্যাপারে কেউ কোনো মামলা করেনি। মামলা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রামগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) ও নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুনিরা খাতুন বলেন, এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে খুব শীঘ্রই হাসপাতাল গুলোতো অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh