দেশের প্রথম যোগাযোগ পথ-টানেল এখন উদ্বোধনের জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। আগামীকাল শনিবার সকালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এই টানেলের উদ্বোধনকে ঘিরে নদীর দুই পাড়ে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। নানা ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, তোরণ স্থাপন করা হয়েছে টানেলের দুই প্রান্তে।
টানেলের নগর প্রান্ত পতেঙ্গায়। নদীর তলদেশ দিয়ে এই টানেল মিলিত হয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝবরাবর এলাকায়।
টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের টানেল এবং এর সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখানো হয়। পতেঙ্গা প্রান্তে দেখা যায়, টানেলের প্রবেশমুখের ডান পাশে উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামফলক প্রস্তুত। নিরাপত্তার জন্য টানেলের চারপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
টানেল পাড়ি দিতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট সময় লাগবে। সময়ের হিসাবে তা ‘অল্প’ হলেও এর জন্য নানা ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে টানেল বাস্তবায়নকারী সেতু কর্তৃপক্ষের।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসিএল)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন।
দুই দফা ব্যয় সংশোধন করে এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলের ভেতরে থাকা দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার করে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা গতকাল দুপুরে সব প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন। জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, এই টানেল চট্টগ্রাম নগরের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা বদলে দেবে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হওয়ার পর টানেলের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে।
১০০ বছর লাইফটাইমে এই টানেল তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পাঁচ বছর মেইনটেন্যান্স ও অপারেশন করবে চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি। উদ্বোধনের পরদিন সকাল থেকে টানেল জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে আপাতত তিন চাকার যান ও মোটরসাইকেল চলবে না। কেউ হাঁটাহাঁটিও করতে পারবেন না টানেলে।
এই টানেল পাড়ি দিতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট সময় লাগবে। সময়ের হিসাবে তা ‘অল্প’ হলেও এর জন্য নানা ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে টানেল বাস্তবায়নকারী সেতু কর্তৃপক্ষের। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়িগুলো গোলচত্বর দিয়ে প্রবেশ করে প্রথমেই চলে যাবে বাঁ পাশে। সেখানে রয়েছে স্ক্যানার। স্ক্যানিং শেষে গাড়িগুলো চলে আসবে ওজন স্কেল এলাকায়। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করে তারপর সোজা মূল টানেলে ঢুকে যাবে এসব গাড়ি।
তবে কার, মাইক্রোবাস, বাসসহ এ ধরনের পরিবহনের জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। স্ক্যানারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউভিএসএস (আন্ডারভেহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম)।
প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে যাতে আলো নিয়ে চালক ও যাত্রীদের কোনো ধরনের অস্বস্তি না হয়, সেভাবে আলোকায়ন করা হয়েছে। টানেলের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের বোর্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফায়ার প্রুফ (অগ্নিপ্রতিরোধক বোর্ড) বোর্ডও। টানেলের মধ্যে বায়ুপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর রয়েছে জেট ফ্যান।
আবার টানেলের ভেতরে কোনো কারণে দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে যাত্রী ও চালকদের তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সেখানে। টানেলের দুটি সুড়ঙ্গ বা টিউবের কোনোটিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্য সুড়ঙ্গে নিয়ে আসা হবে। এ জন্য দুই সুড়ঙ্গের মধ্যে যাতায়াতের জন্য রয়েছে তিনটি ক্রস প্যাসেজ বা সংযোগ পথ। টানেলে জরুরিভাবে বের হয়ে আসার নির্দেশনামূলক সাইন পোস্ট রয়েছে কিছু দূর পরপর।
টানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা নদীর তলদেশ থেকে ৩১ মিটা। অর্থাৎ প্রায় ৯ তলা ভবনের সমান উচ্চতা। আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে টোল প্লাজা। সেখানে যাতে গাড়ির জট না হয়, সে জন্য অন্তত ২০টি টোল বক্স রয়েছে। টানেলের টোল প্লাজা পার হয়ে সংযোগ সড়ক দিয়ে গাড়ি চলে যাবে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী (পিএবি) সড়কের চাতরী এলাকায়।
টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশিদ চৌধুরী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ১০০ বছর লাইফটাইমে এই টানেল তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পাঁচ বছর মেইনটেন্যান্স ও অপারেশন করবে চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি। উদ্বোধনের পরদিন সকাল থেকে টানেল জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে আপাতত তিন চাকার যান ও মোটরসাইকেল চলবে না। কেউ হাঁটাহাঁটিও করতে পারবেন না টানেলে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh